ঢাকা : দীর্ঘ দিন ধরে মুখমণ্ডলের এক পাশে বিশালাকার একটি টিউমার বয়ে বেড়াচ্ছিলেন এক ভারতীয় কৃষক। অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা ভালো হওয়ার পর সে এখন জীবনসঙ্গী খুঁজছে।
ছেলেটির নাম ললিত রাম, সে নিজেও কৃষি কাজ করেন ।মুখের টিউমারের কারণে কোনো মেয়ে তাকে পছন্দ করতো না, সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো। উত্তর ভারতের বিহারের দূরবর্তী অঞ্চলের একটি গ্রামে তার বাস।
মুখে বিশালাকর টিউমার নিয়ে কাজেও তেমন সুবিধা করতে পারতো না সে। অভাব অনটনে ঘুমিয়েও শান্তিও পেতো না ললিত। বাড়িতে মহিষ রাখার ছোট একটি চালার নিচে ঘুমাতে হতো ললিতকে।
অস্ত্রোপচারের আগে ললিত জানায়, যখন ছোট ছিলাম তখন টিউমারটি একেবারেই ছোট ছিল। আমি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিউমারটিও বড় হয়, পরিবারের কেউ আমার দিকে নজর দেয়নি, নজর দেয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি।
আমি যখন কোথাও যেতাম তখন আমাকে দেখে লোকে হাসতো এবং কানাকানি করতো এবং এতে আমার অস্বস্তি লাগতো।
খেতে ও পান করতে কষ্ট হতো। আমি খুব একাকিত্ব বোধ করতাম কারণ কথা বলার মতো কেউ আমার ছিল না। অনেক সময় আমি একাকি কাঁদতাম।
একারণে আমি একটি চালার নিচে মহিষদের সঙ্গে ঘুমাতাম। সবসময় মশায় আমাকে কামড়াতো। চালাটি খুবই গরম ছিল। মধ্য রাতে আমি বাইরে পায়চারি করতাম।
আমি আমার ভাবনাগুলো চেপে রাখতাম। কঠোর পরিশ্রম করে টাকা আয় করে বিয়ে করার অদম্য ইচ্ছা ছিল আমার।
অবশেষে নাটকীয়ভাবে আমার জীবনে পরিবর্তন এনে দিলেন একদল ডাক্তার। তারা আমাকে হেল্প করতে চাইলেন।
একটি নতুন টেলিভিশন মানবিক সিরিজ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে ডাক্তারদের সফলতার কথা তুলে ধরল। এতে আমার টিউমার অপারেশন করার কাহিনীটি তুলে ধরা হল।
ললিত বলছেন, আমি এখন খুবই ভালো অনুভব করছি। অপারেশনটি আমার কাছে ভয়ের ছিল কারণ আমি জানতামনা বাঁচব কি মরব। কিন্তু আমাকে এটা করতেই হবে কারণ আমি টিউমারটি বহন করতে পারছিলাম না। এটা শুধু আমাকে কষ্ট দিত না বরং আশপাশের লোকজনকে এটি কষ্ট দিত।
‘আমি এখন কাজে যেতে পারি এবং অর্থ উপার্জন করতে পারি। এখন সম্ভবত আমি একজন বউ খুঁজে পাব।আমার বউকে অল্প হলেও শিক্ষিত হতে হবে। সে বাড়ির কাজ গোছাতে সমর্থ হবে এবং সুন্দর হওয়া লাগবে।’ যোগ করেন ললিত রাম।
গ্রামবাসীরা ললিত রামের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে দেয়ার পরিকল্পনাও করছে।এটা একটা যুগান্তকারী পরিবর্তনের ঘটনা যা গত মাসেও ললিতের জন্য অকল্পনীয় ছিল। বিশেষ করে ডাক্তাররা ভেবেছিলেন, ললিতের অপারেশনের পর যদি বেশি রক্তক্ষরণ হয় তাহলে সে নাও বাঁচতে পারে।
সার্জনরা বুঝতে পেরেছিলেন- টিউমারটি একটি জেনেটিক ডিসঅরডার ও নিউরোফিব্রোমেটোসিস জাতীয় রোগ। এটার অপারেশন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ডাক্তাররা দেখলেন, অপুষ্টির কারণে ললিতের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম।অপারেশনে ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের ড. বিবেক কুমার বলছেন, আমার ক্যারিয়ারে এত বড় টিউমার আমি দেখিনি। টিউমারটি কপাল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
কানের বড় অংশজুড়ে এটা বিস্তৃত। চোয়াল ও ঘাড়েও বিস্তৃত হয়েছে টিউমারটি।এটি খুবই জটিল ধরণের।ব্যাপারটি আরও ভয়ের ছিল যখন ললিতের দেহ থেকে দেড় লিটার রক্ত পড়ে গেল ।যাক শেষ পর্যন্ত ভালোর ভালোয় সবকিছু শেষ হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/এএসএ/এআর/ ঘ.)