• 
• 
• 

১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কাঞ্চনমালা’, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’ ব্যবসা সফল হয়। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পটি একটি সুপরিচিত রূপকথা। সাত ভাইয়ের এক বোন পারুলের ভূমিকায় কবরী ছিলেন অনবদ্য। বস্তুত পুরো সিনেমা ছিল রাজকন্যা পারুল ও তার প্রেমিক রাজপুত্র কেন্দ্রিক। নায়ক রাজপুত্রের ভূমিকায় ছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় নায়ক আজিম।

সাতভাই চম্পা’র দারুণ জনপ্রিয়তা আবারও লোককাহিনিভিত্তিক সিনেমা তৈরিতে জোয়ার নিয়ে আসে। ১৯৬৯ সাল থেকে স্বাধীনতার আগপর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত লোককাহিনিভিত্তিক সিনেমাগুলো হল ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘অরুণ বরুণ কিরণ মালা’, ‘রূপবানের রূপকথা’, ‘পারুলের সংসার’, ‘গাজী কালু চম্পাবতী’, ‘পাতালপুরীর রাজকন্যা’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘মলুয়া’, ‘আমির সওদাগর ও ‘ভেলুয়া সুন্দরী’ ইত্যাদি।

স্বাধীনতার পর লোককাহিনিভিত্তিক সিনেমা নির্মাণের ধারা অব্যাহত থাকে এবং সিনেমাগুলোর অধিকাংশই ব্যবসাসফল হয়। এসব সিনেমার মধ্যে ‘কমল রানীর দীঘি’, ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘লালন ফকির’, ‘গোপালভাঁড়’, ‘মালকাবানু’, ‘কাজল রেখা’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব সিনেমার অধিকাংশই ছিল ব্যবসাসফল।

এই ধরণের সিনেমার সফল নায়ক-নায়িকা ছিলেন আজিম, সুজাতা, কবরী, আনোয়ার হোসেন, শাবানা, রাজ্জাক, নার্গিস, ফারুক, ববিতা এবং আরও অনেকে।

কিন্তু সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে এবং আশির দশকে হিন্দি সিনেমার আদলে সিনেমা নির্মিত হতে থাকে এবং লোকজ কাহিনিনির্ভর সিনেমা নির্মাণের ধারা কমে আসে। সেসময় ‘ফোক ফ্যান্টাসি’ নাম দিয়ে যে উদ্ভট কিছু সিনেমা নির্মিত হয় তার বেশির ভাগই লোককাহিনি নির্ভর নয়। সেসব ছবিতে বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতির কিছুই প্রতিফলিত হয়নি।

লোককাহিনির অনুকরণ করে উদ্ভট পোশাক, সংলাপ, অশালীন নাচ-গানের এক জগাখিচুড়ি ছিল সেগুলো। অনেকগুলোতে আবার নাগ-নাগিনী ইত্যাদি কাহিনি ব্যবহৃত হয় যা লোককাহিনি নির্ভর নয়।

তবে ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাধাকৃষ্ণ’ এবং ‘রাই বিনোদিনী’ সিনেমা দুটি বৈষ্ণব পদাবলীতে বর্ণিত রাধা-কৃষ্ণের কাহিনিনির্ভর। সিনেমা দুটি ব্যবসা সফলও হয়েছিল। সিনেমার গান হিসেবে রাধারমণের একটি জনপ্রিয় গানকেও ব্যবহার করা হয়েছিল।

১৯৮৫ সালের পর অতীতে মুক্তিপ্রাপ্ত লোককাহিনিভিত্তিক ব্যবসা সফল সিনেমাগুলোর রঙিন রিমেইক মুক্তি পেতে থাকে। ‘রঙ্গীন রূপবান’, ‘রঙিন গুনাইবিবি’ ‘রঙিন বেহুলা লক্ষীন্দর’ ইত্যাদি সিনেমা মুক্তিপায় তখন।

১৯৮৯ সালে নির্মিত হয় ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত এবং অঞ্জুঘোষ, ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত সিনেমাটি বাংলাদেশের ব্যবসাসফল সিনেমার অন্যতম উদাহরণ হয়ে আছে এখনও। এই সিনেমার মূল কাহিনি বহুযুগ থেকেই বাংলায় প্রচলিত ছিল। তবে সিনেমার প্রয়োজনে লোককাহিনিকে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। সিনেমাটির বিপুল জনপ্রিয়তার ফলে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুনর্নির্মিত হয়। বাংলাদেশের সিনেমাটিতে ইলিয়াস কাঞ্চন অঞ্জুঘোষ আর পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় চিরঞ্জীব-অঞ্জুঘোষ অভিনয় করেন।

‘বেদের মেয়ে জোসনা’র সাফল্য দেখে আবার কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হয় যেগুলো মোটেই লোককাহিনি নির্ভর নয়। বরং তার অক্ষম অনুকরণ মাত্র।

এর দীর্ঘকাল পরে নির্মিত লোককাহিনিনির্ভর সিনেমা ‘খায়রুন সুন্দরী’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী ও ফেরদৌস। এ কে সোহেল পরিচালিত সিনেমাটি বাংলার লোকজ জীবনের বিভিন্ন অনুষঙ্গ তুলে ধরে। লোককাহিনি ভিত্তিক সিনেমাগুলো চিরসবুজ। এগুলোতে বাংলার সমৃদ্ধ লোক কাহিনির চিত্রায়ণ এবং বাঙালির প্রাণের স্পন্দনের দেখা মিলে।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এমএটি)