ঢাকা: বাবার ইচ্ছে ছিলো তিন মেয়েকে একসঙ্গে পর্দায় দেখার। বাবার মৃত্যুর পর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ‘তিন কন্যা’ছবিটিতে। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। ছবিতে তাঁরা ছিলেন চম্পা, চন্দা আর ববি নামে।
অভিনয় জগতে তিন যুগে তাঁরা তিন জনই সফলমুখ। এক সময় বড় পর্দার সুপার হেরোইন হিসেবে বেশ খ্যাতি ছিল তাদের। নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় অভিষেক হয়েছিল সুচন্দা, ববিতা ও চম্পার। যে যার অবস্থান থেকে ভাল করেছেন। অভিনয় দিয়ে হৃদয় জয় করেছেন হাজারো দর্শকের। যে দর্শক আজও মনে রেখেছে তাঁদের। কিন্তু দীর্ঘদিন পর্দায় দেখা নেই তিন বোনের। কী করছেন তারা? অভিনয়কে কী পুরোপুরি গুডবাই বলেছেন? কতশত প্রশ্ন সবার মনে।
অভিনয় ছেড়েছেন অনেক দিন হল। এখন ‘সুচন্দা চলচ্চিত্র’নামে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কোহিনূর আক্তার সুচন্দার। নির্মাণ নিয়ে আছেন। সংসারে সময় দিচ্ছেন। তবে আগের মতো চলাফেরায় মন নেই তাঁর। সময় পেলে ধর্মকর্ম পালন করেন। তাছাড়া দুই বোন ববিতা, চম্পাকে নিয়েও সময় কাটে সুচন্দার।
স্বামী জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার পর দ্বিতীয় বার ঘর বাঁধেননি সুচন্দা। স্বামীর স্মৃতিকে আঁকড়ে বেঁচে আছেন। জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ অবলম্বনে ছবি নির্মাণ করে পরিচালক হিসেবে ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
সুচন্দা ১৯৫২ সালে সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের বিজয়নগরে। ষাটের দশকে কাজী খালেক পরিচালিত একটি প্রামাণ্য চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত কাগজের নৌকায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন সুচন্দা। সুচন্দা প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেহুলা, চাওয়া পাওয়া, কুচবরণ কন্যা, আয়না ও অবশিষ্ট, আনোয়ারা, নয়ন তারা ইত্যাদি। অভিনয়ের পাশাপাশি আশির দশকে সুচন্দা প্রযোজনা করেন 'তিনকন্যা'সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র।
ফরিদা আক্তার ববিতা। এখন বড়-ছোট কোনো পর্দাতেই উপস্থিতি নেই তাঁর। নিজেকে অভিনয় থেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়েছেন ববিতা। ছেলেকে সময় দিচ্ছেন। ছেলে কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটে কানাডায়। অভিনয় করে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন বোধ হয়। তাই মধ্যজীবনে নিজেকে একটু সময় দিচ্ছেন ববিতা।
অভিনেত্রী ববিতার জন্ম ১৯৫৬ সালের ৩০ জুলাই যশোরে। ষাটের দশকে সুবর্ণা নামে 'সংসার' চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ববিতা নামে জহির রায়হানের জ্বলতে সুরুজ কী নীচ, এহতেশামের পীচঢালা পথ ও শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে শেষ পর্যন্ত। ১৯৭৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের 'অশনি সংকেত' চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও খ্যাতি লাভ করেন। ববিতা সাতটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন ও সাতবার জাতীয় পুরস্কার, অসংখ্যবার বাচসাসসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন ডিসিআইআই তাকে এদেশের শুভেচ্ছাদূত নিয়োগ করে।
সবার ছোট চম্পা। বড় দুই বোন অভিনয় থেকে নিজেদের একটু দূরে রাখলেও চম্পা এখনও আছেন। বড় পর্দার পাশাপাশি ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করেছেন অনেকদিন হল। কাজের অনুকূল পরিবেশ না পাওয়ায় চলচ্চিত্র জগতকে এরকম বিদায়ই জানিয়েছেন তিনি। তবে এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা কুঁড়িয়েছেন ছোট পর্দায়। নতুনদের স্রোতে নিজেকে ঝরে পড়তে দেননি চম্পা। বয়সের তারুণ্য হারালেও মনের তারুণ্য দিয়ে তরুণদের ভিড়ে তিনিও আছেন মাথা উচু করে। নাটক, টেলিফিল্মে অনেকটা নিয়মিতিই তিনি। চম্পার মেয়ে থাকেন কানাডায়। যাকে সময় দেয়ার জন্য তিনি প্রায়ই দেশের বাইরে থাকেন।
শিবলী সাদিক পরিচালিত ‘তিনকন্যা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চম্পা চলচ্চিত্রের জগতে আগমন করেন। চম্পার অভিনয় দক্ষতা ও ছবির ব্যবসায়িক সাফল্য তাঁকে চলচ্চিত্রে সাফল্য এনে দেয়।সামাজিক ও অ্যাকশন উভয় প্রকার সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন।কোন নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি।তিনি সত্যজিত রায়ের ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের ‘টার্গেট’ সিনেমাতে এবং বুদ্ধদেব দাশ গুপ্তের ‘লালদরজা’ সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ পান।এভাবে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। চম্পার মূল বৈশিষ্ট্য গ্ল্যামার, ফ্যাশন সচেতনতা এবং পোশাকে বৈচিত্র্য।গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্র ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় মাপের কাজ। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় ১০০-এর বেশি সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন।