পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন না গোপালগঞ্জের
বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩ ১৬:২১:১১

ঢাকা: বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া রবিবার তার বাসভবনে যে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন তাদের একজনের বাড়িও গোপালগঞ্জে না। ঘটনাটি পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রবিবার ১৮ দলের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে পুলিশের বাধায় যেতে না পেরে ক্ষুব্ধ হন খালেদা জিয়া। দিনভর খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাও করে রাখে ১০ প্লাটুন পুলিশ। বেলা তিনটার দিকে তিনি বাসভবন থেকে বের হতে গাড়িতে ওঠলেও সে গাড়ি বাসার বাইরে যেতে দেয়নি পুলিশ। পরে গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ফটকে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে কেন তাকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না সে কৈফিয়ত চান খালেদা জিয়া। জবাবে পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে উপরের নির্দেশের কথা বলে বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়ার কথা বলেন।
পুলিশ কর্মকর্তার এই জবাবে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়া। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত পুলিশ কয়েকজন কর্মকর্তা ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন। এ সময় এক পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে তো আমার বিরোধ নেই। কিন্তু এটা তো ঠিক নয় যে আমাকে আমার বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হবে না’।
এরপর পুলিশের এক নারী কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, আপনার মুখটা এখন বন্ধ কেন? এই যে মহিলা-এতোক্ষণ তো কথা বলেছেন। এখন চুপ কেন?...দেশ কোথায়? গোপালি? গোপালগঞ্জ জেলার নাম বদলে দেবো। গোপালগঞ্জ থাকবে না। গজব পড়বে আপনাদের ওপর’।
এই কথাগুলো খালেদা জিয়া বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার আয়েশা খানমকে উদ্দেশ্য করে। কিন্তু তাঁর বাড়ি চাঁদপুর।
পুলিশের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে খোঁজেন খালেদা জিয়া। অন্য কর্মকর্তাদেরকে তিনি বলেন, ‘আপনার অফিসার কোথায় গেলো? আসলো না? তাকে বলবেন, আমার সাথে দেখা করতে, আমি কথা বলতে চাই। বুঝেছেন? বুঝেননি কথাটা? এটা তো বাংলা ভাষা, নাকি অন্য ভাষায় বলতে হবে? বুঝেছেন? সেই অফিসারকে বলেন আমার সাথে দেখা করতে।’
খালেদা জিয়া নাম না বললেও পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন খালেদা জিয়া গুলশান অঞ্চলের উপ কমিশনার লুৎফুল কবিরকে খুঁজেছেন। কারণ, গত দুইদিন ধরে খালেদা জিয়ার বাড়িকে ঘিরে নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে ছিলেন তিনিই। তার বাড়িও গোপালগঞ্জে না, নরসিংদী।
খালেদা জিয়ার বাসভবনকে ঘিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গুলশান অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোর্শেদ আলমের বাড়ি ভোলায়। দুই সহকারী পুলিশ কমিশনারের মধ্যে নুরুল আলমের বাড়ি ফেনী আর আবু তাহের আব্দুল্লাহর বাড়ি গাজীপুরে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামের বাড়িও গোপালগঞ্জে না, মেহেরপুরে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, গোপালগঞ্জকে ঘিরে খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে তারা মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘সেখানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য নিয়ে বাহিনীটির কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। তবে এ নিয়ে ক্ষোভের বদলে হাস্যরই বেশি করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা’।
এদিকে গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেয়ার হুমকির প্রতিবাদে সকালে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় বিক্ষোভ করেছ ঢাকাস্থ গোপালগঞ্জবাসী। বিরোধীদলীয় নেতার কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে দেয় তারা। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়া এখনও পাকিস্তানি ভাবধারায় বিশ্বাস করেন বলেই জাতির জনকের জেলাকে নিয়ে এমন কটূক্তি করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই খালেদা জিয়া এ কাজ করেন বলেও মন্তব্য করেন একজন বিক্ষোভকারী। অন্য একজন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে নবীগঞ্জ রেখেছিল। এখন রাজাকারদের সঙ্গে জোট করা খালেদা জিয়া আবার সেই কাজ করার হুমকি দিয়ে রাজাকারদের মনোবাসনার কথাই বলেছেন। কিন্তু এটা কখনও করতে পারবেন না তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/এসআর)