logo ১০ মে ২০২৫
বিরোধীদলীয় নেতা থাকেন না, থাকেন মালি, বাবুর্চি, আয়া
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকা টাইমস
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:৩২:৩৫
image


ঢাকা: ২৯, মিন্টো রোডের লাল দালান। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার সরকারি বাসভবন। কিন্তু গত প্রায় পাঁচবছরে একদিনের জন্যও ওই বাড়িতে যাননি বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে চারদলীয় জোট আমলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাও ওঠেননি সরকারি বাসভবনে। সেনা সমর্থিত সরকার ফখরুদ্দিন সরকারের দুবছরও ফাঁকা ছিল বাড়িটি। সবমিলিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ফাঁকা পড়ে থাকা বাড়িটি রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে এখন অনেকটাই শ্রী হারিয়েছে।





বিরোধীদলীয় নেতা না থাকলেও বাড়িটির ভেতরে কর্মচারীদের কোয়ার্টার খালি নেই। সেখানে থাকছেন বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ গাড়িচালক, বাগানের মালি, বাবুর্চি ও পরিচ্ছনতা কর্মী (আয়া)। তারা সবাই পরিবার নিয়েই দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন।





সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২৯, মিন্টো রোডের বাড়িটির সামনের দিকটার খোলা জায়গায় বেশ কয়েকটি মেহগুনি গাছ আকাশ ছুঁতে চাইছে। ঘাস ও জঞ্জালগুলো বলে দিচ্ছে অনেকদিন কারো হাতের ছোঁয়া পড়েনি তাতে। লাল দালানটির লাল রং ফেকাসে হয়ে গেছে। কার্নিসের কোথাও কোথাও শেওলা জমেছে। দরজা-জানালাতেও ধরেছে জং। ভেতরের অবস্থা দেখা যায়নি বাইরে থেকে তালা লাগানো থাকায়।





অবশ্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে থাকা বিশাল আয়তনের বাড়িটির বর্তমান বাসিন্দাদের একজন গাড়ি চালক আনোয়ারের দাবি, পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়োজিতকর্মী স্বরস্বতী নিয়মিত প্রতিটি ঘরে ঝাড়পোঁছ করেন। কোনো আসবাব না থাকলেও জানালা-দরজার গ্রিল, মেঝেসহ সবকিছুই ধোয়া মোছা করে ঝকঝকে তকতকে করে রেখেছেন। স্বরস্বতীও পরিবার নিয়ে ওই বাড়িতেই কর্মচারীদের কোয়ার্টারে থাকছেন দীর্ঘদিন।





একটু ভেতরে পা বাড়াতেই চোখে পড়ল হরেকরকম গাছগাছালি। যেগুলোর প্রায়ই অযতেœ বেড়ে ওঠা। বৃষ্টি হচ্ছিল ঝিরিঝিরি। গাছের পাতার ফাঁক গলিয়ে দু-একফোঁটা গায়ে পড়ছিল। কিছুটা যেতেই চোখে পড়ল একসারিতে পাঁচ থেকে ছয়টি ঘর। ঘরে সামনে বসে গৃহস্থালির কাজ সাড়ছিলেন দুজন নারী। এরা সেখানকার বাসিন্দা। অথচ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই পরিত্যক্ত প্রায় বাড়িটিতেও মানুষ থাকে।





সেখানে কথা হয় বাগানের মালি লালমিয়ার সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই বাড়িতে আছেন। গাছগাছালিগুলো দেখাশোনা করা, আগাছা পরিষ্কারসহ নানা কাজ করেন তিনি। তবে বর্ষায় মৌসুম হওয়ায় ঘাস ও আগাছাগুলো বেশ বড় হয়ে উঠেছে বলে জানান লাল মিয়া।





এরই মধ্যে আসেন গাড়ি চালক আনোয়ার হোসেন। মূলত বিরোধীদলীয় নেতার গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ তার। বিরোধীদলীয় নেতা নেই। তাই এখন তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরের গাড়ি চালাচ্ছেন। আনোয়ার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর মিন্টোরোডের এই বাড়িতেই আছেন। ছেলে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আর মেয়ে ঢাকা কলেজে অনার্স করছেন। আনোয়ার বলেন, গত প্রায় এগারো বছর ধরে এই বাড়িতে কেউ উঠছেন না। দুবছর আগে যখন বিরোধীদলীয় নেতা সেনানিবাসের মঈনুল রোডের বাড়িটি ছেড়েছিলেন তখন নতুন করে রঙ কাজসহ বিভিন্ন মেরামতের কাজ হয়েছিল বাড়িটির। মনে করা হয়েছিল বেগম জিয়া সরকারি বাসভবনে উঠবেন। কিন্তু তিনি আর সেখানে ওঠেননি। তবে ওই বাড়ি থেকে শেখ হাসিনাকে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে দেখেছেন আনোয়ার।





প্রসঙ্গত, বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ এই বাড়িটি ২০০১ সাল থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত পাঁচটি বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে এ বাড়িটি ব্যবহার করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সেনানিবাসের বাড়িতে বসবাস করলেও ওই পাঁচটি বছরই কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন মিন্টোরোডের আলোচিত এই বাড়িটি। কিন্তু ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধী দলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা বাড়িটি আর ব্যবহার করেননি। তৎকালীন বিরোধী দলের উপনেতা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট বাড়িটি বরাদ্দ চাইলেও তাকে তা দেয়া হয়নি। গত নির্বাচনে পরাজয়ের পর বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াও মিন্টো রোডের এ বিশাল আয়তনের বাড়িটি ব্যবহার করছেন না। ফলে ১১ বছর ধরেই কার্যত অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে এই বাড়িটি।





(ঢাকাটাইমস/ ১২ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ ১২.০৮ঘ.)