logo ১৯ এপ্রিল ২০২৫
‘গরুর কোনো কিছুই ফেলনা নয়’
মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৫:২৮:৫৭
image



গৃহপালিত পশু গরু হাল চাষে আর ঘানি টানার কাজে পটু। কৃষিকাজে জৈব সার হিসেবে এর গোবর বহুল ব্যবহৃত। খড়ি হিসেবেও গোবর কাজে লাগানো হয় অনেক কাল ধরেই।






মরণের পরেও মানুষকে সেবা দিয়ে যায় গরু। আমিষের চাহিদা পূরণে মুখ্য একটি ভূমিকা পালন করে থাকে এই গবাদি পশু। পৃথিবীজোড়া চামড়াজাত পণ্যের যোগানে এর চামড়া আছে সামনের সারিতে।






গরুর হাড়, শিং, অণ্ডকোষ, লিঙ্গ, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রথলি, পাকস্থলী ও চর্বি অনেকেই ডাস্টবিনে ফেলে দেন। অথচ এগুলো থেকেই হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা। প্রতিবছর কোরবানি দেওয়া পশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রক্রিয়াজাতের পর বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও কম নয়।






পা থেকে মাথা পর্যন্ত মরা গরুর সবকিছুই কাজে আসে। গরুর হাড় ও সিং দিয়ে তৈরি হয় ওষুদের খোসা। হাড়ের গুঁড়ো সিরামিক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনেও এর ব্যবহার আছে। গরুর লেজ দিয়ে তৈরি হয় ব্রাশ। কান দিয়ে তৈরি হয় সিরিশ কাগজ। কান গলিয়ে গাম বা আঠা তৈরি করা হয়। আবার বোতামশিল্পের কাঁচামাল হচ্ছে গরুর হাড়, শিং ও খুর।






কোরবানির ঈদের পর বাংলাদেশ থেকে গরুর লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ রপ্তানি হয় থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে। তারা ওগুলোর স্যুপ খায়।






রাজধানীসহ সারাদেশের কসাই, পথশিশুসহ কয়েক পেশার মানুষ এগুলো সংগ্রহ করে ভাঙারির দোকানে বা হাড়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এগুলো বেচাবিক্রির আসল সময় এখন। অনেকে এগুলো কুড়িয়ে নিয়ে আড়তে বিক্রি করছেন। এরমধ্যে হাড়ের কেনি তিন টাকা, অণ্ডকোষ ২০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা, পাকস্থলী ১২০ টাকা, শিং ১০০ টাকা, চোয়ালের হাড় তিন টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।






হাজারীবাগের চালচিত্র






দেশের প্রধান চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে আদালতের নির্দেশনায় একে একে সরে যাচ্ছে ট্যানারিগুলো। তাদের নতুন ঠিকানা হচ্ছে সাভারের তেতুলঝরা। তবে হাজারীবাগে এখনো চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে ব্যস্ততা আছে। শুধু চামড়া নয়, গরুকেন্দ্রিক আরও অনেক কর্মকাণ্ড আছে এখানে।






হাজারীবাগের গজমহল রোড ও কালুনগর রোড এলাকায় ৬০ থেকে ৭০টি হাড় কেনার দোকান বা আড়ৎ আছে। তাই এই রাস্তার নামই হয়ে গেছে ‘হাড্ডি পট্টি’। কোরবানি উপলক্ষে এসব হাড়ের আড়তে শিশুসহ নারী-পুরুষরা হাড় বিক্রি করছে। সেখানে ট্রাকে ও পিকআপ ভ্যানে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে হাড়, শিং ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আসতে দেখা গেছে।






এখানকার আইয়ুব ট্যানারির কর্মী মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘গরুর কোনো কিছু ফেলনা নয়। হাড়, হাড়ের গুড়া, সিংয়ের জন্য এই এলাকায় দুইটা কারখানা আছে।’






গরুর মাথা থেকে কান ছাড়িয়ে নিচ্ছিলেন আব্দুল আজিজ নামে এক কর্মী। কান কী কাজে লাগে- জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘কান দিয়ে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। আঠা তৈরিতেও কান ব্যবহৃত হয়। ম্যাচ তৈরি করতেও গরুর কান লাগে।’






কান, সিং, হাড়ের দাম কেমন? এ বিষয়ে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আগে চামড়ার দাম ছিল অনেক বেশি। তখন সিংয়েরও ভাল দাম পাওয়া যেত। এখন কেউ টাকা দিয়ে এসব কিনতে চায় না। আমরা ফেলে দিলে ওরা কুড়িয়ে নিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে। কিন্তু হাড়ের এখনো ভাল দাম পাওয়া যায়।’






(ঢাকাটাইমস/ ১৫ সেপ্টেম্বর/ এমএবি/এমএইচ)