প্রথম আলোচনায় আসেন হাসির নাটক দিয়ে। তবে সময়ের পরিক্রমায় নিজেকে টিভি নাটকের একজন দক্ষ অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। কাজ করেছেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে। আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন মঞ্চনাটকের সঙ্গে। কখনো বাণিজ্যিক ধারা, কখনো বিকল্পধারা, দুই রকমের চলচ্চিত্রেই তাকে মাঝেমধ্যে দেখা যায়। এনটিভির হা-শো উপস্থাপনা করেও সফল তিনি। এরপর আর সাজু খাদেমকে আলাদা করে চেনানোর কিছু থাকে না। তিনি একজন চিত্রশিল্পীও বটে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ।
ভোলার ডায়েরি নাটকের মাধ্যমে আপনি প্রথম আলোচনায় আসেন। এ ধরনের কাজ আর তেমন দেখা যাচ্ছে না কেন?
আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সে ধরনের কাজ হচ্ছে না তা নয়, অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিবর্তন এসেছে। যখন ভোলার ডায়েরি হয়েছে তখন ভোলার ডায়েরি ওয়াজ পারফেক্ট। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ভোলার ডায়েরির মতো ওই ফরম্যাটে যদি এখন ভোলার ডায়েরি নির্মাণ করি তাহলে কেউ দেখবে না। কিন্তু এখন যে নাটকগুলো হচ্ছে; এখন তো হাজার হাজার নাটক হচ্ছে। ভোলার ডায়েরি যখন হয় তখন স্যাটেলাইট চ্যানেল বলতে একমাত্র ইটিভি ছিল। ইটিভি যেদিন এটি টেলিকাস্ট করেছিল সেদিন বাংলাদেশের সব দর্শক দেখেছিল। আমার মনে আছে, ভোলার ডায়েরিতে আমরা মাত্র সতেরোটি পর্ব করেছিলাম। তাতেই এ নাটকটি নিয়ে পুরো বাংলাদেশ বাহবা দিয়েছিল। এটার পেছনে শুধু কোয়ালিটিটা ছেড়ে দিলে হবে না। এটার ক্ষেত্রে আসলে টোটাল পলিসিটাই ছিল ডিফারেন্ট।
এই সময়ে অনেকেই বলেন বিজ্ঞাপনের কারণে নাটক দেখতে পারি না। ওই সময় ভোলার ডায়েরি একদম নিউ ফরম্যাট ছিল। আমার প্রথম কাজ হিসেবে আমার মনে আছে দর্শকরা ভেবেছিল আমি কি আসলেই কথা বলতে পারি! না আমি অন্য কোনো জায়গা থেকে এসেছি। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেছে, আমি সম্ভবত বাংলাদেশি না। তো সেটার অন্য একটা মজা ছিল।
তারপর ঠিক এই ধাঁচের কাজ দর্শকরা দেখেনি, সে সম্পর্কে বলুন।
এরপরও কিন্তু ভোলার ডায়েরির মতো প্রজেক্ট করার ট্রাই করেছি। এটিএন বাংলায় আমি নিজেই করেছিলাম, ওগুলোর আওয়াজ কিন্তু তেমন আসেনি। এক্ষেত্রে বলতে পারি কেউ যদি বলে মনে রাখার মতো নাটক হচ্ছে না, আমি এটা একদম মানি না। আমি বলব এটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মান্না দের একটা ইন্টারভিউ আছে ইউটিউবে পাওয়া যাবে। সেখানে মান্না দেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘মান্না দে আপনি এত চমৎকার গান করেন, এত অসাধারণ অসাধারণ গান রয়েছে, যে গানগুলো এখন আমরা গাচ্ছি। এখনো গানগুলো কিংবদন্তি হয়ে আছে। এখনকার জেনারেশনের গান কেন আমরা মনে রাখি না?’ তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘এটা মিথ্যা বলছেন, আমাদের সময়ও হাজার হাজার গান হয়েছে যে গান মনে রাখিনি। যে গানগুলো সময়টাকে অতিক্রম করতে পেরেছে, যে সুরগুলো আপনাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে সেগুলোই আপনারা মনে রেখেছেন। ফলে এই নয় আমি মান্না দের সময় আর হাজার হাজার শিল্পী ছিল না। হাজার হাজার গান হয়নি।’ তো এখন যেসব নাটক হচ্ছে এখান থেকে কোন কোন নাটক বেঁচে থাকবে তা বিশ বছর পরে টের পাবেন। আপনি তখন বলবেন সিকান্দার বক্স ভালো ছিল, আরমান ভাই ভালো ছিল। এসব কথা পরে বলবেন, এখন বলবেন না। আমরা এখনই ব্যাপারটাকে কোনো মাপকাঠিতে না ফেলে কাজটা করে যাই। বাকিটা সময় বলে দেবে।
সংস্কৃতিজগতে ঢুকলেন কিভাবে? এক্ষেত্রে পারিবারিক আবহ কতটা অনুকূল ছিল?
আমি ছোটবেলা থেকে কালচারাল পরিবেশে বড় হয়েছি। আমার বাবা-মা এবং আমাদের পরিবার খুবই প্রগতিশীল মানুষ। আমার বাবা-মা দুজনেই শিক্ষক ছিলেন। ওনারা পলিটিক্যালি এবং কালচারালি অনেক বেশি ব্রড মাইন্ডের ছিলেন। আমার বাবাই আমাকে চারুকলায় ভর্তি করিয়েছেন। ওই সময়ে কোনো বাবা তার ছেলে ছবি আঁকার ওপর নির্ভর করে বড় হোক- এটা চাইত না। এটা আমার বাবা চেয়েছেন। আমি এমন একটি পরিবারে বড় হয়েছি। তারপর যখন আর একটি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক হলো সেখানেই আমার আর একটা সুখ। কোনো রকমের আমাকে কম্প্রোমাইজ করতে হয়নি। এমন হতে পারত যে, ওনারা একটু অন্য মানসিকতার আমি একটু সেক্রিফাইস করে অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করি। আমার টার্গেটটাই ও রকম ছিল। আমার সঙ্গে মানসিক ডিসটেন্স থাকবে। আমি থিংকিংয়ের কথা বলছি তবে চলাচলের ক্ষেত্রে উভয়ের দিক থেকে ঠিক মনে হবে যা আমি পেয়েছি।
একটা কথা আমি কিন্তু এই পরিবারের যে একটি নাট্যদল আছে এই দলের সঙ্গে স্বইচ্ছায় যাইনি। তারা আমাকে নিয়ে গেলেন। তখন আমার এমন একটা সিদ্ধান্ত ছিল আমি থিয়েটার করব না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার একাডেমিক জায়গাটা একেবারে কনফার্ম করে নিজেকে ওই ক্ষেত্রে কম্পিলিট করে তারপর থিয়েটারে যাব। তারা আমাকে ডেকেছেন, আমি গিয়েছি এবং আমাকে ওখানে কন্টিনিউ করতে হয়েছে। তারপর পারিবারিকভাবে সম্পর্ক হয়েছে। তো ওই থিয়েটার করা ছাড়া আমার চিন্তাচেতনা, আমার লাইফ, আমার পথচলা একেবারেই আমার নিজের স্বকীয়তায়। এখানে কোনো প্রভাব আসেনি। আমার ভোলার ডায়েরি থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আসতে কারো প্রভাব পড়েনি তবে মানসিক ব্যাকআপ পেয়েছি। বৈষয়িক কোনো ব্যাকআপ আমি নিইনি। ইভেন ওনারা যদি কোনো নাটক বানান সেই নাটকে আমি অভিনয় করব কি করব না, তা নিশ্চিত নয়। আমি আমার পরিবারের কাছ থেকেও সেভাবে নির্ভরশীল হইনি। আমি ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারের পর থেকে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছি।
হা-শো একটি জনপ্রিয় কমেডি শো, এটাতে আপনি দারুণ উপস্থাপনা করছেন। অভিনয় ও উপস্থাপনা, কিভাবে তুলনা করবেন?
আমি আসলে উপস্থাপক নই। আমার জায়গাটা অভিনয়ের। আমাকে ওনারা যখন হা-শোর মতো প্রোগ্রাম করার জন্য বললেন আমি রাজি হইনি। একবার, দুবার এরপর তৃতীয়বার যখন বলেন তখন আমি এটা করতে রাজি হয়েছি। তো আমি আমার অভিনয়ের জায়গা থেকেই ওই কাজটা করেছি। আমাকে উপস্থাপক হতে হলে এভাবে কথা বলতে হবে। না, আমি যেভাবে কথা বলি সেভাবে কথা বলেছি। তবে এটা দর্শক পছন্দ করছে কি না সেটা আপেক্ষিক বিষয়। অনেক দর্শক আছে যে, এটা পছন্দই করে না। আবার অনেক দর্শক আছে তারা এটাকে খুব ভালোভাবে নিচ্ছে। অনেকে বলছে এটা মিরাকেলের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে। আমি বলেছি পৃথিবীর সব কিছুই কনফ্লিক্টেড। আমি ভাত খাই বলে কি আর একটা দেশের মানুষ ভাত খেতে পারবে না? আমি আমারটা খাব সে তার জায়গা থেকে খাবে। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সব জায়গাতেই। এটাই হচ্ছে এই প্রোগ্রামের বড় একটি দিক। এই প্রোগ্রামটা নিয়ে আমাকে প্রচুর প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। তবে দেশের বাইরে এটা দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমি লাস্ট যখন দেশের বাইরে গিয়েছি সেখান থেকে জানতে পেরেছি।
আমি এই প্রোগ্রামটা করার ক্ষেত্রে কখনো স্ক্রিপ্ট ফলো করি না। আমার কোনো স্ক্রিপ্ট থাকে না। আমার হাতে যে কাগজটা থাকে সেখানে শুধু নামগুলোর সিরিয়াল থাকে যে পার্টিসিপেন্স কে কে আছে। আর বাকি আমি যা বলি তা আমার নিজ থেকেই।
হা-শো প্রোগ্রামটি কতটা চ্যালেঞ্জিং? এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে কি?
বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত আমাদের অধিকর্তারা কোনো একটা কাজ হানড্রেড পার্সেন্ট প্রুভ প্রোগ্রাম না হলে করতে চায় না। এই হা-শো প্রোগ্রামের অনেক আগে আমি রসিক রাজ নামে একটি প্রোগ্রাম করেছিলাম। তখন এটাকে নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো এটা কি বাংলাদেশের দর্শকরা নেবে? এমন প্রোগ্রাম কি বাংলাদেশে চলবে? কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশে যখন এ রকম একটি প্রোগ্রাম চালু হলো তখন ওনারা বললেন, না এ রকম একটি প্রোগ্রাম চলতে পারে। এই আইডিয়া কিন্তু অনেক আগের। আমি জানি মানুষের যে বেদনা আছে, মানুষকে যদি আপনি হাসাতে পারেন, যদি কাঁদাতে পারেন, তাহলে মানুষ বিনোদন পাবে। অনেক সিনেমা আছে, যা দেখে মানুষ হল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয় সেটা কি বিনোদন নয়? হাসি, কান্না দুটোই বিনোদন। আমাকে এও প্রশ্ন করা হয়েছিল এই শোতে কান্না কেন? আমি বলেছি এই শো তো এন্টারটেইন করছে। কান্নাও তো এন্টারটেইনমেন্ট।
অভিনয়ে পেশা হিসেবে কতটা নির্ভরতার জায়গা আছে?
আমি তো এটাই পারি। মাঝখানে আমি জব করেছি বাংলাভিশনে। এটা ছিল আমার লস্ট প্রজেক্ট বলতে পারি। বরং অভিনয়টাই আমার সবচেয়ে কমফর্টেবল জায়গা এবং আমি এটা পারি। তো ভবিষ্যতে কি হতে পারে না পারে এই ভেবে সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই। আপনি সময়টাকে ইউজ করে যান। সময় বলে দেবে আপনাকে কোনদিকে টার্ন নিতে হবে। তবে কে কখন সফল হয় কেউ জানে না। সফলতা কিন্তু কখনো ব্যর্থতার দিকেও চলে যায়। আপাতত মনে হতে পারে আমি সফল, ওই লোকটি ব্যর্থ। কিছুদিন পর দেখবেন ওই লোকটি সফল, আমি ব্যর্থ। আপনি দেখেন মোশারফ করিম বাংলাদেশে যখন অভিনয় করতে করতে সে টায়ার্ড হয়ে যাচ্ছিল, একটা সময় সে অভিনয় ছেড়ে চলেই যেতে চেয়েছিল, ঠিক তখনই সে সফল হলো। কিছু করার নেই ব্যর্থতা-সফলতা একটা প্রক্রিয়া। যে মানুষ সফল হচ্ছে না কোনো কারণে হয়ত সে ভুল জায়গায় রয়ে গেছে।
অতি বিজ্ঞাপনের জন্য দর্শক একটু বিরক্ত, এই কারণে অনেকে দেশি চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে কী বলবেন?
বিজ্ঞাপনের জন্য আমি নিজেও বিরক্ত। সেদিন আমি একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলাম বিজ্ঞাপনের একটা নীতিমালা হওয়া উচিত। এটা আবার এককভাবে সম্ভব নয়। এটা সমষ্টিগতভাবে করতে হবে। এটা আবার মাইকিং করে কাউকে বোঝানো যাবে না। এটা প্রয়োজনে আসবে। এখন কিন্তু অনেক চ্যানেল একটা সিস্টেমে আসছে। প্রয়োজনে পরিবর্তন আসবে। সাপ তার প্রয়োজনে খোলস পাল্টায়। এটা আর একজনকে খুলে দিতে হয় না। আপনি দেখেন ফুলটা ছিঁড়তে যেন না পারে তার জন্য কাঁটা আছে। প্রকৃতি নিজেই সব কিছু ক্রিয়েট করে দেয়।
গত কয়েক বছরে ঈদের নাটকে একঘেয়েমি চলে আসছে কি না, বিশেষ কোনো নাটক নিয়ে আলোচনা নেই। এটাকে কিভাবে দেখছেন।
মানুষ এখন ডিসিশনে আসতে পারছে না কিভাবে খাওয়ালে মানুষ খাবে বা আনন্দ পাবে। এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে কাজগুলো হচ্ছে। এখন একঘেয়েমির ব্যাপারটা আসছে। এটাই একদিন পরিবর্তন আনবে। আপনি দেখেন, যখন কলকাতায় তাপস পাল, ভিক্টর ব্যানার্জিদের একঘেয়েমি ছবি ছিল ‘দাদা কেমন আছেন?’ মানুষ বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কলকাতার এখনকার ছবিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন যে আবার এক ধরনের স্টাইল, ‘তুই যদি আমায় বলতি’ এটাও এখন বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই যে একই স্টাইল ‘তোকে ছাড়া বাঁচব না যে’ ‘তোকে ছাড়া বাঁচব না যে’। সব একই রকম, একই গান, একই ছবি। তো এভাবেই পরিবর্তন হবে।
যদি প্রশ্ন করি সর্বশেষ কোন নাটকে কাজ করে আপনি তৃপ্ত হয়েছেন?
আসলে এটি এভাবে বলা যায় না। তবে এই ঈদের ‘মেহমান’ নামের একটি ঈদের নাটকের কাজের নাম বলতে পারি। নাটকটি প্রচারের পর অনেক লোক আমাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। এই নাটকটি ভীষণ টাচি একটি নাটক। নাটকে একটা ছেলে মেহমান হয়ে প্রতিদিন একটি বাসায় খেতে আসে। তো তার প্রতিদিনের এই আসাতে বিরক্ত হতে হতে একদিন তারা বলতে বাধ্য হলো তুই আর এই বাসায় আসবি না। কিন্তু দৃশ্যটি এমন, ছেলেটি খুব আবেগি হয়ে সাধারণ মনে চলে আসত। কারণ ওই বাসার ভাবির সঙ্গে তার মায়ের হাতের রান্নার মিল ছিল। কিন্তু সে কোনোদিন প্রকাশ করেনি। সে বাজার করেও নিয়ে আসত। তার এই প্রতিদিনের আসা বন্ধ করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা হয়। শেষে তাকে বিয়ে করানোর চেষ্টা করা হয়। তারপরও সেখানে সে খায়। যখন বন্ধুটি অপমান করে বের করে দেয় তখন দর্শকদের চোখে পানি চলে এসেছে। পরে ওই বন্ধুটি একটা চিঠি দিয়ে যায় যে, সে একটা ফুড ভিলেজ দিয়েছিল যার নাম ‘মেহমান’। সে ভাবিকে ওটা দিয়ে কানাডা চলে যায়। এটা এখন মনে পড়ল তাই বলে ফেললাম। এ রকম আরো অনেক আছে।
চারুকলায় পড়েছেন, এখন পুরোদস্তুর অভিনয় করছেন। আঁকাআঁকির চর্চাটা কি অব্যাহত আছে?
হ্যাঁ, আমি রেগুলার আঁকাআঁকি করে যাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি আর্ট এরিনা থেকে বের হইনি। আমি এই অর্থে বলছি নাটকও তো একটা আর্ট। এটা হচ্ছে ভিজ্যুয়াল আর্ট। এই ভিজ্যুয়ালে আপনি কিভাবে পেইন্টিং করছেন। প্রতিটি কাজে পেইন্টিং আছে। সো আমি খুব লাকি আমাকে কোনো কিছু ছেড়ে কোনো কাজ করতে হয়নি। আমি একটা ট্র্যাকেই আছি এটা আমাকে অনেক হেল্প করেছে। কালার সেন্স চিনতে সহায়তা করেছে। কম্পোজিশনে সহায়তা করেছে। আমি যেহেতু সিনিয়র হয়ে গিয়েছি। আমি থিয়েটারে ক্লাস নিই। ইমপ্রোভাইজেশন অব আর্ট। সেখানে সব সময় বলি কম্পোজিশন যে মানুষটি বুঝতে পারে তখন সে একজন বাস্তবে শিল্পী হতে চলেছে। সো এটা আমাকে হেল্প করেছে।
হাসির নাটকের বাইরে অন্য চরিত্রে আপনাকে তেমন দেখা যায় না, এ সময়ের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা মনে পড়ছে?
হাসির নাটকের বাইরে আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। বদরুল আনাম সৌদের নাটকে আমি একদম ডিফ্রেন্ট ডিফ্রেন্ট ক্যারেক্টার প্লে করেছি। সেটা সুবর্ণা মুস্তাফার হাজব্যান্ড থেকে শুরু করে চিত্রাদির কো-আর্টিস্ট পর্যন্ত। ভয়ংকর দুষ্টু লোক থেকে ভয়ংকর ভালো লোকটা পর্যন্ত অভিনয় করেছি। আসলে আমাদের দেশের মানুষ আনন্দ পেতে বেশি পছন্দ করে। আর সবাই জানে যে, আমার কমেডি সেন্সটা ভালো, সো এটা ব্যবহার করতে চায়। আমি নিজেও লক্ষ করি আমার সিনিয়র কাজগুলোর থেকে এ কাজগুলোর আওয়াজ বেশ ভালো। সিনিয়র কাজগুলো আমার ক্যারিয়ারের জন্য জরুরি কিছু ছিল না।
আপনি নাটকের পাশাপাশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন, সে সম্পর্কে জানতে চাই।
আমার উল্লেখযোগ্য সিনেমা হচ্ছে ‘কমনজেন্ডার’। এর বাইরে আমার কোনো সিনেমার নাম আমি উল্লেখ করতে চাই না। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই অনুরোধের ঢেঁকি গিলতে হয়েছে। আমি সিনেমা বলতে ‘কমনজেন্ডার’ বুঝি। আমার মনে হয় ‘কমনজেন্ডার’ দেখে তাদের মধ্যে কাঁদেনি এমন দর্শক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে আমি সিনেমার ব্যাপারে একদম ফেইক। বাংলা সিনেমা ডেভেলপ করুক সে জন্য আমি পাগল হয়ে আছি। তবে অবশ্য মেইন স্ট্রিমের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আসতে হবে। আমরা যে স্টাইলের মাধ্যমে সিনেমার পরিবর্তন চাচ্ছি তা জীবনেও হবে না। মেইন স্ট্রিমের ছবি যদি পরিবর্তন হয় তবে অটোমেটিক্যালি পরিবর্তন হবে। প্রথমে আপনি দর্শকদের জন্য সিনেমা বানান, তারপর আপনি অন্ধকারের সিনেমা বানান। আমি নোংরামি করেও তো দর্শক আনতে পারি, সেটারও দরকার নেই। আপনি যদি চেন্নাই এক্সপ্রেস দেখেন, এটা কি মেইন স্ট্রিমের অভিনয়? কি এন্টারটেইনমেন্ট। আমরা এন্টারটেইন বলতে গেলেই ভাবি এটা ফালতু সিনেমা। আমাদের মুরব্বিরা, আমাদের অধিকর্তারা এটাকে পাত্তা দেন না। একটা চেন্নাই এক্সপ্রেস বানান! একটা পিকে বানান! একটা থ্রি ইডিয়ট বানান! থ্রি ইডিয়টস কোন মানের সিনেমা বলবেন? কোন সিনেমার থেকে খারাপ সিনেমা? ফিলোসফি তো বলেন, যে কোনো জায়গা থেকে এটি ওপরে। সো বাংলা সিনেমা ডেভলপ করতে হলে মেইন স্ট্রিমের সিনেমা বানাতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এজেড)