logo ০৫ জুলাই ২০২৫
পেশার নাম যৌনতা
ঢাকাটাইমস ডেস্ক
০৭ নভেম্বর, ২০১৩ ২১:১৬:৪১
image

ঢাকা: জীবন ধারণের জন্য মানুষ কতো পেশাই বেছে নেয়। পেশার বৈচিত্রতা নিয়ে মাঝে মাঝে আমরা অবাক হই। যৌনতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়ার কথা হয়তো নতুন কিছু না তবে কোনো সমাজ যদি যৌনতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে স্বীকৃতি দেয় তবে চোখ তো কপালে উঠবেই। এমনই এক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে আজ পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবো।


সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়া টুডে’তে এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।


ভারতের রাজস্থান রাজ্যের ভারতপুর জেলার মালাহা গ্রামে এক শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। তারা বাংলার বেদে সম্প্রদায়ের মতো নৌকায় নৌকায় ঘোরে না। সমতলে পথের পাশে বসত গাড়ে। এ সম্প্রদায়ের অধিকাংশই যৌনতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। স্থানীয়ভাবে তাদের বেদিয়া বলে ডাকা হয়।


এই বেদিয়া সম্প্রদায়ের কোনো নারী যদি পথচারীকে ডেকে বলেন, ‘বসবেন নাকি?’, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় ভিন্ন কিছু। আসলে এই বেদিয়া নারীদের একটি বড় অংশ জীবনে যৌনতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।


মালাহা গ্রামের শ খানেকের মতো নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করেন। পেশার অংশ হিসেবে তাদের অদ্ভুত সাজগোজ করতে হয়। মুখে পুরু করে মেকআপ, ঠোঁটে উজ্জ্বল বর্ণের লিপস্টিক ও আঁটোসাঁটো পোশাক পরে ধনী খদ্দেরদের জন্য প্রতিদিন অপেক্ষা করতে হয়।


অনেকেই মনে করেন, বেদিয়াদের জোর করে এ পেশায় ঢোকানো হয়। অথচ এ কথা সত্য নয়। বিজেন্দর (৩৭) নামে এক পুরুষ বেদিয়া এসব অভিযোগের বিরোধিতা করেন। তার ছয় বোন ও দুই খালা যৌন পেশার সঙ্গে জড়িত।


বিজেন্দর বলেন, ‘তারা বিয়ে করবে না যৌনতাকে পেশা হিসেবে নেবে, সে মতামত আগে নেয়া হয়েছে।’


অবশ্য অনেক বেদিয়া নারী কিশোর বয়সে বিয়ে করে গ্রাম ছেড়ে দূরে গিয়ে সংসার সাজান। বেদিয়া নারী রিয়া (৩৫) বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবন আমার মতো হবে না। আমি নিয়মিত ১১ বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাই। আমাকে আমার ব্যবসা করতেই হবে, তবে আমি চাই আমার মেয়ে ভবিষ্যতে নিজে নিজের পেশা বেছে নিক।’


মঞ্জু ঠাকুর নামে এক নারী যৌনকর্মী বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের বাস রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মাঝামাঝি এলাকায়। আমাদের সমাজে যৌনকর্মী হওয়ায় বাধা নেই। কেউ হতে চাইলে সমাজ তাকে বাধা দেয় না। আসলে সমাজ যখন কারো দায় নিতে পারবে না তখন তো তার জীবনযাপনে বাধা দিতে পারে না!’


তিনি বলেন, ‘মাত্র ১০-১২ বছর বয়সে আমার বাবা আমাকে ধলপুরে এক ধনী ব্যবসায়ীর বাড়িতে যৌনকর্মী হিসেবে পাঠান। কুমারীত্ব হারানোর বদলে আমি ১০ হাজার রুপি পাই।’


মঞ্জু বলেন, ‘২০ বছর আগের কথা। সে সময় একটা মেয়ের যা পাওয়া সম্ভব তার সর্বোচ্চটা পেয়েছিলাম। এখনো জয়পুরের ধনী খদ্দেররা (যে পুরুষেরা যৌনকর্মীদের কাছে যান) আমার খোঁজে এখানে আসেন।’


তিনি বলেন, ‘ধান্দা (ব্যবসা) ভালোই চলছে। আমাকে অনেক বড় পরিবার চালানোর দায় বইতে হয়। বোন নিশা (২৫), রেশমা (২৪), খালা চাঁদনি, পাঁচ ভাই ও তাদের স্ত্রী-পুত্রসহ বিরাট এক পরিবার।’


মঞ্জুর পঞ্চাশোর্ধ্ব মা সরোজ বলেন, ‘আমি ওদের বিয়ে দেয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওরা বিয়ে-সংসার করতেই চাইল না।’


মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের পেশায় খুব বেশি দক্ষতার প্রয়োজন নেই। খদ্দেররা এলে পথের পাশে একটা চাদর টানিয়ে আড়াল তৈরি করে ১০ মিনিটের জন্য শুয়ে পড়লেই হলো। যদি খদ্দেররা বেশি অত্যাচার করে তবে চিৎকার করে ডাকলেই কাজ শেষ। পাড়ার পুরুষেরা এসে ওই খদ্দেরকে গণধোলাই দিয়ে দেবে।’


নিশা বলেন, ‘বিয়ে করলে সর্বনাশ। বিয়ে করা মানে গাধি হয়ে যাওয়া। বিয়ের অর্থ হলো পুরুষদের জন্য রান্নাবান্না, কাপড় কাচা, বাসন ধোয়া, বাচ্চা পালা আর স্বামীর বোন-ঝিদের সেবা করা।’


অবশ্য বেদিয়াদের কম অত্যাচারের শিকার হতে হয় না। সরকার ও ক্ষমতাসীনেরা তাদের জমিজমা-সম্পত্তি দখল করে নেয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।


ভারতপুরের জেলা প্রশাসক নিরাজ কুমার পবন (৩৪)বেদিয়াদের কল্যাণে কাজ করছেন। তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন।


নিরাজ কুমার বলেন, ‘১৮ বছরের কম বয়সী নারীরা এ পেশায় যান না। এক সময় মঞ্জু যে বয়সে যে কাজের জন্য ১০ হাজার রুপি পেত এখন সে কাজের জন্য দেড় বা দুই লাখ রুপি দেয়া হয়।’


রবি কুমার (২৯) নামে এক দোকানদার বলেন, ‘উঁচু জাতের লোকেরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্য করে অথচ আমাদের মেয়েদের সঙ্গে শোবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। ওরা এজন্য ঠিকমতো টাকা-পয়সাও দিতে চায় না।’


(ঢাকাটাইমস/৭ নভেম্বর/এজে)