প্রাকৃতিক শালবনে ঘেরা কুমিল্লার রাজেশপুর ইকোপার্ক। পার্কে ঢুকতেই চোখে পড়বে শাল আর জারুলের বাগান। শোনা যাবে পাখির কিচির মিচির শব্দ। নির্জনতার খোঁজে এবং সবুজের মাঝে প্রাণ ভরে নি:শ্বাস নিতে দর্শনার্থীরা এখানে এক সময় ভিড় জমাতেন। কিন্তু নিরাপত্তার অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যা ও পানি সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত পার্কটিতে এখন দর্শনার্থী কমে গেছে। এজন্য কেউ আর পার্কটি লিজ নিতে চায় না। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যথাযথ উদ্যোগ নিলে পার্কটি তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।
কুমিল্লা নগরীর ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত রাজেশপুর ইকোপার্ক। ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার লালবাগ থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কে স্থাপন করা বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মডেল, স্লিপার, দোলনা, বসার জন্য হেলানো চেয়ার ভাঙা। দীর্ঘদিন পার্কের ভেতরে পিকনিক স্পটগুলোতে পানির ব্যবস্থা নেই। সীমানা প্রাচীর না থাকায় দর্শনার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় পার্কের গেটের অনেক দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয় জগপুর গ্রামের বাসিন্দা সোলায়মান ও পলাশ চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে জানান, পার্কের ভেতরের স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে গেছে। সীমানা প্রাচীর নেই। নিরাপত্তা সংকটের কারণে এখানে মানুষ আসতে চায় না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলে পার্কটিতে দর্শনার্থী বাড়বে।
পার্কের গেটে দোকান রয়েছে এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে আহসান উল্লাহ নামে এক দোকানদার বলেন, ‘এখানে আগে অনেকগুলো দোকান ছিলো। দর্শনার্থী কমে যাওয়ায় ব্যবসা কমে গেছে। কয়েকটি দোকান বন্ধ, অন্যগুলোও বন্ধের পথে। এ এলাকার এমপি পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি দৃষ্টি দিলে পার্কটির উন্নয়ন হতো এবং ব্যবসায়ীদেরও উপকার হতো।’
৫৮৭.৮৯ একর ভূমির পার্কটি শাল গাছের বন হলেও এখানে উডলট বাগান, কৃষি বন বাগান, বেত বাগান, তেলসুর. গর্জন, কাজু বাদাম, লোহা কাঠ, শোভা বর্ধনকারী গাছ, বাঁশ ঝাড়, কদম, জারুলের বাগান রয়েছে। রাজেশপুর ইকোপার্কের উত্তর ও পূর্বে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত রাজেশপুরের এ বনাঞ্চলের গহীন অরণ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।
পার্কটির অবকাঠামোগত উন্নয় না হওয়ায় কেউ আর এখন লিজ নিতে চায় না। প্রথম দিকে চার লাখ টাকা বছরে লিজ হলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানান রাজেশপুর ইকো পার্কের ঠিকাদার এম এ আউাল। তিনি বলেন, ‘এক বছরে দুই লাখ টাকায় লিজ নিয়েছেন। খরচ মিলিয়ে তা চার লাখে দাঁড়াবে। টিকিট বিক্রি করে এ টাকা উঠাতেও কষ্ট হবে।’
আওয়াল বলেন, ‘সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও নিরাপত্তা জোরদার করা হলে দর্শক সমাগম বাড়বে। একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে দর্শনার্থীরা আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ আরো কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলে ইকোপার্ক বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। সীমানা প্রাচীর এবং নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আগামী বছর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সংস্কার কাজ, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও পানির ব্যবস্থা করা হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১২ সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেডএ)