logo ০৫ মে ২০২৫
জনবিচ্ছিন্নরাও অপ্রতিদ্বন্দ্বী!
আরিফুর রহমান
০৩ জানুয়ারি, ২০১৪ ১৪:১৭:০০
image

সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা ও কালিগঞ্জের একাংশ) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক। অথচ আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় চালানো একাধিক প্রাক-নির্বাচনী জরিপে তাঁকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছিল। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বিবেচনায় নিয়ে চালানো জরিপ প্রতিবেদনগুলোতে রুহুল হকের জয়লাভের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলেও মন্তব্য করা হয়েছিল। ওই জরিপ প্রতিবেদনগুলোতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ডা. শহিদুল আলমের জনপ্রিয়তা তুলনামূলক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। বিস্ময়করভাবে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ রুহুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়নই শুধু পাননি, একতরফা নির্বাচনের সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বন্দোবস্তও করে ফেলেছেন।


গত কিছুদিন ধরে সাতক্ষীরায় জামায়াতে ইসলামী যে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তার সিংহভাগই রুহুল হকের এই নির্বাচনী এলাকায়। বিস্ময়কর হলো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজ এলাকাতেই যেতে পারছেন না। রাজনৈতিকভাবে জামায়াতে ইসলামীকে মোকাবিলা করার জন্য আওয়ামী লীগের যে সাংগঠনিক শক্তি-সামর্থ্য থাকা দরকার ছিল গত পাঁচ বছরে রুহুল হক ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে তা আর হয়নি বলে খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রকাশ্যে বলাবলি করছেন এখন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী সম্পর্কে স্পষ্টত বলা হয়েছে, একজন পেশাজীবী হিসেবে অতীতে যে সুনাম রুহুল হকের ছিল, মন্ত্রী হওয়ার পর নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তার পুরোটাই কার্যত নষ্ট হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় সাবেক এ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরাই মূলত বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যারা আবার আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত।


‘জনবিচ্ছিন্ন’ রুহুল হককে মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি বার্তা দিতে চেয়েছে সেই কানাঘুষাই তৃণমূল স্তরে হচ্ছে। রুহুল হকের পরিবর্তে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি ডা. মোখলেছুর রহমান অথবা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) জামাত আলীকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে এরকম পর্যবেক্ষণও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে করা বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে ছিল। কিন্তু ফের রুহুল হকের ওপর আস্থা রেখে কেন্দ্র যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি প্রতিদিন প্রমাণ হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মার খাওয়ার মধ্য দিয়ে।


ঢাকা থেকে শুরু করে সাতক্ষীরায় রুহুল হকের নির্বাচনী এলাকায় এটি এখন সর্বজনবিদিত যে, গত পাঁচ বছরে দারুণভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে রুহুল হক পরিবারের সম্পদ। একটি মুঠোফোন কোম্পানির কর্মকর্তা ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছেলে জিয়াউল হক। কিন্তু মন্ত্রী-পিতার কল্যাণে গত পাঁচ বছরে তিনি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, টেলিকম সেক্টরের আইজিডব্লিউ, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক। রুহুল হকের ছেলের আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিটিআরসি প্রায় শতকোটি টাকা পাবে। স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে বিতর্কিত ও জামায়াত ঘরানার ব্যবসায়ী বলে খ্যাত মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে রুহুল হক ও তাঁর ছেলের গভীর সখ্যতা ছিল ওপেন সিক্রেট। মিঠু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতের বড় বড় ঠিকাদারি কাজে রুহুল হকের নিয়মিত কমিশন ছিল অবধারিত। এরকম প্রচারণাই গত পাঁচ বছর ধরে ছিল।


একদিকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ অন্যদিকে ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ এর তকমা লেগে যাওয়া রুহুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে যে নতুনধারার গণতন্ত্র চর্চার উদাহরণ তৈরি করলেন তা কি আওয়ামী লীগের জন্যও ভালো কোনো ফল অদূর ভবিষ্যতে দেবে? এই প্রশ্ন কি খুব এটা অবান্তর?


খুলনা-৬ (কয়রা ও পাইকগাছা) আসনের সাবেক এমপি শেখ মো. নুরুল হক গত পাঁচ বছরে দশবারের বেশি নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছেন কি-না নিজেই তা মনে করতে পারেন না। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য থাকাকালে নুরুল হক ও তাঁর ছেলে গোটা নির্বাচনী এলাকায় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে এক পর্যায়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ঘুরেফিরে এক মেয়াদ পর সেই ‘জনবিচ্ছিন্ন’ নুরুল হকই আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদীয় রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে যাচ্ছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের জয়লাভের সম্ভাবনা নেই বলে নির্বাচনপূর্ব সব ধরনের জরিপ প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছিল। অথচ সেই আসনেই কি-না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হতে চলেছেন।


সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া ও ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে তাতে প্রার্থী হিসেবে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ভালো করবেন না এটিই স্পষ্টতই বলা হয়। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী আবদুল হাদী অথবা ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন তুলনামূলক ভালো করবেন জরিপ প্রতিবেদনে এটিও বলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মনোনয়নই শুধু পাননি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন।


ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী শক্তপোক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার এই আসনে ২০০১ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন। তার কর্মী বাহিনীকে মোকাবিলা করার মতো অবস্থা নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ‘নেতৃত্ব’ রাখে না বলেই বিভিন্ন প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। টিআর-কাবিখা বিতরণে অনিয়মসহ নানা কর্মকাণ্ডে বর্তমানে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এলাকায় অজনপ্রিয় ও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আর তিনিই কিনা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন!


খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে তালুকদার আবদুল খালেকের জনপ্রিয়তার একপ্রস্ত পরীক্ষা হয়ে গেছে কিছুদিন আগেই। বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মংলা) নির্বাচন এলাকায় ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তালুকদার খালেক। সর্বশেষ নির্বাচনের তাঁর স্ত্রী সংসদ সদস্য হন। গত পাঁচ বছরে বাগেটহাট-৩ নানাভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েন তালুকদার আবদুল খালেক ও তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহার খালেক। বিশেষ করে ঘেরের জমি, শিল্পের জন্য জমি, কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে নানা বিতর্কের জন্ম দেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাক নির্বাচনী জরিপে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে এই আভাস দেয়া হয়েছিল যে, এক সময়ের আওয়ামী লীগের ‘দুর্গ’ খ্যাত বাগেরহাট-৩ আসনটি আর সুরক্ষিত নেই। বিশেষত জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এমএএইচ সেলিম বিএনপির প্রার্থী হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের অবর্তমানে সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ‘ডাহাফেল’ তালুকদার আবদুল খালেক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের দুর্গ আপাতত সামাল দিয়েছেন। অহঙ্কারী আর বদমেজাজী খ্যাত তালুকদার খালেকের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া স্থানীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ফল দেবে কিনা সেটি ভবিষ্যতই বলে দেবে।


প্রাক নির্বাচনী জরিপে বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মীর শওকত আলী বাদশার গ্রহণযোগ্যতা সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তাঁর জয়ী হওয়া সম্ভাবনাও কম বলে প্রাক নির্বাচনী জরিপে আভাস দেয়া হয়েছিল। অর্থের বিনিময়ে তিনি অনেককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন-এমন কথাও বিভিন্ন জরিপে বলা হয়। বরং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকুকে মনোনয়ন দিলে আসনটি ধরে রাখা সম্ভব, এমন কথাই বলা হয়েছিল সব জরিপ প্রতিবেদনে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে মীর শওকত আলী বাদশাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। দল আর সরকারের প্রাক-নির্বাচনী জরিপ যাকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ বলছে তিনিও কি-না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেছেন।


আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০০১ সালে নড়াইল-১ (কালিয়া ও সদর একাংশ) আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছিলেন। মূলত টেন্ডারবাজি কাবিখা-কাবিটা ও টিআর থেকে কমিশন আদায়, স্কুল কলেজে নিয়োগে বাধ্যতামূলক অর্থ আদায়সহ সীমাহীন দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা কাকুতি-মিনতি করেন। প্রাক-নির্বাচনী জরিপে আওয়ামী লীগ ও একাধিক সংস্থা যাকে মনোনয়ন না দেয়ার সুপারিশ করেছিল সেই ‘জনবিচ্ছিন্ন’ ও ‘দুর্নীতিপরায়ণ’ খ্যাত কবিরুল হক মুক্তি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে। সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ‘দুর্গ’ খ্যাত আসনটিতে দীর্ঘমেয়াদের রাজনীতির সুবিধার জন্য ‘ভালো ভাবমূর্তির’ নেতা খ্যাত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোস অথবা যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য এনায়েত কবীর চঞ্চলকে প্রার্থী করার সুপারিশ করা হয়েছিল। একতরফা নির্বাচন না হলে কবিরুল হক মুক্তিকে দলের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো কিনা তা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিদিনিই নানা আলোচনা হচ্ছে।


আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনে কখনোই কাজী নাবিল আহমেদকে যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। মনোনয়ন প্রার্থী হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে গণসংযোগেও কখনো সক্রিয় ছিলেন না তিনি। গত পাঁচ বছর ধরে এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী রেজা রাজু ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। এর মধ্যে বিশাল কর্মী বাহিনী আর জনপ্রিয়তায় শাহীন চাকলাদার এগিয়ে ছিলেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও স্থানীয়ভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী তরিকুল ইসলাম নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের জয়লাভ কার্যত অধরা থাকবে এমন আভাসই প্রাক নির্বাচনী বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে দেয়া হয়। ‘অপ্রত্যাশিতভাবে’ প্রার্থী পদ পাওয়া ধনাঢ্য কাজী নাবিল আহমেদ বিরাট চমক দিয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে। ধনাঢ্য কাজী নাবিলের মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে শিল্পপতি পিতা ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কর্নেল (অব.) কাজী শাহেদ আহমেদ কি ম্যাজিক দেখালেন তা নিয়ে যশোরে নানা গুঞ্জন চলছে।


গাইবান্ধা-৫ আসনের এমপি ফজলে রাব্বী মিয়াকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ আখ্যা দিয়ে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতা মনোনয়ন না দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন দলীয় সভানেত্রীকে। আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপ প্রতিবেদনেও তাঁর জনভিত্তি দুর্বল এমন আভাসই বারবার দেয়া হয়েছিল। টিআর-কাবিখা-কাবিটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরে দারুণ সমালোচিত ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ। বরং আওয়ামী লীগের দুই উপজেলার নেতাকর্মী, সমর্থকরা একাট্টা হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনের পেছনে। জরিপ প্রতিবেদনগুলোতেও রিপনের সামাজিক ও রাজনৈতিক ভালো অবস্থানের আভাস বারবার দেয়া হয়। দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে যিনি ঘোরতর অনিশ্চয়তায় ছিলেন সেই ফজলে রাব্বী মিয়াই কি-না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিল বলে বিভিন্ন সময় প্রাক নির্বাচনী জরিপে বলা হয়। তিনি ও তাঁর স্ত্রীর সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, সংসদ সদস্যের পিএসখ্যাত আলমগীর শাহী সুমনের লাগামহীন স্বেচ্ছারিতায় নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আবদুল মান্নানের জয়লাভ কার্যত অসম্ভব মন্তব্য করে বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ড. সিদ্দিকুর রহমান অথবা সারিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলীকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের মান রক্ষা হতে পারে- এমন সুপারিশই জরিপ প্রতিবেদনগুলোতে করা হয়। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ ও ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে এলাকায় পরিচিত আবদুল মান্নানকেই ফের আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়ার পর তিনিও নজিরবিহীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার নজির সৃষ্টি করছেন।


বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। এখানে বিএনপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটাতে হবে। জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা আনসার আলী মৃধাকে প্রার্থী করা হলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন। এখানে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নামকাওয়াস্তে। আওয়ামী লীগের হয়ে চালানো নির্বাচনী সমীক্ষাগুলোতে বলা হয়েছিল এখানে জাতীয় পার্টির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী নেই। কিন্তু আসনটিতে জাতীয় পার্টির ব্যানারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হতে চলেছেন জনৈক নুরুল ইসলাম তালুকদার।


বগুড়া-৫ (শেরপুর ও ধুনট) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলের তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গুটিকতক লোকের মাধ্যমে এলাকায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সিন্ডেকেট গড়ে তুলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা দুর্বল বিবেচনায় তাকে আর মনোনয়ন দেয়া ঠিক হবে না- এমন সুপারিশই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষায় করা হয়েছিল। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মজনু আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলে বিএনপির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হাবিবর রহমানকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হাবিবর রহমান নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন হয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন।


বগুড়া-৬ (সদর) নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল। বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এখানে পেরে উঠবেন না বলে সকল নির্বাচনী সমীক্ষায় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফলও সেই ইঙ্গিত দেয়। আসনটিতে জাতীয় পার্টির চোখে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম নেই। বিএনপির দুর্ভেদ্য এই ঘাঁটিতে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে ‘টেক্স ফ্রি’ গাড়ি কেনার প্রহর গুনছেন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদের ভাবমূর্তি অত্যন্ত নেতিবাচক। এরকম মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে তাকে মনোনয়ন না দেয়ার কথা বলা হয়। তিনি আকণ্ঠ দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন এমন মন্তব্য করে বিভিন্ন সময় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারককে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়- এজাবুল হক, বাবুল কুমার ঘোষ, বুলিকে নিয়ে আবদুল ওয়াদুদ দুর্নীতির যে সিন্ডিকেট করেছেন তা সাধারণ মানুষের মুখেমুখে। তাঁর পরিবর্তে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ মাহমুদুর রহমান বেঞ্জু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রুহুল আমিন অথবা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মঈনুদ্দিন মণ্ডলকে মনোনয়ন দিলে কিঞ্চিৎ আশার আলো আওয়ামী লীগ দেখতে পারে, এমন কথাই বলা হয়েছিল প্রাক নির্বাচনী জরিপগুলোতে। যাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে দলের আর সরকারের নির্বাচনী জরিপ পূর্বাভাস দিয়েছে বারবার সেই আবদুল ওয়াদুদ মনোনয়নই শুধু পাননি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হতে চলেছেন।


নওগাঁ-৬ আসনের (রাণীনগর-আত্রাই) বর্তমান সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম জামায়াত ক্যাডারদের পুনর্বাসন, জিএমবি সদস্যদের মামলা থেকে মুক্ত করে আনা এবং লুটপাটে ব্যস্ত সময় পার করেছেন গত পাঁচ বছর। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জরিপে এমন মন্তব্য করে তাঁর পরিবর্তে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য শাহীন মনোয়ারা হককে প্রার্থী করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির কারণে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়া ইসরাফিল আলমকেই ‘তুরুপের তাস’ বলে মেনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর তিনিও নির্বাচনে যথারীতি প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।


রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ি ও তানোর) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক শিল্পপতি মন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী নির্বাচনী এলাকায় অজনপ্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ ও সরকারের তরফে হওয়া সব নির্বাচনী জরিপে এই তথ্য উপস্থাপন করে তাঁর পরিবর্তে অন্য প্রার্থী বেছে নেওয়া সঙ্গত হবে বলে সুপারিশ করা হয়। পুলিশের সাবেক ডিআইজি মতিউর রহমান, গোদাগাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম আতাউর রহমান অথবা জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম প্রার্থী হলে বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল এসব প্রতিবেদনে। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ও ওমর ফারুক চৌধুরী প্রার্থী হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের পরাজয় নিশ্চিত এমন আভাসও দেয়া হয়। শেষমেশ ‘জনবিচ্ছিন্ন’ নেতাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ও ঝুঁকি এড়াতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কৌশলেও জয়ী হয়েছেন।


রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এনামুল হকের এলাকায় সেই অর্থে কোনো জনপ্রিয়তা নেই। তিনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনের লুটপাট তদবিরের কারণে গোটা এলাকাতে আওয়ামী লীগ বিতর্কিত হয়েছে। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনীল সরকারকে মনোনয়ন দিলে আসনটিতে আওয়ামী লীগের ভালো করার সম্ভাবনা আছে। এরকম মতামতই দেয়া হয় প্রাক নির্বাচনী একাধিক জরিপে। ঢাকায় ও নির্বাচনী এলাকায় নানাভাবে বিতর্কিত এনামুল হককে প্রার্থী করা হলে তিনি জয়লাভ করতে পারবেন না প্রাক নির্বাচনী জরিপ এ কথা পরিষ্কার বলা হয়েছিল। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হিসেবে যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।


রাজশাহী-৫ (পুটিয়া-দুর্গাপুর) আসনে বর্তমান এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারাকে মনোনয়ন না দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকদের থেকে এমপি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এই মন্তব্যও করা হয় প্রতিবেদনগুলোতে। আসনটিতে চারদলের শক্ত অবস্থানের কারণে আবদুল ওয়াদুদ দারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতেই ব্যর্থ হবেন- এই মন্তব্য করে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তাজুল ইসলাম ফারুক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিএম হীরা বাচ্চু নিদেনপক্ষে রাজশাহীর সাবেক মেয়র খাইরুজ্জামান লিটনকে মনোনয়ন দেয়া সঙ্গত হবে বলা হয়। বিস্ময়করভাবে আবদুল ওয়াদুদ দারা মনোনয়নই শুধু পাননি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হতে চলেছেন।


সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্ল্যাপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যত ধরনের নির্বাচনী সমীক্ষা চালানো হয়েছে তার কোথাও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তানভীর ইমামের নাম আসেনি। এলাকাতে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আছে এমন আভাসও কোথাও দেয়া হয়নি। বরং বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল হক অথবা প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ মির্জার স্ত্রী হাসি মির্জার মধ্য থেকে কাউকে প্রার্থী করা উচিত হবে বলে জরিপগুলোতে প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে শফিকুল ইসলাম শফি প্রার্থী হলে তাঁর জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়। কিন্তু এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামকে। আর তিনিও ছলেবলে-কৌশলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।


পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর-জিয়ানগর ও সদর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী একেএম আউয়াল খাস জমি, হিন্দু সম্পত্তি দখল, টেন্ডার ও নিয়োগবাণিজ্যে যুক্ত থেকে এলাকায় নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এক সময়ের দক্ষ এই সংগঠক এলাকায় ধীরে ধীরে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে যত ধরনের নির্বাচনী জরিপ হয়েছে তাতে এই প্রার্থী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যই করা হয়েছে বেশি। তার পরিবর্তে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সম্পাদক শম রেজাউল করিম অথবা প্রয়াত সংসদ সদস্য শুধাংশু সেখর হাওলাদের স্ত্রী সাধনা হাওলাদারকে বেছে নেয়ার সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও দলীয় সভানেত্রীকে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ ও ‘বিতর্কিত’ একেএম আউয়ালকে মনোনয়ন না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিহীন নির্বাচনে একেএম আউয়ালকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। যথারীতি তিনিও ফাঁকা মাঠে একক প্রার্থী।


নেত্রকোনা-৪ আসনে বর্তমান সংসদ রেবেকা মমিন ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন তাঁর পরিবর্তে আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো সব ধরনের জরিপে শফি আহমেদকে প্রার্থী করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু ‘জনবিচ্ছিন্ন’ রেবেকা মমিন দলের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।


ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রাক নির্বাচনী জরিপে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে সেখানে এই নামেরই কোনো অস্তিত্ব ছিল না। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য কেএম খালেদ বাবু ও বিএনপির সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের আবদুল হাই আকন্দ, খন্দকার শহিদুল্লাহ, বিএনপির অ্যাডভোকেট আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছেন এমন তথ্যই বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্কহীন সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় রীতিমতো বিস্মিত ওই নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষও। স্থানীয়ভাবে জুয়াড়ি বলে পরিচিত সালাউদ্দীন মুক্তিকে বছরখানেক আগেও জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগে পিছমোড়া করে বেঁধে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এম এ মান্নান বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় মনোনয়ন পাবেন না এটা সবাই ধরে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব ধরনের নির্বাচনী জরিপে তাঁর পরিবর্তে প্রার্থী হিসেবে দলের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ড. আলাউদ্দিন আহমেদ অথবা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজালকে বেছে নেয়া সঙ্গত হবে বলে নির্বাচনী জরিপগুলোতে বলা হয়। কারণ, তাদের এলাকায় ভাল ভাবমূর্তি ও জনসম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখানে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত নেতা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনকে। সোহরাব উদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিশেষ ক্ষমতাধর ব্যক্তির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। সোহরাব উদ্দিনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।


আফজাল সু খ্যাত মো. আফজাল হোসেন কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে মনোনয়ন পেলে তাঁর জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। পরিবর্তে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আলাউল হক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ এ কে এম নুরুন্নবী বাদল প্রার্থী হিসেবে ভাল করবেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো নির্বাচনী জরিপগুলোতে এমন তথ্যই উঠে আসে। কিন্তু আর্থিকভাবে সচ্ছল আফজাল হোসেন দলের প্রভাবশালী অনেককে সহায়তা করেন ও করতে পারেন এই বিবেচনাতেই নাকি আবারও দলের মনোনয়ন পেয়ে যান। জনসম্পৃক্ততা কম হলেও ভোট যুদ্ধে ফাঁকা মাঠে তিনিও গোল দিতে চলেছেন।


কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব) আসনে উপনির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী প্রয়াত রাষ্ট্রপতির ছেলে নাজমুল আহসান পাপন শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। তিনি কখনোই জনসম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করেননি এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকায় নিজের কর্মকাণ্ড চালান। যা নিয়ে আওয়ামী লীগসহ এলাকার সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভ রয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চালানো জরিপে একাধিকবার এরকম তথ্য দলের নীতি নির্ধারণী মহলে দেয়া হয়েছে। ভৈরবের সাবেক পৌর মেয়র ফখরুল আলম আক্কাস অথবা কুলিয়াচরের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুসা মিয়াকে প্রার্থী করলে এই আসনে আওয়ামী লীগের দুর্গ ধরে রাখা সম্ভব, জরিপগুলোতে এমন আভাসই দেয়া হয়। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে নাজমুল আহসান পাপন প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমনটা বলা হয়েছিল প্রতিবেদনগুলোতে। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে নাজমুল আহসান পাপনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।


ঢাকা-২ (কেরাণীগঞ্জ ও সাভারের একাংশ) আসনটি আগামীতে আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিকূল। বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানুল্লাহ আমানের সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো জনভিত্তি বর্তমান সংসদ সদস্য ও আইনপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেই। সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ূন কবীর অথবা কেরাণীগঞ্জ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদকে মনোনয়ন দিলে তাঁরা কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেন বলে, জরিপগুলোতে বলা হয়।


সারাদেশে আওয়ামী লীগ যেকয়টি আসনকে নিজেদের জন্য নেতিবাচক হিসেবে রেখেছিল তার মধ্যে এই আসনটিও অন্যতম। শেষ বিচারে কামরুল ইসলামই এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়েও নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।


ঢাকা-১৪ (দারুস সালাম ও মিরপুরের একাংশ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলাম গত পাঁচ বছরই নিজেকে লুটপাটে ব্যস্ত রেখেছেন। দেশে এবং দেশের বাইরে বিপুল বিত্ত সম্পত্তির মালিক তিনি। নিজ নির্বাচনী এলাকাতে আসলামের ভূমি দস্যুতা টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো সব ধরনের নির্বাচনী জরিপে এলাকায় তাঁর অবস্থান অত্যন্ত নাজুক বলে মন্তব্য করা হয়েছে। আসলাম প্রার্থী হলে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী থাকলে জয়লাভ কার্যত অসম্ভব এমন আভাসও একাধিকবার দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী মহলে। ভূমিদস্যু খ্যাত আসলাম মালয়েশিয়ায় একাধিক বাড়ি, জমি এমনকি দ্বীপেরও মালিক এই আলোচনা খোদ তার নির্বাচনী এলাকাতেই। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ আসলাম অবৈধ টাকার জোরেই আবারও দলের মনোনয়ন পেলেন কিনা এই কৌতূহল বিভিন্ন মহলে। ‘চতুর’ আসলাম নির্বাচনের মাঠে একক প্রার্থী।


গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রহমত আলী গত পাঁচ বছরেই নির্বাচনী এলাকায় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। বিশেষত তাঁর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয়ের জুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল-বেদখলে নেতৃত্ব দেয়া এবং এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কমিটির কুক্ষিগত করে নিয়োগ বাণিজ্য করে এলাকায় ব্যাপকভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। রহমত আলীকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল এই আসনটি ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হবে এমন মন্তব্য করে আসনটিতে শ্রীপুর উপজেলার চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন সবুজকে মনোনয়ন দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে। বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হচ্ছে বলেই আসনটিতে বয়োবৃদ্ধ রহমত আলীকে আবার বেছে নেয়া হয়েছে কিনা, এই প্রশ্ন গাজীপুরের বিভিন্ন মহলে।


 


গাজীপুর-৫ (কালিগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি অত্যন্ত অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, চুমকি তাঁর ঘনিষ্ঠদের দিয়ে এলাকার জমির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, জুয়া, লটারি, হাউজির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতা আজম খানের মুরগির খামার দখল করে নেয়ার অভিযোগও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে রয়েছে। যা এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন সময়। চুমকির পরিবর্তে গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আকতারুজ্জামানকে প্রার্থী করার সুপারিশ করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক জরিপে। বিএনপির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বিএনপির প্রার্থী হলে চুমকির পক্ষে জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনী জরিপগুলোতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারককে এই আভাস দেয়া হয়েছিল। চুমকি ‘সৌভাগ্যবতী’। নির্বাচনে বিএনপি নেই আর তিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। ফাঁকা মাঠে তিনি একক প্রার্থী।


নরসিংদী-৪ (মনহরদী-বেলাবো) আসনের বর্তমান এমপি নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন নির্বাচনী এলাকায় অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছিলেন আর্থিক অসততার কারণে। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো নির্বাচনী সমীক্ষাগুলোতে বলা হয়েছিল, তাঁর অবস্থান অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা ডা. রউফ সরদার অথবা মনহরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলুল হককে প্রার্থী করা যেতে পারে, এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন।


নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জ একাংশ) আসনে জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকার প্রার্থী পদ পাওয়াই ছিল বিস্ময়কর। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি তরুণ কায়সার হাসনাত, তাঁর চাচা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন এবং জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাহাউল হকের মধ্যেই কেউ একজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন এটাই ধরে নিয়েছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগির খেলায় অপ্রত্যাশিতভাবে আসনটি ছাড় পান জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি লেয়াকত হোসেন খোকা। মাঠে ময়দানে অবস্থান না থাকা সত্ত্বেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার যে নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু হচ্ছে সেখানে এই আসনটিতে লেয়াকত হোসেন খোকাও একক খেলোয়ার।


রাজবাড়ি-১ (সদর ও দৌলতদিয়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী কেরামত আলী গত পাঁচ বছরে ঘুষ দুর্নীতির কারণে এলাকায় দারুণভাবে বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। দৌলতদিয়া ঘাট, টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়া, স্কুল-কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিতে দারুণভাবে কেরামত আলী হাত পাকিয়েছেন বলে দলের ও সরকারের পক্ষ থেকে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে বলা হয়। কেরামত আলীর কারণে আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত আসনটি হাতছাড়া হতে পারে, এমন আভাসও প্রতিবেদনগুলোতে দেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে রাজবাড়ি জেলা পরিষদ প্রশাসক আকবর আলী মর্জি অথবা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফকির আব্দুল জব্বার প্রার্থী হলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের সাথে হাড্ডাহাড্ডি (ফিফটি-ফিফটি) লড়াই হতে পারে। কিন্তু কাজী কেরামত আলী প্রার্থী হলে পরাজয়ের সম্ভাবনা বেশি। তবে সব ধরনের জরিপ উপেক্ষা করে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়া কাজী কেরামত আলীকেই প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।


সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য অধরা থাকবে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে করা বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে এমন ইঙ্গিতই দেয়া হয়। বিএনপি সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কে এম ওবায়দুর রহমানে কন্যা শামা ওবায়েদের জয় লাভ করার সম্ভাবনার কথা সব নির্বাচনী জরিপেই তুলে ধরা হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেই। যথারীতি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে সিলেট-১ (সদর ও কোম্পানিগঞ্জ) আসনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে প্রার্থী না করার সুপারিশ করা হয়েছিল। বিএনপির প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের সঙ্গে তুলনা করলে নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কার্যত তিনি কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মীদের থেকেও তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই মন্তব্য করে বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে সিলেটের সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরানকে প্রার্থী করার সুপারিশ করা হয়েছিল। আবুল মাল আব্দুল মুহিত আওয়ামী লীগের প্রার্থীতাই শুধু পাননি, তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো প্রার্থীই ওই আসনে নেই।


প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সারাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য যেকয়টি আসন অনুকূল বলে চিহ্নিত করা হয় তাঁর মধ্যে সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসন অন্যতম। এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপি হাফিজ আহমেদ ছাড়াও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আহমদ আল কবীর অথবা মাসুক উদ্দিন আহমেদ প্রার্থী হলেও আওয়ামী লীগ আসনটিতে অনায়াসে জয় পাবে, এমন তথ্য-উপাত্তই বিভিন্ন সময় তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনী জরিপগুলোতে আসনটিতে চারদলের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদউদ্দিন চৌধুরীর নাম উল্লেখ আছে। অন্যদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ জাতীয় পার্টির বাতি নিভু নিভু করে জ্বালিয়ে রেখেছেন বলে বলা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে এবং পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন জাতীয় পার্টির নেতা সেলিম উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।


গত পাঁচ বছরে দফায় দফায় আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রাক নির্বাচনী জরিপ করা হয়েছে সেখানে হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থী আছে তারই কোনো হদিস ছিল না। আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে সাবেক প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া অথবা প্রয়াত সাংসদ দেওয়ান ফরিদ গাজীর ছেলে শাহ নেওয়াজ গাজী মিলাদের কথা বলা হয়েছে। আর বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি শেখ সুজাত মিয়া অথবা শফিকুর রহমান ফাইজুর নাম উল্লেখ আছে। যিনি কখনো মাঠে ময়দানে ছিলেন না সেই আব্দুল মুনিম চৌধুরী জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


সারাদেশে বিএনপি যে কয়টি আসন হেসেখেলে জিতবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চালানো জরিপগুলোতে আভাস দেয়া হয়েছে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) তার মধ্যে একটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এখানে জনপ্রিয় প্রার্থী। তবে পপি লাইব্রেরি খ্যাত অধ্যাপক আব্দুল মজিদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ভাল লড়াই করবেন। আওয়ামী লীগের হয়ে চালানো নির্বাচনী জরিপের কোথাও আমির হোসেন নামে জাতীয় পার্টির কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নামোল্লেখ ছিল না। ৩৫ বছর বয়সী আমির হোসেন ঢাকার উত্তরায় মুদী দোকানদারী করেন। অতি সম্প্রতি একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের কাছে যান ও তাঁকে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করেন। এলাকায় যাকে কেউ চেনে না সেই আমির হোসেন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পথে।


কুমিল্লা-৮ (বরুরা ও সদর দক্ষিণ একাংশ) আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হবে এমন ইঙ্গিতই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে বলা হয়। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ জাকারিয়া তাহের সুমন ও আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নাসিমুল আলম চৌধুরী নজরুলের মধ্যেই মূল লড়াই হবে, বিভিন্ন জরিপে সব সময় এমন কথাই বলা হয়েছে। একাধিকবার বিভিন্ন নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী ‘জনবিচ্ছিন্ন’ নুরুল ইসলাম মিলন এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


কুমিল্লা-১০ (লাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ একাংশ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য লোটাস কামাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেই যতই প্রচার পান না কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে তাঁর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো সব ধরনের নির্বাচনী জরিপে আসনটিকে আওয়ামী লীগের জন্য প্রতিকূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।


ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যেভাবে নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন চাঁদপুর-১ (কচুয়া) নির্বাচনী এলাকায়ও দারুণভাবে অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। আওয়ামী লীগের হয়ে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৫৫ ভাগ ও মহীউদ্দীন খান আলমগীর প্রার্থী হলে তাঁর জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৪৫ ভাগ বলে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি প্রচণ্ড প্রতিহিংসা পরায়ণতা, দলের একাংশকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের দুর্নীতির কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে নির্বাচনী জরিপগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়নি। তিনিও হেসেখেলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


চাঁদপুর-৩ (সদর ও হিমচর) আসনে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। দলের স্থানীয় প্রায় সব পক্ষের সঙ্গেই তাঁর দূরত্ব সর্বজনবিধিত। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ক্ষুদ্র একটি অংশকে দিয়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের বন্দোবস্ত করেছিলেন ডা. দীপু মনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তিনি নিশ্চিতভাবে পরাজিত হবেন আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো বিভিন্ন ধরনের প্রাক নির্বাচনী জরিপে স্পষ্টতই এই তথ্য দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারককে দেয়া হয়েছে। চাঁদপুরের সাবেক পৌর মেয়র ইউসূফ গাজী ও আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দি তুলনামূলক আওয়ামী লীগে ভালো প্রার্থী বলেও নির্বাচনী জরিপগুলোতে বলা হয়েছিল। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ মানিক অথবা সাবেক সংসদ সদস্য জিএম ফজলুল হক বিএনপির প্রার্থী হলে দীপু মনি ধোপে টিকবেন না, এরকম পর্যবেক্ষণও বিভিন্ন সময় প্রাক নির্বাচনী জরিপে তুলে ধরা হয়। কিন্তু সেই দীপু মনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা নেই জাসদের। বিভিন্ন প্রাক নির্বাচনী জরিপে আসনটিতে বিএনপিকে একচ্ছত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিপরীতে এখানে আওয়ামী লীগের যেই প্রার্থী হন না কেন তিনিই বিজয়ী হতে পারবেন না এটি সর্বজনবিদিত। বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ড. একে আজাদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিমের নাম উল্লেখ আছে। তালিকার কোথাও জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তারের নাম উল্লেখ নেই। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে শিরীন আক্তার এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে যোগ্যতম প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগ আসনটি পেতে পারে। যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আলী খোকন ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুন-অর রশীদের মধ্যে সমন্বয় করা গেলে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়াকে মোকাবিলা করা সম্ভব। এদের বাইরে নির্বাচনী এলাকাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদের তৎপরতার কথা উল্লেখ আছে আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষায়। আসনটিতে জাতীয় পার্টির কোনো কার্যক্রম নেই। অথচ জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নোমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখানে নির্বাচিত হতে চলেছেন।


জাতীয় পর্যায়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে জাসদের কার্যনির্বাহী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল এক ধরনের ভাবমূর্তি গড়ে তুললেও চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী আসনে ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ ও সরকারের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী সমীক্ষায় তাঁর জয়লাভের সম্ভাবনা কার্যত ক্ষীণ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী এম মোরশেদ খানের সঙ্গে মাঈনুদ্দিন খান বাদল পেরে উঠবেন না এমন আভাসও বিভিন্ন সময় নির্বাচনী জরিপে দেয়া হয়। কিন্তু মাঈনুদ্দিন বাদল দ্বিতীয় দফায় সংসদ সদস্য হতে চলেছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।


চট্টগ্রাম-১৪ (লোহাগড়া-সাতকানিয়া) আসনটি জামায়াত-বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে আওয়ামী লীগের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপ। সারাদেশে যে আসনগুলো আওয়ামী লীগের অধরা থাকবে তার মধ্যে এই আসনটিও অন্যতম, এমন তথ্যই রয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। তবে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন ও চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রার্থী হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বলে সমীক্ষায় আভাস দেয়া হয়। আসনটিতে নজরুল ইসলাম চৌধুরী কার্যত নিষ্ক্রিয়ই ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনের মাঠে তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।


কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনটি বিএনপির শক্তঘাঁটি। সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ এখানে নিশ্চিতভাবেই বিজয়ী হবেন। সরকারের পক্ষে চালানো বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নজরুল ইসলাম চৌধুরী, রেজাউল করিম অথবা সিআইপি সালাউদ্দিনের নাম বিভিন্ন সময় সুপারিশ করা হয়। এখানে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম চোখে পড়ে না। ‘জনবিচ্ছিন্ন’ মো. ইলিয়াস আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হতে চলেছেন।


কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদীয়া) আসনটি বিএনপি ও জামায়াতের শক্তিঘাঁটি বলে বিবেচিত। বিগত চারটি নির্বাচনের একটিতেও এখানে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়নি। জামায়াতে ইসলামের বর্তমান সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আজাদের বিপরীতে এখানে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা অথবা ড. আনসারুল করিম প্রার্থী হলেও বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু যার তৎপরতার কথা কখনো শোনা যায়নি সেই আশেক উল্লাহ রফিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।


হলমার্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম নায়কখ্যাত সায়মুম সরওয়ার কমল ব্যবসায়িক ফায়দা লোটার কাজেই গত পাঁচ বছর নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। কক্সবাজার-৩ (সদর) আসনে সর্বশেষ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও বর্তমান সরকারের সময় ‘জনবিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েন তিনি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বিভিন্ন সময় এই তথ্য দেয়া হয়েছে দলের পক্ষে চালানো জরিপে। সোহেল সরওয়ার কাজল অথবা মজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলে হয়তো বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। কিন্তু জনবিচ্ছিন্ন সাইমুম সরওয়ার কমল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চালানো সর্বশেষ নির্বাচনী জরিপে বলা হয়েছে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গড়া মহাজোট ১৬০-১৬৫টি আসন পাবে। ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন এমন অর্ধশতাধিক প্রার্থী কোনভাবেই জয়ী হতে যে পারতেন না এটি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বও বিশ্বাস করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও বলছেন, আওয়ামী লীগের বেসিক স্ট্রাকচার ভেঙে দিচ্ছে বিপুল সংখ্যায় ‘জনবিচ্ছিন্ন’দের প্রতিদ্বন্দ্বীহীন করে সংসদে নিয়ে যাওয়ার এই আয়োজন। এর কি খুব প্রয়োজন ছিল?