logo ০২ মে ২০২৫
ফরমালিন ঠেকাতে বাজারে মেশিন বসিয়ে খালাস

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
০৫ এপ্রিল, ২০১৪ ১০:৩৩:১৬
image

ঢাকা: খাদ্য পণ্যে ভেজাল ঠেকাতে ফরমালিন ডি-হাইড্রেড মেশিন বসিয়েই খালাস এফবিসিসিআই। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ডেকে মেশিনে বসিয়ে দেয়ার পর আর খোঁজও নেয়াও হয়না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজধানীর যেসব বাজারে মেশিন বসানো হয়েছে সেগুলোতে খাদ্য পণ্য ঢোকার পর তা নিয়মিত চেকও করা হয়না। বাজার কমিটি এর তদারকির দায়িত্বে থাকলেও তা ঠিকভাবে মনিটরিং করা হয় না।  রাজধানীর মানুষকে ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এই  শীর্ষ সংগঠনটি। একে একে বেশ কয়েকটি বাজারকে ফরমালিনমুক্ত ঘোষণা করা হলেও। মেশিন বসানোর পর থেকে ঠিকমতো তদারকি না করার ফলে মেশিন থাকলেও তা ঠিকমতো ব্যবহার হয়না অনেক বাজারে। রাজধানীর মালিবাগ, গুলশান-২, বনানী, উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজার, শান্তিনগর বাজার ঘুরে জানা গেছে মেশিনটি ব্যবহার হয় শুধু ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর‌্যন্ত। তবে মালিবাগ কাঁচাবাজারে ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, ফরমালিন মাপার মেশিন কোথায় আছে সেটাই জানেন না তারা। কোনো দিন দেখননিও তারা। আবার এই সম্পর্কে নেই কোন প্রচারণা।


শান্তিনগর বাজারের ক্রেতা মানঞ্জুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলাম এইবাজারে যে ফরমালিন মাপার যন্ত্র আছে তা জানেন কিনা? তিনি বলেন, ‘এটা আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। অনেক দিন ধরেই এই বাজারের আসি কখনোই ব্যবহার করতেই দেখিনি’।


তবে বিক্রেতারা বলেন, তাদের পণ্যে কোন ফরমালিন নাই। এই বাজারে ফরমালিনযুক্ত কোন পন্যই আসেনা। আর এ কারণে তাদের বাজারে এই মেশিনের ব্যবহারের দরকার হয়না। এফবিসিসিআ্ই’র সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। ব্যাপারটা আমি দেখছি।ইতিমধ্যেই রাজধানীর


মগবাজার কাঁচাবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, গুলশান-২ কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, মালিবাগ বাজার, উত্তরার আজমপুর, বনানী কাচাঁবাজার,কাপ্তান বাজার, মিরপুর-১, নিউমার্কেট বনলতা, বাদামতলী, শাহ আলী সিটি কর্পোরেশন মার্কেটকে মরমালিনমুক্ত ঘোষণা করে সেখানে ফরমালিন ধরার জন্য ফরমালিন ডি-হাইড্রেড মেশিন বসানো হয়েছে।


স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, খাদ্যপণ্যকে ফরমালিনমুক্ত রাখতে পরীক্ষা করে পণ্য বিক্রি করার কথা থাকলেও তা বেশিরভাগ সময়ে মানা হচ্ছে না। ফরমালিন মুক্ত ঘোষণার খবর পেয়ে এসব বাজারে ক্রেতাদের ভির বাড়লেও কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত ক্রেতারাও। মেশিন বাসানোর পর এ নিয়ে বাজার কমিটি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের কোনো তৎপরতাই চোখে পড়ছে না।


এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও ফরমালিনমুক্ত বাজার কমিটির আহ্বায়ক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এই কাজটা করছি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। এর জন্য আমারা কাউকে কোনো টাকা দিচ্ছিনা।সব বাজার কমিটি নিজ উদ্যেগে এর ব্যবহার করছেন।তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ সব বাজারে যদি পণ্যের নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা করা না হয় তাহলে মেশিন ফেরত নেবো’।


 


 


তিনি আরো বলেন,‘এসিড নিক্ষেপের আইনের মত ফরমালিন বিরোধী আইনও কঠোর করা উচিত। আর আইনের আওয়াতায় কয়েকজনের শাস্তি হলেই এর ব্যবহার বন্ধ হবে’।


 


পিওর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ অনুযায়ী খাদ্যপণ্যে ফরমালিনের ব্যবহার ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এ আইনের প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই ব্যবসায়ীদের। সাধারণ বাজারগুলোতে প্রায়ই বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফরমালিন পাওয়া যাচ্ছে।


 


কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া ঢাকাটাইসনকে বলেন, ‘সরকার এবং এফবিসিসিআইকে যৌথ উদ্যেগ নিলে এটা আশানূরপ ফলাফল আশা করা যায়’।


 


সরেজমিনে কয়েকটি বাজার


 


শান্তিনগর বাজার: সরেজমিনে গত ১৪ ও ১৬ মার্চ মঙ্গলবার শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফরমালিনমুক্ত আদর্শ বাজার হিসাবে ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই সেখানে ক্রেতার ভিড় বাড়ছে। দোকানিরা উৎসাহের সঙ্গে মাছ বিক্রি করছেন।অথচ ফরমালিন মাপার মেশিনটি প্রায় সবসময়ই থাকে তালাবদ্ধ। বিক্রির সময় ক্রেতা যদি মনে করে তাহলে তা মাপার কোনো ব্যবস্থা নেই।ফরমালিনমুক্ত বাজার ঘোষণার সময় মেশিন বাজার কমিটির যে অফিস কক্ষে রাখা হয়েছিল সে যেখানেই রাখা আছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে সেটি আদৌ সচল আছে কি না তা জানারও সুযোগ পাওয়া গেল না।


বাজার কমিটির অফিস সহকারী মুনির জানান ফরমালিন মাপার যন্ত্রটি মাছ বাজারের পাশে আমাদের যে অফিসটি রয়েছে সেখানে থাকে। তবে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে অফিসটি বন্ধ নেই কেউ। পরের দিন শুক্রবার দুপুরে গেলে মাছ বিক্রেতারা বলেন, প্রত্যেক দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর একটা পর‌্যন্ত এই অফিস খোলা থাকে। তবে রবিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গিয়ে দেখা মেশিনটি তালাবদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাজারে সবসময় ফরমালিন টেষ্ট করা হয় না। প্রথম প্রথম বাজারে ফরমালিন টেষ্ট করা।


মালিবাগ বাজার: এ বাজারকে এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম ফরমালিনমুক্ত আদর্শ বাজার ঘোষণা করা হয়। গত ১৭মার্চ মালিবাগ বাজার ঘুরে দেখা যায়, এ বাজারে নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়, পরীক্ষা করার জন্য টেকনিশিয়ান রয়েছেন। মাছ ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, সকালে পরীক্ষা করা ছাড়া কোনো পণ্য বাজারে ঢুকতে দেওয়া হয় না। ফরমালিন পাওয়া গেলে তা পাইকারি বাজারে ফেরত দেয়া হয়। এ বাজারের ক্রেতা চৌধুরীপাড়ার ওসমান গণির সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বিশ্বাস করে কিনতে হচ্ছে। কতটা ফরমালিন মুক্ত তা নিশ্চিত নয়। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। নিয়মিত ফরমালিন পরীক্ষা করা হয় বলে জানি, এ কারণেই বিশ্বাস করে পণ্য কিনছি, জানান তিনি।

 


বনানী কাঁচাবাজার: বাজারের ফরমালিন চেকার জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান ‘সকালে মাছ বাজারে ঢোকার সময়ই পণ্য পরীক্ষা করা হয় নিয়মিত। মেশিনটি একটি নির্দিষ্ট দোকানে থাকে, কারো সন্দেহ হলেই তিনি পণ্যটি পরীক্ষা করে নিতে পারেন।


গুলশান কাঁচাবাজার:  ২০১২ সালের ১৬ই নভেম্বর গুলশান কাঁচাবাজারকে ফরমালিন মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ব্যবসায়ীরা জানান প্রত্যেকদিন ভোর থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত মাছে ফরমালিন রয়েছে কি না তা পরীক্ষার পর বাজারে ঢুকতে দেয়া হয়। এছাড়া অন্য যে কোনো সময়ে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে।


জানা যায়,গুলশান কাঁচাবাজারের ফরমালিন শনাক্তকরণ মেশিন পরিচালনা ও সার্বিক তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় সহসভাপতি এমএ মালেকের ওপর। তিনি এখন এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবরই রাখেন না।


 


তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পরীক্ষা করি’। আপনাদের অফিস বন্ধ কেন ? তিনি বলেন, আমরা সবাবই ব্যবসা করে থাকি। তাই আমাদের সব সময় সেখানে থাকা সম্ভব নয়।

 


(ঢাকাটাইমস/ ০৫এপ্রিল/টিএ/এআর/ ঘ.)