ঢাকা: ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে হজ্ব একটি অন্যতম স্তম্ভ। প্রত্যেক সামর্থবান ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা হজ্বের নির্দেশ দিয়েছেন। সক্ষম ব্যক্তি যাদের উপর হজ্ব ফরজ হয়েছে তারা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হজ্ব অস্বীকার করে তাহলে মুসলমান থাকতে পারে না। ঈমান টিকিয়ে রাখতে হলে প্রত্যেক ধনবান মুসলমানকে অবশ্যই হজ্ব করতে হবে। হজ্বের মাধ্যমে নিষ্পাপ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে এবং কবুল হজ্বের সওয়াব কেবলমাত্র আল্লাহর জান্নাত। এত বড় পুরস্কার যে হজ্বের মধ্যে নিহিত, সেই হজ্বের সকল কাজগুলো আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেছেন, “স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল কাবাঘর নির্মাণ শেষ করলেন। তখন তারা পিতা পুত্র উভয়েই আমার কাছে হাত তুললেন এবং বললেন, হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পক্ষ থেকে এই সামান্য খেদমতটুকু কবুল করুন।আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী।”
কাবাঘর নির্মিত হয়েছিল হযরত আদম (আঃ) এর পৃথিবীতে আগমনের সময় ফেরেশতাদের দ্বারা। তার পর হযরত নূহ (আঃ) এর মহা প্লাবনের সময় প্রায় এই ঘরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়েছিল। তখন হযরত নূহ (আঃ) এটা সংস্কার করেছিলেন এর পরও কয়েকবার সংস্কার হয়েছে। তার পর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর জামানা চলে এসেছে। তিনি একটি বড় পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে এই ঘরের দেয়াল গেঁথে ছিলেন। আর ইসমাইল (আঃ) তখন কিশোর। অনেক দূর-দূরান্ত হতে কুড়িয়ে কুড়িয়ে পাথর নিয়ে পিতার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই সময় দীর্ঘ সময় ঐ বড় পাথরটির উপর দাঁড়িয়ে দেয়াল গেঁথেছিলেন বলে ঐ পাথরটিতে ইব্রাহিম (আঃ) এর পায়ের ছাপ পড়ে গিয়েছিল। সেই পাথরটি এখন মাকামে ইব্রাহিমে রাখা আছে। ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক এই ঘর নির্মাণ শেষে আরো কয়েকটি দোয়া পড়েছিলেন। যেমন ইব্রাহিম (আঃ) বললেন, “হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের পিতা, পুত্র উভয়কে আপনি মুসলমান বানান। আমার বংশধরদের কেউও। আসার আমাদেরকে হজ্বের রীতি-নীতি শিক্ষা দিন। নিশ্চয় আপনি তওবা গ্রহণকারী এবং পরম দয়ালু।”
ইব্রাহিম (আঃ) নিজে এবং তাঁর পুত্র ইসমাইলকে মুসলমান হওয়ার জন্য আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করায় আল্লাহ বললেন, “হে ইব্রাহিম আত্মসমর্পন কর! অর্থাৎ মুসলমান হও! ইব্রাহিম (আঃ) বলেছিলেন, “আমি আত্মসমর্পন করলাম অর্থাৎ মুসলমান হয়ে গেলাম। আসমান জমিন সব কিছুর মালিক আল্লাহতায়ালার নিকট। এবার ইব্রাহিম (আঃ) দোয়া করলেন হে আল্লাহ আমার বংশধরদেরকে এই ঘর রক্ষনাবেক্ষন করার যোগ্যতা দান করুন।
আর তাদেরকে ফল-ফলারী দ্বারা রেজেকের ব্যবস্থা করুন। জানি পরবর্তীতে আল্লাহতায়ালা এই কাবাঘরের রক্ষনাবেক্ষন হিসেবে তাঁর সন্তান হযরত ইসমাইল (আঃ) কে আল্লাহতায়ালা কবুল করেছিলেন। ঘটনার প্রেক্ষাপটটি ছিল এমন আল্লা বললেন, হে ইব্রাহিম তোমার স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে মরুভূমিতে রেখে এসো। ইব্রাহিম (আঃ) তাই করলেন। এর পর স্ত্রী হাজেরা শিশু পুত্রকে নিয়ে চিন্তায় পড়লেন। এক টুকরো রুটি ও সামান্য কিছু পানি। এটাতো এক্ষুনি শেষ হয়ে যাবে। চারিদিকে একবার তাকালেন। যতদূর দু’চোখ যায় ধু-ধু মরভূমি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। রুটি পানি শেষ হলো। মা হাজেরা নিকটবর্তী পাহাড়ের দিকে একবার তাকালেন। দেখলেন সাফা পাহাড় দিয়ে ঝর ঝর করে ঝর্নাধারা নামছে, অনেক আশা নিয়ে সাফা পাহাড়ে গেলেন। সেখানে যেয়ে কিছুই পেলেন না। কেবলই মরীচিকা। সেখান থেকেই মারওয়া পাহাড়ের দিকে তাকালেন। দেখলেন যে, মারওয়া পাহাড় দিয়ে ঝর্নাধারা নামছে। মারওয়া পাহাড়ে এক দৌঁড়ে চলে এলেন। সেখানেও কিছুই পেলেন না।
কেবলই মরীচিকা ছাড়া। এভাবে সাতবার সাফা পাহাড়ে ঝর্ণা ভেবে দৌঁড় দিয়ে ছিলেন। সাফা পাহাড় হতে মারওয়া পাহাড়ে ঝর্না ভেবে সাতবার দৌঁড় দিয়েছিলেন। উপর হতে হয়ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দৃশ্য দেখছিলেন এবং শিশু পুত্রকে বাঁচানোর যে অদম্য প্রচেষ্টা এটা আল্লাহতায়লা পছন্দ করে নিয়ে মা হাজেরার এই দৌঁড়ানোকে হজ্বের কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। সাথে সাথে শিশু পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর পায়ের গোড়ালীর আঘাতে সেখানে এমন একটি পানির উৎস সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যা কেয়ামত পর্যন্ত কখনোই শেষ হবার নয়। যার নাম যম্যম্। যম্যম্ শব্দটি হিব্রু ভাষার একটি শব্দ। অর্থ হলো থেমে যাও। মা হাজেরা যখন দেখলেন যে, পানি চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। তখন পাথর দিয়ে বাঁধ দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, যম্যম্-থাম থাম। এই পানি আলস্নাহর একান্ত অনুগ্রহের ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। কেননা এই পানি না হলে মা হাজেরা ও শিশু পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর বেঁচে থাকার কোন উপায় ছিল না। এটাতো কেবল পানি অন্যান্য খাবার তো নেই। যে কারণে আল্লাহতায়ালা এই পানির মধ্যে খাবারের সব উপাদান দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়ার সব পানি খেতে হয় বসে। আর এই পানি খেতে হয় দাঁড়িয়ে। রাসুল (সঃ) এই পানি দাঁড়িয়ে খেতেন আর একটি দোয়া পড়তেন। “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া, অরিযকাও অছিয়া অশিফা আমমিন কুল্লে দাঈন”। অর্থাৎ “হে আল্লাহ। এই পানির মাধ্যমে আপনি আমাকে দান করুন উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিযিক ও সকল বিমারী রোগ হতে আমাকে রক্ষা করুন।” এই পানি পান করার সময় যারা এই দোয়া পাঠ করবে এবং যে নিয়তে পাঠ করবে আল্লাতায়ালা তাঁর সেই নেক ইচ্ছা মঞ্জুর করবেন।
বাস্তবতার আলোকে অনেক হাজী সাহেব দেশ থেকে হজ্ব করতে যাওয়ার সময় ব্যাগ ভর্তি করে ওষুধ নিয়ে যান অসুস্থতার কারণে। কিন্তু যেই না যম্যমের পানি পান করা শুরু করেন সঙ্গে সঙ্গে সব রোগ হতে সুস্থতা লাভ করেন। ওষুধগুলো যেভাবে ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়েছিলেন আবার সেভাবেই ফেরত নিয়ে আসেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আরো দোয়া করেছিলেন। “হে আমাদের প্রভু পরওয়ারদেগার আমার বংশধরদের মধ্যে এমন একজন নবী পাঠান যিনি আপনার আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে শোনাবে। তাদের কে কিতাব ও হিকমাত বা জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেবেন। এবং তাদেরকে পূতঃ পবিত্র করে তুলবেন। আপনি মহা পরাক্রমশালী এবং হেকমত ওয়ালা।
(ঢাকাটাইমস/৬ অক্টোবর/ইসলাম/এজেড/১৩.৩২ঘ.)