ঢাকা: চলমান সংকট নিরসনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনার কথা দেশের বিশিষ্টজনরা বলে আসছিলেন অনেক আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েও মুখেমুখে সংলাপের কথা বলেছেন বহুবার। কিন্তু কোনো কার্যকর উদ্যোগই চোখে পড়েনি কারো তরফেই। শেষমেশ জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়। একবার নয় দুবার আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবারও তৃতীয় দফা আলোচনায় বসেন দুইজন। আলোচনায় সংকট সমাধানে একপক্ষ অপরপক্ষ বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। বৈঠক শেষে দুই দলের মহাসচিবই বলেছেন, বেশকিছু প্রস্তাব বিনিময় হয়েছে তাদের মধ্যে। এগুলো নিয়ে দলীয় কোরামে আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দফায় দফায় আলোচনা হলেও এখনও সংকট সমাধানের কোনো আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে দুই দলই পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব দিচ্ছে। এসব মেনে সমাধানে পৌঁছা সহজ হবে না। তাছাড়া বিএনপি এখনও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে অটল রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, যা কিছু করার সংবিধানের আলোকেই করতে হবে।
শুক্রবার গুলশানে জাতিসংঘের একটি প্রকল্প কার্যালয়ে দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে আটজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে। এগুলো হল: ঘোষিত তফসিল স্থগিত, আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি, দলীয় কার্যালয় অবমুক্তকরণ ও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। এসব শর্ত মানলে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশনের আংশিক পুনর্গঠন ও প্রশাসন নিরপেক্ষকরণ বিষয়ে আলোচনা করবে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে হরতাল-অবরোধ ও জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করলেই সংলাপের পরিবেশ তৈরি হবে।
বৈঠক শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আমরা এগুলো নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করবো। পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
একই সুরে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা হয়েছে। এসব বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে মধ্যস্থতা করেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী নিল ওয়াকার। এর আগে গুলশানের ওই বাড়িতেই গত বুধবার সর্বশেষ বৈঠক করেন দুই দলের নেতারা। সেদিন তাদের মধ্যস্থায় ছিলেন অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকো। ওইদিনই সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা ছাড়েন তারানকো।
(ঢাকাটাইমস/ ১৪ ডিসম্বের/ কেএস/ এইচএফ/ ১১.০০ঘ.)