logo ০৫ জুলাই ২০২৫
দূরে রাখুন অভিমান
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৭ নভেম্বর, ২০১৩ ১৬:০২:২৯
image

ঢাকা: 'অভিমান' ছবিটার কথা মনে পড়ে? অমিতাভ বচ্চন আর জয়া ভাদুড়ির মিষ্টি প্রেমের গল্প থেকে একেবারে মারমার কাটকাট ব্যাপার গড়িয়েছিল যে ছবির গল্পে। বিষয়টা অবশ্য আর কিছুই না। একই পেশায় থাকা স্বামী-স্ত্রীর একে অপরকে টপকে শীর্ষে ওঠার ইগোর লড়াই। সেই ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে! অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মনে হতেই পারে, এসব লড়াই এখন সেকেলে।


স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাঁধে ল্যাপটপ নিয়ে একই অফিসে কাজ সেরে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছে, সে ছবিও এই শহরে প্রায়ই দেখা যায়। তবু একেবারে সেকেলে বলে উড়িয়ে দেওয়া এই বিতর্কের ঝলক এখনো চোখের সামনে আসতেই পারে।


একই ফার্ম হাউসে কাজ করতে করতেই জমিয়ে প্রেম শুরু করেছিল রেশমি আর দীপ। এ সত্ত্বেও বিয়ের ছয় মাস পর থেকে সেই প্রেমের দফারফা। সেলস এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ শুরু করা রেশমির এক বছরে ডবল প্রমোশন আর অফিসে জনপ্রিয়তা কেমন যেন বদলে দিতে থাকে দীপকে। প্রথম পর্যায়ের খুনসুটি কখন হিংসার থেকে প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছিল কেউ জানে না।


আপাতত মিউচুয়াল সেপারেশনে রয়েছে দুজন। রেশমির দাবি দীপ শুধুই জেলাস। আর দীপের দাবি, বাড়ি আর অফিস সব মিলিয়ে তার প্রাইভেসি শেষ।


আসলে যে কোনও পেশাগত ক্ষেত্রেই আমাদের পরিচিতির পরিধিটা এখন বেশ কমন। তার সঙ্গে পালটেছে সম্পর্কের সংজ্ঞাও। স্বামী এখন স্বামীর চেয়ে বন্ধু অনেক বেশি। তা, বন্ধুই যদি হবে, তবে এই জটিল অভিমানের কারণ কী?


মনোবিদ অনিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'আসলে সময় যেমন পাল্টেছে, তেমনি পাল্টেছে ইমোশনের ডেফিনিশন। সাধারণ প্রফেশনাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ দিয়েও আমি মনে করি স্বামী-স্ত্রী একই অফিসে কাজ করলেই এই প্রাইভেট-পাবলিক দ্বিধার জটিলতা বাড়বে। সব কিছু হাতের মুঠোয় চলে আসায় এমনিতেই জীবন খুব একঘেয়ে। তাই অন্তত অফিসের স্পেসটুকু আলাদা করাই উচিৎ। কাছের মানুষটার কাছে আপনার সব অক্ষমতা একেবারে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার হীনমন্যতা থেকেও অনেক সময় হিংসা জন্ম নেয়। তবু যারা একই অফিসে কাজ করেন তাদের বলব, অফিসে যত পারেন নিজেদের মধ্যে কম কথা বলুন। মনে রাখবেন একে অপরের সঙ্গে স্পেস দেওয়া-নেওয়া যদি একেবারেই শূন্য হয়, তবেই কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে'।


রাজধানীর এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নীলিম বলেন, 'অভিমান বা হিংসা যে কোনও প্রফেশনাল কম্পিটিটরের সঙ্গেই হতে পারে। কিন্তু আমি নিজে একই প্রফেশনে বা অফিসে কাজ করার বিরোধী। কারণ আমার মনে হয় বাড়িতে-অফিসে একই মুখ দেখতে দেখতে একটা বোরডম আসে। অফিসে বসের ঝাড়টাও বউয়ের সামনে খেতে ভাল লাগবে না। পাশাপাশি এই দিন-রাত মুখোমুখি থাকাটাও বেশ ইরিটেটিং। সুতরাং, আমি চাইব, আমার স্ত্রী অন্য প্রফেশনের হোক। দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আড্ডার টপিকও তাতে বাড়বে'।


তবে একই অফিসে কাজ করেও যে পরস্পরকে স্পেস দেওয়া যায়, সেটিও কিন্তু অবাস্তব নয়।কলেজ প্রেম শেষে বিয়ের পরে একই অফিসে ৭ বছর ধরে কর্মরত নীতার মত একটাই- 'আসলে প্রফেশনাল হতে হবে। আমার বেডরুমের মানুষটা আমার পাশের টেবিলের কলিগ মাত্র, এই ভাবনা আনলেই মিটে গেল। আসলে ইজি গোয়িং বলে দাবি করা এই প্রজন্ম খুব সামান্যেই ইজিটাকে টাফ করে ফেলে। বসের ঝাড়টার পর দুজন মিলে একচোট হাসুন, দেখুন সম্পর্ক কেমন বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেয়। আর হ্যাঁ, আমার বরের প্রমোশনে আমি খুশি বেশি হই। আফটার অল আমার সাহচর্যেই ওর উন্নতি হচ্ছে'! সত্যি বলতে কী, পরস্পরকে ভালভাবে বোঝা এবং সম্পর্কের মধ্যে সেই বোঝাপড়া আনাটাই আসল কথা! সেটা ঠিক থাকলেই একই পেশায় একই অফিসে কাজ করে একই সঙ্গে দুজনের হাতে প্রমোশন লেটার আসবে। দেখবেন, তখন কেমন কতটা ভালো লাগে!


(ঢাকাটাইমস/৭নভেম্বর/জেএস)