ঢাকা: গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বড় ধরণের হোচট খাওয়া বিএনপি ঘুড়ে দাঁড়ানোর হাকডাক দিলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। নির্বাচনের পরপরই দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দফায় দফায় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের ব্যর্থতার বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে আসে। তাই সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে সবার আগে দল পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এরই অংশ হিসাবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
ঐ বৈঠকে আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে এক মাসের মধ্যে একটি কমিটি পুনর্গঠন করার জন্য বলা হয়। তখনই দলের চেয়ারপারসন একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করে দেয়ার কথা বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) আ.স.ম. হান্নান শাহ ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতার সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার কথা শোনা গেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো অস্তিত্ব এখনো চোখে পড়ছে না। অথচ নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠন করার জন্য সময় আছে আর মাত্র ১২ দিন।
বিশেষ কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভীর কাছে কমিটি পুনর্গঠনের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এ ব্যাপারে চেয়ারপারসনই ভালো বলতে পারবেন।
চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযারি ১ মাসের মধ্য (অর্থাৎ ১০মার্চ) বিশেষ কমিটি গঠনের কথা এবং ঐ কমিটিতে দলের স্থ্ায়ী কমিটির অনেক সদস্যরই থাকার কথা ছিল।
ঐ কমিটিতে হান্নান শাহ ও রুহুল কবির রিজভীকে অন্তর্ভূক্তির কথা শোনা গেলও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। ফলে বিশেষ কমিটি গঠনের বিষয়টি আর আগায়নি। দৃশ্যত অদৃশ্য সুতার টানে আটকে আছে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম। এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশার সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এই বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন মনে করবেন তখন তিনি ঢাকা মহানগর কমিটি পনর্গঠন করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও বলেন আগামী এক মাসের মধ্যে এই কমিটি গঠিত হবে। কাকে আহবায়ক ও সদস্য সচিব করা হচ্ছে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা স্থায়ী কমিটির কেউ জানি না। একমাত্র বেগম খালেদা জিয়াই এই বিষয়ে জানেন এবং তিনিই সবকিছু ঠিক করবেন। যখন দেশনেত্রী এই বিষয়ে আমাদের অবহিত করবেন তখন আপনারাও জানতে পারবেন।
ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠন বিষয়ক একটি বিশেষ কমিটি গঠন করার বিষয়ে ঢাকা মহানগরের পল্টন থানার যুগ্ম-আহবায়ক ফিরোজ আলম পাটোয়ারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) আ. স. ম. হান্নান শাহ ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ৮ থেকে ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতার সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তারা এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাদের বৈঠকের বরাত দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই নতুন কমিটিতে নতুন মুখ বেশি থাকবে চেয়ারপারসন তাদের বলেছিলেন। তবে মহানগর কমিটি পুনর্গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কমিটিই কাজ চালিয়ে যাবে।
ঢাকা মহানগর ধানমন্ডি থানার আহবায়ক আবুল খায়ের বাবলু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ম্যাডাম আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তারা কেউ বাদ পড়বে না আর যারা দলের জন্য কাজ করেনি তারাই বাদ পড়বে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন কিনা এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারপার্সনের কথাতেই এর স্পষ্ট উত্তর রয়েছে যে নতুন কমিটিতে কারা থাকবে আর কারা থাকবে না। আমাদের নতুন করে বলার কিছু নেই।
উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালের ১৪ জুন ২১ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা মহানগর কমিটি সাদেক হোসেন খোকাকে আহবায়ক ও আব্দুস সালামকে সদস্য সচিব নির্বাচিত করে গঠন করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২৮ফেব্রুয়ারি/কেএস/এআর/ ঘ.)