ডেনিমের বাজারে বাংলাদেশের উত্থান সত্যি দেখার মত। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ডেনিম উৎপাদন এবং রপ্তানি দুই দিকেই বেড়েছে সক্ষমতা। এমনকি বিশ্বের সর্বোচ্চ ডেনিম উৎপাদনকারী দেশ চীনকে ছাড়িয়ে যাবে শিগগির। অন্তত এমনটাই দাবি করছে বিজিএমইএ। আর সে দাবির ভিত্তি দেশে ক্রমশ বেড়ে চলা ডেনিম শীল্পের গতি দেখেই।
গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ ১৮ কোটি পিস ডেনিম জিন্স রপ্তানি করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্রেতা হল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ। যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়তে হলেও ইউরোপিয়া নইউনিয়নে সে অবস্থান ঠিক চীনের পরপরই।
চীন প্রতি বছর গড়ে ৩০ কোটি পিস ডেনিম জিন্স তৈরি এবং রপ্তানি করে। আশার কথা হল বাংলাদেশ ২০১৬ সালের প্রথম সাত মাসেই উৎপাদন করেছে ২০ কোটি পিস ডেনিম পন্য। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর শেষ হয়ে আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশের ডেনিম শিল্পে মোট উৎপাদন চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের ডেনিম খাত থেকে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলার। সেটি আগামী চার বছরে ৭০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে সেই ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রতি বছরই ডেনিম পণ্যের প্রদর্শনী হচ্ছে বাংলাদেশে। আর এসব প্রদর্শনীতে প্রচুর সাড়াও মিলছে ক্রেতা এবং রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে।
দেশে বর্তমানে ডেনিম কাপড় তৈরির কারখানা চালু আছে ২৮ টি। চাহিদা অনেক বেশি বলে আরো অনেকেই বিনিয়োগ করেছেন ডেনিম কারখানার পেছনে। তবে তাদের বেশিরভাগই গ্যাস সংযোগ পাননি বলে সহসা উৎপাদনে যেতে পারছেন না। তাই ডেনিমের কাপড় এখনো আমদানি করতে হয় ভারত, পাকিস্তান এবং চীন থেকে। কারখানাগুলোতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হলে খুব দ্রুতই এ ঘাটতি পূরণ করা যাবে এবং কাপড় আমদানি না করে দেশেই উৎপাদন করা যাবে। আর সেটি হলে বিশ্বের একনম্বর ডেনিম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে তালিকায় নাম চলে আসবে বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ এখন অনেকটাই এগিয়ে।
দেশের প্রথম সারির ডেনিম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে এনভয় টেক্সটাইল, হা-মীম ডেনিম, প্যাসিফিক ডেনিম লিমিটেড, মাহমুদ ডেনিমস লিমিটেড ইত্যাদি।
এর মধ্যে এনভয় টেক্সটাইল প্লাটিনাম লিড সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী একটি ডেনিম প্রস্তুতকারী কারখানার যেসব পরিবেশগত নিরাপত্তা ও পুন:ব্যাবহারবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা থাকতে হয় তার সবটাই এ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলের কর্ণধার আব্দুস সালাম মুর্শেদী ডেনিম শিল্প নিয়ে খুবই আশাবাদী। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর এই সাবেক সভাপতি ঢাকাটাইমসকে বলেন- ‘বাংলাদেশের ডেনিম শিল্প যে লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে সেটা নি:সন্দেহে ভালো। ডেনিম রপ্তানিতে আমরা চীনকে ছাড়িয়ে যাবো। তবে এর জন্য সরকার এবং বেসরকারি খাতকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কেন না যারা আমাদের দেখাদেখি ডেনিম কারখানা তৈরি করেছেন তাদের অনেকেই এখনো গ্যাস সংযোগ পাননি। গ্যাস না পেলে তারা কাপড় উৎপাদন করতে পারবে না। আর আমদানি করা কাপড় দিয়ে চাইলেও এতো বড় লক্ষ্য পূরণ করা সহজ হবে না। আমাদের দরকার আরো নতুন নতুন মেশিন। নতুন নতুন প্রযুক্তি। কেন না ডেনিম এমন একটা ফ্যাশন যেটা বারাক ওবামাও পড়ে আবার ইউরোপের একজন মজুরও পড়েন। অর্থাৎ ডেনিমের চাহিদা সারা দুনিয়া জুড়ে আছে। আর এমন একটা পণ্যকে যদি আমরা আমাদের বিশেষত্ব হিসেবে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে চাই তাহলে সেটার জন্য সরকারের সহযোগিতা একান্তভাবে দরকার। বিশেষ করে কারখানার জ্বালানির ক্ষেত্রে এর কোন বিকল্প নেই।’