logo ০৩ মে ২০২৫
দুই দলের ভুল রাজনীতিতে উপজেলায় জামায়াতের উত্থান
আবদুস সামাদ আজাদ, ঢাকাটাইমস
০২ মার্চ, ২০১৪ ১৩:০০:২৫
image

ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের উত্থানের পেছনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভুল রাজনীতিকেই দায়ী করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।দ্বিতীয় দফায় উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চেয়ে জামায়াত বেশি আসন পাওয়ার এ বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে চলে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির দুর্বলতার সুযোগ কাজ লাগিয়ে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত ভালো ফল করতে সক্ষম হয়েছে।


দৃশ্যত দেশে-বিদেশে জামায়াতকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসাবে চিহিৃত করে টিভি ক্যামেরার সমানে মৌখিকভাবে প্রচার চালিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। জামায়াত যে্ স্বাধীনতাবিরোধী ও উগ্র-সন্ত্রাসী সংগঠন সেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গণ গ্রহণ করলেও দেশের ভোটাররা তা যে গ্রহণ করেনি তার প্রমাণ পাওয়া গেল উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে।


যেখানে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসন পেতেই জামায়াতে ইসলামীর গলদঘর্ম হতে হয়েছে সেখানে গত পাঁচ বছরে জামায়াত সম্পর্কে এতো নেতিবাচক প্রচারের পরও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যা্ন পদে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করে জামায়াত সবাইকে তাক লগিয়ে দিয়েছে।


এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ভালো করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে । কোথাও আবার জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে বলে ভালো ফল করেছে। তবে প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভুল রাজনীতির কারণে জামায়াত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


তিনি বলেন, ভারতের পত্রিকা ‘দ্যা হিন্দু’ এই কারণকে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যা খুবই যুক্তিপূর্ণ।


দুই দফা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতও বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়েছে। চেয়ারম্যান পদে বড় দুই দলের ধারে কাছে যেতে না পারলেও ভাইস চেয়াম্যান পদে জামায়াতে ইসলামী ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে।


সর্বশেষ দ্বিতীয় দফা উপজেলা নির্বাচনে ১১৫টি উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চেয়ে আসন বেশি পেয়েছে জামায়াত। দলটির মহিলা নেতৃ্ত্ব নেই বললেই চলে, কিন্তু তারপরেও তারা দ্বিতীয় দফায় ৯ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছে। 


জামায়াতের এই সাফল্যের বিষয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারণা জনগণ বিশ্বাস করে না। এজন্য গ্রাম-গঞ্জের মানুষ সরকারের কথায় কান দেয়নি। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফেরদৌস হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফের ডটকমকে বলেন, সরকার যা প্রচার করে মানুষ তা বিশ্বাস করে না বলে জামায়াতকে ভোট দেয়। দলটির বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা জনগণ গ্রহণ করেনি তা উপজেলা নির্বাচনে স্পষ্ট হয়েছে।


তিনি বলেন, সবগুলো মিডিয়া জামায়াতের বিরুদ্ধে বলেছে, সব বুদ্ধিজীবীরাও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তার একটাই কারণ সরকারকে জনগণ প্রতারক হিসেবে গ্রহণ করেছে।


উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলে জানা যায়, প্রথম দফায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৭টি এবং দ্বিতীয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৪টি (ওই দিন এর বাইরে একটির নির্বাচন স্থগিত হয়) উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর বাইরে রংপুরের পীরগঞ্জে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।


এসব উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি এককভাবে ৬৭টিতে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০৪টিতে জয়ী হয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৫টিতে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯টি জয়ী হন।


অপরদিকে আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬০টিতে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯টি পদে জয়ী হয়েছে।


সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৫টি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৬৬টি উপজেলায় জিতেছে। জামায়াতে ইসলামী জিতেছে যথাক্রমে ৩২টি ও ৯টিতে।


আওয়ামী লীগ ভাইস চেয়ারম্যান পদে জিতেছে ৩০টিতে ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২টিতে। অর্থাৎ শেষ দফায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চেয়েও জামায়াত বেশি উপজেলায় জিতেছে।


সবমিলিয়ে দুই দফায় অনুষ্ঠিত ২১২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই শ্রেণীর ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭১টিতে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ১২৯টিতে জয়ী হয়েছেন। জামায়াত জিতেছে ৭৪টিতে।


(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/এএসএ/ এআর/ ঘ.)