ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হয়রানি বন্ধ, অভিনয়শিল্পীদের দ্বৈতকর প্রত্যাহার, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে বিল পাওয়ার পর কর প্রদান, ভারতীয় চ্যানেলের অবাধ সম্প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মালিকেরা।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। সংগঠনের সভাপতি মোসাদ্দেক আলী এতে নেতৃত্ব দেন।
অর্থমন্ত্রীর কাছে শঙ্কা প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, দেশে এ যাবত লাইসেন্স পাওয়া ৪০টি বেসরকারি টেলিভিশন (টিভি) চ্যানেল বাঁচবে না। এর মধ্যে অর্ধেক মরে যাবে অথবা চাঁদাবাজি করবে। এসময় তারা সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান। অর্থমন্ত্রী সব মিলিয়ে লিখিত একটি প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দেন অ্যাটকোকে।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ১৫ বছরের কাগজপত্র ও সিডি চাচ্ছে এনবিআর। শুধু তাই নয়, গত ১৫ দিনে তিনবার চিঠি দিয়েছে। বারবার বলছে, কেন উত্তর দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকার লাইসেন্স দিয়েছে বলেই চ্যানেল চলছে। এরকম আচরণ করলে নিজেদের খুবই ছোট লাগে।
শাইখ সিরাজ বলেন, ‘যেদিন থেকে বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়, সেদিন থেকেই মূল্য সংযোজন কর (মূসক) দিতে হয়। কিন্তু আমরা বিল পাই এক বছর পর।’ অভিনয়শিল্পীরা ব্যক্তিগতভাবে কর দিলেও টিভি সম্মানী থেকে মূসক কেটে রাখাটা অশোভন বলে তিনি মনে করেন।
এসএ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনোদন ও তথ্যভিত্তিক চ্যানেল হিসেবে আমরা লোকসান দিচ্ছি। অথচ, এনবিআর অত্যাচার করছে, হয়রানি করছে এবং এসএ গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাবশত মামলা করছে।
এ সময় কথা বলেন একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল হক। অর্থমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘দুঃখিত, রাগ কইরেন না।’ তিনি বলেন, মূসক দিতে সমস্যা নেই। তবে, ১০-১৫ বছরের কাগজপত্র হয়তো পাওয়া যাবে না। বরং এ বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করা যায়। মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘৪০টি চ্যানেল বাঁচবে না। এর মধ্যে ২০টি মরে যাবে অথবা চাঁদাবাজি করবে।’ অন্য শিল্পের মত এই খাতেও নীতি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
চ্যানেল ২৪-এর এমডি একে আজাদ বলেন, ‘আমাদের তো জোর করে কেউ চ্যানেল দেয় না। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরাই তো মাথা কুটে মরি।’
মাছরাঙা টিভির চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী বলেন, এখনও দেশে সাদা কালো টিভিই বেশি। সাদা-কালো বড়জোর ২২-২৪টি চ্যানেল দেখা যায়। অথচ শুরু থেকে ২২ পর্যন্ত ভারতীয় চ্যানেল দিয়ে রাখে ক্যাবল অপারেটররা।
সবার বক্তব্য শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হয়েছিল শুধু কর নিয়ে অভিযোগ। এখন দেখছি অনেক বিষয়ই আছে। কিছু বিষয় আছে কখনোই বাদ যাবে না। যেমন অগ্রিম আয়কর (এআইটি)।’ ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৬৪ সালে ঢাকায় প্রথম টিভি আসে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে অত্র অঞ্চলে আমরাই পথিকৃত্।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গাজী টিভির চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী, সময় টিভির এমডি আহমেদ জোবায়ের, দেশ টিভির ডিএমডি আরিফ হাসান।
অর্থমন্ত্রীর পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গেও একই বিষয়ে বৈঠক করে অ্যাটকো। অ্যাটকোর নেতারা বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানান, ভারতীয় চ্যানেল অবাধে চলছে। অথচ বাংলাদেশি চ্যানেল দেখাচ্ছে না ভারত। এক্ষেত্রে ভারত যেসব শর্তারোপ করে রেখেছে, বাংলাদেশও তাই করতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবসম্মত ও করার মত কোনো সমস্যা থাকলে সমাধান আমি করবই।’ তার আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের একটি সভা ডাকা দরকার বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
(ঢাকাটাইমস/৪ ফেব্রুয়ারি/জেডএ.)