ঢাকা: দশম না, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনা করছেন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা। দল দুটির নেতা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র ঢাকাটাইমসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা এরই মধ্যে বিভিন্ন বক্তৃতায় বিষয়টি নিয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছেন, তবে বিএনপি নেতারা এখনও চুপ আছেন।
নির্বাচন কমিশন ২৫ অক্টোবর ঘোষণা করেছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। প্রার্থিতা জমা, মনোনয়নপত্র বাছাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার পর প্রার্থীদের মধ্যে এরই মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রতীক। এখন চলছে আনুষ্ঠানিক প্রচার। তবে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টিতেই প্রার্থীরা জিতেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছে ১২৭টি আসন। ফলে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দল এই তফসিল বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুই দলের আলোচনায় দলের নেতারা দশম সংসদ নির্বাচন মেনে নেয়ার কথাই জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
দুই দলের সূত্র জানিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় এবং কোন ধরনের সরকারের অধীনে তা হবে, তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা।
জাতিসংঘের মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ সফর শেষে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা দুই দফা কথা বলেছেন। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় আইনগতভাবে এই নির্বাচন পেছানোর যে আর সুযোগ নেই, তা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ্যেই বলেছেন। বাস্তবতা মানছেন বিএনপি নেতারাও।
মঙ্গলবার সরকারের সাবেক ও বর্তমান দু’জন মন্ত্রীও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরই ইঙ্গিত দিয়েছেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়াও অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সেহেতু এখন সমঝোতা হলেও বিএনপির দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ‘সুযোগ’ নেই। সমঝোতা যদি হয়, তা হবে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘দশম সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হয়ে গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদের জন্য আলোচনা করতে হবে। যদি মধ্যবর্তী নির্বাচনের যৌক্তিকতা থাকে, তবে আলোচনা করব। সকলে মিলে নতুন বাস্তবতা মেনেই আলোচনায় বসা প্রয়োজন।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকরার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান এবং সমশের মবিন চৌধুরীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
বিএনপির সূত্র জানায়, এসব নিয়ে কথা বলতে নেতাদেরকে নিষেধ করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আর বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য কথা বলে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে, এই বিবেচনায় ভোট এবং এরপর কয়েকদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কৌশলও নিয়েছে বিএনপি।
সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দল যতই আন্দোলন সংগ্রাম করুক না কেন সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছুই করতে চান না সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জামায়াত অধ্যুষিত সাতক্ষীরা, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান শুরু করেছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী। এসব অভিযান সহসাই থামবে না, তাও স্পষ্ট করেছে সরকার। আর সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচনকালীন সরকারের চেয়ে নির্বাচিত সরকার বেশি শক্তিশালী, সে বিবেচনায় ৫ জানুয়ারি ভোট শেষ করে নতুন সরকার দ্রুত দায়িত্ব নেয়ার পক্ষে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত নতুন কোনো সহিংসতা চালানোর পরিকল্পনা করলে শক্ত হাতে তা দমনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি যখন বুঝতে পেরেছে যে নির্বাচনে গেলে মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে ঠিক তখনই জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে দেশের নাশকতা সৃষ্টি করছে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীদের যে কোনো আক্রমণ এখন থেকে শক্ত হাতে দমন করা হবে।
(ঢাকাটাইমস/ ১৭ ডিসেম্বর/ এইচএফ/ ১৫.৩৯ঘ.)