ঢাকা: উপজেলা নির্বাচনের পরপরই সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন। বাকি আর মাত্র এক মাস। শনিবার রাজবাড়ীর এক সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানের পর প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি কি আসলেই সরকার বিরোধী আন্দোলন বা সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত? সাংগঠনিকভাবে বিএনপির দুর্বলতার কথা কম বেশি খালেদা জিয়া নিজেও জানেন। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য করণীয় নির্ধারণও করে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে গতি পচ্ছে না মোটেই। এই নিয়ে দলের মধ্যেই নানা কথা বার্তা শুরু হয়েছে। আর এরই মধ্যে মাত্র এক মাস সময় দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।
গত সাধারণ নির্বাচনের পর দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ সব বৈঠকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে বহু আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। দলের সর্বস্তরে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তও হয়েছে। দল পুনর্গঠনের মধ্যদিয়ে পরীক্ষিত নেতাদের সামনে নিয়ে আসার জোর তাগিদও দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে পুনর্গঠন করার ব্যাপারে পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু দল পুনর্গঠনের বিষয়টিও সামনে আগাচ্ছে না। অদৃশ্য সুতার টানে কোথাও আটকে আছে বলেই মনে হচ্ছে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি কি সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত?
সবার আগে ঢাকা মহানগর কমিটি ও ছাত্রদলকে গোছানোর উপর জোর দেয়া হয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এক মাসের মধ্যে ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের জন্য হুঙ্কার ছাড়া হয়। কিন্তু এক মাসের নির্ধারিত সময় প্রায় শেষ হতে চললো কমিটি গঠনের বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপিকে রাজপথ গরম করতে হলে সবার আগে দলকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিএনপির বর্তমান কমিটি যে ব্যর্থ তার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন গত পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলনেই।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকাটাইমসকে জানান, বর্তমানে বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো সরকারবিরোধী আন্দোলনে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেই। একই সাথে বর্তমান কমিটিগুলোর মেয়াদও উত্তীর্ণ। যার ফলে বেগম খালেদা জিয়াসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা সহযোগী সংগঠনগুলোকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে চিন্তা-ভাবনা করছেন। খুব শিগগির এই কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা হবে।
বর্তমানে বিএনপির সর্বস্তরে এক ধরণের স্থবিরতা বিরাজ করছে। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তিন তিন বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্তমান কার্যক্রম বিবৃতি আর সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করার জন্য প্রথমেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে পুনর্গঠনের অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ঢাকাটাইমসকে বলেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠন সভা-সমাবেশ ও কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে হয়। বিএনপি এ কাজে ইতোমধ্যেই হাত দিয়েছে। কিন্তু সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হবে।
জানতে চাইলে এই বিষয়ে ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন উজ্জ্বল ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের কমিটিগুলো কবে পনর্গঠিত হবে সেটা নির্ধারণ করবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি। যদিও ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে কিন্তু ছাত্রদল এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
বিএনপির প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও দলের পক্ষ থেকে পুনর্গঠনের কোন প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন- জাসাস’র সভাপতি এম এ মালেক এই ঢাকাটাইমসকে বলেন, দলকে ঢেলে সাজাতে এবং নতুন নেতৃত্বের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তা সত্ত্বেও দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
একই বিষয়ে মৎসজীবী দলের এক নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত তিন মাস ধরে চলা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতই সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারাও রাজপথে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তারা আন্দোলন করার চাইতে পুলিশের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায়ই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। ফলে সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক আন্দোলন হলেও রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে কার্যকর আন্দোলন হয়নি। ফলে সরকারেরও পতন ঘটেনি। এখন সেই সব নেতাদের বিদায় এবং নতুন নেতৃত্ব সময়ের দাবি। তাই আমরা চাই বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটির পুনর্গঠনের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও পুনর্গঠিত হোক।
(ঢাকাটাইমস/০২ মার্চ/কেএস/এআর)