logo ০৫ মে ২০২৫
অবরোধও ব্যর্থ, তৃণমূলে হতাশা-ক্ষোভ
কামাল শাহরিয়ার, ঢাকাটাইমস
০২ জানুয়ারি, ২০১৪ ১৫:১৯:৫১
image

ঢাকা: আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘প্রতিহত’ করতে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির পর টানা অবরোধ ডেকেও মাঠে নামছে না বিএনপিসহ আঠারো দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। গণতন্ত্র অভিযাত্রার আগে পাঁচ দফায় ডাকা অবরোধেও রাজপথ ছিল নেতাশূন্য। অবরোধ ডেকে নেতা মাঠে না নেমে বাসায় বসে থাকলেও অবরোধ প্রতিহতে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠন। পাশাপাশি রাজধানীতে যান চলাচলও স্বাভাবিক। রাস্তায় যনজটও চোখে পড়ার মতো।


এদিকে একের পর এক কর্মসূচি ডেকে মাঠে না নামায় কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছেন সাধারণ সারির নেতাকর্মীরা। প্রথম দিকে পুলিশের কড়া নজরধারি ও সরকারি দলের সমর্থকদের বাঁধা উপেক্ষা করে মাঠে নামলেও এখন আর আগ্রহ নেই তাদের। অবশ্য তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতারা কর্মসূচি ডাকেন। এরপরই লাপাত্তা হয়ে যান। আর মাঠে থেকে কর্মসূচি সফল করা এই তৃণমূল নেতাকমীদের খোঁজও নেন না কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা। এজন্য তারাও নিজেদেরকে ‘সেইফ’ রাখতে মাঠে নামেন না।


বিশেষ করে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ‘চূড়ান্ত পর্ব’ ঘোষণা করে নভেম্বরের শেষদিকে রাজধানীকে আট ভাগে ভাগ করে আটজন নেতাকে আন্দোলন সমন্বয়ের দায়িত্ব দেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। এই আটজনের মধ্যে দু’জন বর্তমানে আটক আছেন। বাকিদের মধ্যে একমাত্র নজরুল ইসলাম খান দলীয় কার্যালয়ে মাঝে মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করলেও অন্যরা আসছেন না প্রকাশ্যে।


এদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহকে খিলক্ষেত, কাফরুল, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, রামপুরা, বাড্ডা ও গুলশান; মির্জা আব্বাসকে মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, পল্টন ও মুগদা; গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুসসালাম, পল্লবী, মিরপুর এবং শাহআলী; সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাকে শাহবাগ, সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, বংশাল, গেণ্ডারিয়া, ওয়ারী; যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানকে ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট, লালবাগ, নবাবগঞ্জ ও হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর; বরকত উল্লাহ বুলুকে উত্তরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখান, তুরাগ, বিমানবন্দর; মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালামকে শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল; যুগ্ম-আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমেদকে ডেমরা, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী এলাকায় আন্দোলন সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।কিন্তু তাদের মাঠে দেখা যাচ্ছে না এক মুহূর্তের জন্যও।


অন্যদিকে শুধু রাজধানী নয় ঢাকার বাইরেও মাঠে নামছে না নেতাকর্মীরা।অবরোধের সমর্থনে কোথাও তেমন কোনো সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে না। প্রায় সব জেলায় জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক।  যানবাহনও চলেছে যথারীতি। দোকানপাট, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমায় লেনদেন হচ্ছে স্বাভাবিক গতিতে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ কোনো নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি জোটের শরিক দল জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও রাজপথে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।


যদিও রাজধানীতে বিএনপি ও অঙ্গসংঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের দেখা না গেলেও চোখে পড়েছে জামায়াত-শিবিরের বিচ্ছিন্ন তৎপরতা। তবে শুধু মিছিলের মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ তা। কোথাও কোথাও অবশ্য ছিটেফোঁটা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কোনো কোনো জেলায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা রাজপথে নামার চেষ্টা করলেও পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি।


প্রসঙ্গত, গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় মাঠে নামতে না পেরে গত সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১৮-দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন গতকাল ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলমত-নির্বিশেষে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে সাড়া দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। ভোটের অধিকার রক্ষায় এ আন্দোলন আরও বেগবান করে বিজয়ের পথে নিয়ে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।


এদিকে মতো আজও গুলশানের বাসভবনে অবরুদ্ধ  বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবশ্য তার বাসভবনের সামনে নিরাপত্তাব্যবস্থা গত কয়েক দিনের তুলনায় শিথিল  অনেকটা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও গতকাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল কম। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনেও লক্ষ করা গেছে একই চিত্র। অবশ্য খালেদা জিয়া গৃহবন্দী কিনা তা জানতে এবং সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আজ সকালে জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমীনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যার। তারা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও দেখা করার জন্য সময় চেয়েছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নয়াপল্টনের আশপাশে আজও দেখা যাচ্ছে না ১৮-দলীয় জোটের কোনো নেতা-কর্মীকে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে অবরোধের চালচিত্র জেনেছেন। কেউবা বাসায় টিভি দেখে খবরাখবর নিয়েছেন। মাঠে নামা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কঠোর সর্তকবার্তাও উপেক্ষা করেছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ পুরো রাজধানী এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দখলে।


রাজপথে না থাকার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,‘ যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় রাজধানীতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে না নামাটাই স্বাভাবিক। এছাড়া মিছিল বের করলে পুলিশ সরাসরি গুলি করছে। নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় অভিযানের নামে ভাঙচুর চালিয়ে ঘরছাড়া করা হচ্ছে। তাই নেতাকর্মীরা কৌশলী ভূমিকা নিয়েছেন। এটাকে অন্যভাবে দেখা উচিত না।’


তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি শান্তিপূর্ন এবং অহিংস। আমরা বারবার বলছিলাম, সরকার সমর্থকরাই বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মেরে দায়ভার চাপাচ্ছে বিএনপি ওপরে। কিন্তু আজ তা আবারও প্রমাণ হলো। মাগুরা বাসে আগুন দেয়ার সময় তিন ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার হয়েছে। এটা থেকেই প্রমাণ করে বিএনপি বা আঠারো শান্তিপূর্ন ও অহিংস কর্মসূচি পালন করছে। আর সরকারের গুন্ডাবাহিনী তা বানচালে ষড়যন্ত্র করে নাশকতা চালাচ্ছে।’


অন্যদিকে রাজধানীর আশপাশের গুরুত্বপূর্ন এলাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেটের শহরগুলোতেও মাঠে নামছে না বিএনপি কিংবা আঠারো দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। অবশ্য এখানকার বিএনপি ও আঠারো দলের শীর্ষ নেতারা বলছে, সরকারি দলের হামলা-বাঁধা এবং পুলিশের মামলার কারণে মাঠে নামতে পারছে না কর্মীরা।


(ঢাকাটাইমস/০২ জানুয়ারি/এসকে/ঘ.)