ঢাকা: ঘর আছে, ঘরে চেয়ার ও টেবিল রয়েছে কিন্তু ঘরের মধ্যে প্রবেশ করা এবং চেয়ারে বসার মতো কোনো ব্যক্তি নেই। কথাটা বেমানান শুনালেও বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরেজমিন এমনই চিত্র দেখা গেছে।
ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস গ্রেপ্তারের পর থেকে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিজেদের রক্ষার্থে আত্মগোপনে চলে যান। তবে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আত্মাগোপনকে বিএনপি আন্দোলনের নতুন কৌশল হিসাবে নিয়েছে এবং চেয়ারপার্সনের নির্দেশেই নেতারা আত্মগোপন করেছেন। সময় হলেই তারা প্রকাশ্যে চলে আসবেন। এরপর থেকেই বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গত ৯ নভেম্বর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন রিজভী। ৩০ নভেম্বর ভোররাতে তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কার্যালয়ের দায়িত্ব পান দলের আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি অনেকটা আত্মগোপনে থেকে কিছু সংখ্যক গণমাধ্যমকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করতেন। এখন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রুহুল কবির রিজভী গ্রেপ্তারের পর থেকে শূন্য হয়ে পড়ে আছে দলীয় কার্যালয়। তালা ঝুলছে মূল ফটকে। কার্যালয়ের ভেতরে, অফিসের দরজার তালা ভাঙা, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র এদিক সেদিক পড়ে আছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দুটি কম্পিউটার পড়ে আছে মেঝেতে।
এই কয়েক দিনে কার্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মচারী ছাড়া বিএনপির আর কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা য়ায়নি।
অপরদিকে, বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয় ঘিরে রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সরকার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট রূপ ধারণ করে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে গলা টিপে হত্যা করতে চাইছে। আইনশৃঙ্খলা বহিনীর সদস্যরা বিএনপির কার্যালয় অবরুদ্ধ করেছেন এবং কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে গেলেই নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন আসছেন না এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপাসর্নের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমসকে বলেন, রাজপথে নামলেই সরকারের আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে না থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির নেতারা রাজপথে নামবেন।
তিনি বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিএনপির নেতা-কর্মীরা কার্যালয়মুখী হবেন। কিন্তু এর আগে কার্যালয়মুখী হলে সরকারের আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা অফিসে আসলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কিনাÑ এই প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পল্টন থানার দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে জানান, এ ধরনের কোনো নির্দেশ উপর থেকে দেয়া হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের বিষয়টি পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/ ১৮ ডিসেম্বর/ কেএস/ .ঘ)