ঢাকা: গত পাঁচ বছরে যেসব সংসদ সদস্য বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তাদের মধ্যে সাংসদ আসলামুল হক আসলাম অন্যতম। দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ করেছেন ঢাকা-১৪ (দারুস সালাম ও মিরপুরের একাংশ) আসনের এই সাংসদ। অথচ সম্পদের অনেক তথ্যই গোপন করেছেন নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায়।
‘আন্ডার মেট্রিক’ আসলামের বিপুল সম্পদ ইস্যুটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দলের মধ্যেও। একাধিক সংসদ সদস্যসহ তার ঘনিষ্ঠ মহলেও এনিয়ে আলোচনা রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, মালয়েশিয়াতে আসলামের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। সেখানে একাধিক বাড়ি, জমি এমনকি দ্বীপেরও মালিক এই আলোচনা খোদ তার নির্বাচনী এলাকাতেই। তাছাড়া দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকাটি তিনি কিনেছেন বলে মিডিয়ার সবাই জানেন। পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে তিনি এর মালিকানা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় এসব তিনি এড়িয়ে গেছেন।
দেশের বাইরে তার সম্পদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আসলামুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দম্ভোক্তি করে বলেন, ‘কোথায় কী আছে, আপনি খুঁজে নেন।’ তবে তিনি এসব সম্পদের কথা অস্বীকার করেননি। আমাদের অর্থনীতি পত্রিকা কিনেছেন, অথচ নির্বাচনী হলফনামায় লেখেননি, কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও কাগজপত্র তৈরি হয়নি। তাই উল্লেখ করিনি।’ কিন্তু মালিক হিসেবে তো আপনার নাম রয়েছে? পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লে সাংসদ আসলাম বলেন, ‘বল্লাম তো ভাই কাগজপত্র তৈরি হয় নাই।’
কথা শেষে ফোনটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার তিনি এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল করেন। তিনি জানতে চান, এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার আগে কখনো দেখা হয়েছে কিনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংসদ আসলামুল হক আসলাম গত পাঁচ বছরই নিজেকে লুটপাটে ব্যস্ত রেখেছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকাতে আসলামের ভূমি দস্যুতা টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো সব ধরনের নির্বাচনী জরিপে এলাকায় তার অবস্থান অত্যন্ত নাজুক বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
আসলাম প্রার্থী হলে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থাকলে জয়লাভ কার্যত অসম্ভব এমন আভাসও একাধিকবার দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী মহলে। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ আসলাম অবৈধ টাকার জোরেই আবারও দলের মনোনয়ন পেলেন কিনা এই কৌতূহল বিভিন্ন মহলে। ‘চতুর’ আসলাম নির্বাচনের মাঠে একক প্রার্থী।
নির্বাচনী হলফনামায় আসলামের সম্পদ:
২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় দেখা গেছে, সাংসদ আসলামের মোট করযোগ্য আয় ছিল দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা।এর মধ্যে কর দেন ১১ হাজার ৮৫০ টাকা। বর্তমানে সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। আয়ের উৎস হিসেবে দেখা গেছে, তিনি বছরে দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেন এবং স্ত্রী আয় করেন দুই লাখ ১৫ হাজার ৭০০ টাকা। তবে স্ত্রীর কোনো পেশার কথা উল্লেখ করেন নি। পাশাপাশি প্রচুর অস্থাবর সম্পদ বানিয়েছেন।
২০০৮ সালে এমপি আসলামের কাছে নগদ টাকা ছিল ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তার কাছে নগদ টাকার পরিমাণ দুই কোটি ১৩ লাখ ১৯ হাজার ০৩৯ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ৫৭ লাখ ৮২ হাজার নয় টাকা। ২০০৮ সালে ব্যাংকে জমা ছিল আট লাখ টাকা। বর্তমানে নিজের নামে ২৪ হাজার ৪৩ টাকা জমা থাকলেও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৬ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখা গেছে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ও তালিকাভূক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার আছে ৮৫ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার। এছাড়া স্ত্রীর নামে ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার আছে। পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ১২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকার। এছাড়া একই খাতে স্ত্রীর নামে আছে ৫৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪২৯ টাকা। পরিবহন ব্যবসায় নিজের নামে ৮৭ লাখ ও স্ত্রীর নামে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ আছে। এছাড়া নিজের ও স্ত্রীর নামে ৮৩ ভরি স্বর্ণ আছে, যার কোনো মূল্য দেওয়া হয়নি।
এছাড়া নিজে অন্যান্য খাতে তিনি সাত লাখ ২৫ হাজার ৮৭৩ টাকা আয় করেন এবং স্ত্রী আয় করেন প্রায় নয় লাখ টাকা। পাঁচ বছরে তিনি কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমির মালিক হয়েছেন। ২০০৮ সালে নিজ নামে সাড়ে তিন বিঘা ও স্ত্রীর নামে আট বিঘা জমি ছিল। বর্তমানে এমপি আসলামুল হকের নামে ১৪ হাজার ১৭৮ শতাংশ জমি আছে এবং স্ত্রীর নামে ৩৯০র শতাংশ জমি আছে।
এছাড়া সাংসদ আসলাম প্রতি বছর বাড়ি ভাড়া বাবদ এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা আয় করেন। ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে গাবতলী ও মিরপুর এলাকায় ৫২ কাঠা সম্পত্তির কথা উল্লেখ করলেও এবার তা লেখেননি তিনি।
(ঢাকাটাইমস/ ২৫ ডিসেম্বর/ এইচএফ/ এআর/ ঘ.)