ঢাকা: আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আলোচনায় আছেন জোরেসোরেই। বিএনপি নির্বাচনে না আসার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা টিকিয়ে রাখতে জাতীয় পার্টিই ছিল সর্বশেষ ভরসা। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলে কিছুটা বেকায়দায় পরে আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উপায়ে এরশাদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চলছে সরকারের উচ্চমহল থেকে। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগ ঘেষা নেতারাও ভেতরে ভেতরে দলের চেয়ারম্যানকে বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন এরশাদকে আটক করে কিছুটা চাপা সৃষ্টি করার কৌশল বেছে নিয়েছে সরকার। যদি এতেও কাজ না হয় তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের বাইরেও পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে এরশাদকে। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, এরশাদ না গেলেও জাতীয় পার্টির একটি অংশ নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের কাছে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু এরশাদের একগুঁয়েমির মুখে তারা কিছুই করতে পারছেন না। খোদ এরশাদের সহধর্মিণী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদও চাচ্ছেন নির্বাচনে যেতে। তাকে ঘিরে দলের অপর দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও নির্বাচনমুখী আলাদা একটি বলয় সৃষ্টি করেছেন। তাছাড়া এরশাদ নির্বাচনকালীন সরকার থেকে দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার পর এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন রওশন-আনিস-বাবলুরা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকার প্রধানসহ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে এব্যাপারে একাধিকবার আলোচনা করেছেন দলে আওয়ামী ঘেঁষা এই নেতারা। তবে দলের চেয়ারম্যানের তোড়জোরের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। এরপর শুরু হয় নতুন নাটকীয়তা। পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার একাধিকবার দেখা করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রী সময় দেননি তাদের। পরে ডাকযোগে পদত্যাগপত্রগুলো পাঠানো হলেও তা এখনও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেনি বলে নিশ্চিত করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র।
এদিকে পদত্যাগপত্র ডাক যোগে পাঠানোর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রওশন এরশাদ গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। তার পর রাতে দলের মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এবং সালমা ইসলাম গণভবনে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। জাপা নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে আসার কিছুক্ষণ পর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে এরশাদকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে-সিএমএইচ নিয়ে যাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আনার জন্য এরশাদকে বোঝানোর চেষ্টা এখনও চলছে। তিনি কিছুতেই রাজি না হওয়ায় তাকে আটক করে কিছুটা চাপ সৃষ্টি করার কৌশল বেছে নেয়া হয়েছে। তিনি যদি এরপরও রাজি না হন তবে নির্বাচনকালীন সময়ে তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তার অবর্তমানে জাতীয় পার্টির একটি অংশ নির্বাচনে যাবে এমনটাই আভাস পাওয়া গেছে।
এদিকে এরশাদকে আটকের পর র্যাব দাবি করেছে, এরশাদ অসুস্থ বোধ করায় তাকে সিএমএইচ-এ নিয়ে যাওয়া হয়। তবে এরশাদের প্রেসসচিব সুনীল শুভ রায় ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমার কাছে রহস্যবিদ্ধ মনে হচ্ছে। আমি সন্ধ্যায়ও পার্টির চেয়ারম্যানকে ভাল রেখে গেছি। উনি প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করেন। তাছাড়া তিনি অসুস্থ বোধ করলে আমাকে বলতেন।’
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাখা জাতীয় পার্টির জন্য ৬০টি আসন রেখেই দশম সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।
এরশাদ ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কিনা-বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এখনও নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন।’
গত ১১ নভেম্বর এক বক্তৃতায় এরশাদ বলেছিলেন, ‘সব দলের অংশ গ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে গেলে মানুষ থুতু দেবে’। কিন্তু এর সাতদিন পর ১৮ নভেম্বর ভোল পাল্টে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের দরকার হয়, তাই ‘নির্বাচনে না গেলে মানুষ আমাকে থুতু দেবে’। এ বক্তব্যের পর নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভাতে জাতীয় পার্টি থেকে ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন ও উপদেষ্টা করা হয় একজনকে। তাঁর দাবি অনুযায়ী পছন্দের একাধিক মন্ত্রণালয়ও দেয়া হয় জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের। গত ২ ডিসেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র জমা দেন। ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করার জন্য এরশাদ নিজেও মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু এর একদিন পর হঠাৎ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ফের আলোচনায় আসেন এরশাদ। তিনি বলেন, আগে তিনি নির্বাচনে না যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রক্ষা করতেই নির্বাচনে যাবেন না তিনি। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদত্যাগেরও নির্দেশ দেন।
(ঢাকাটাইমস/ ১৩ ডিসেম্বর/ এইচএফ/এআর/ ১২.৪৭ঘ.)