logo ০১ মে ২০২৫
অডিটর পদে চাকরি নিতে ১০ লাখ টাকা ঘুষ!
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
১১ মে, ২০১৪ ১৯:০৩:২৮
image


ঢাকা: অডিটর পদে চাকরি নিতে গুনতে হয়েছে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা। আর ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় মিলেছে জুনিয়র অডিটরের চাকরি। এমএলএসএস পদের জন্য দিতে হয়েছে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স অফিসে এই তিন পদে নিয়োগে এমন হরিলুটের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আছে, ওই অফিসের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে হয়েছে এসব নিয়োগ- বাণিজ্য। এছাড়া নিয়ম অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ৬ মার্চ তিনটি পদের বিপরীতে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে কয়েকদিনের মধ্যেই নিয়োগপত্র বিতরণ করা হবে।

নিয়োগের বাণিজ্যের অভিযোগ এনে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্টে রিট করেছেন ভুক্তভোগী আমানুল হক ও বাদল মোল্লা। ২৭ মার্চ বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. হাবিবুল গনির বেঞ্চ কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এর জবাব চাওয়া হয়েছে ওই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত সাতজনের কাছে।

তারা হলেন- প্রতিরক্ষা সচিব, অর্থ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, কন্ট্রোলার জেনারেল (ডিফেন্স ফাইন্যান্স), জয়েন্ট কন্ট্রোলার এবং ডেপুটি কন্ট্রোলার। কেন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার কারণ জানানোর জন্য ১৫ দিনের সময়ও বেঁধে দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স অফিসে অডিটর পদে ২১১ জন, জুনিয়র অডিটর পদে ১৩৪ জন এবং এমএলএসএস পদে ৬২ জনকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অডিটর, জুনিয়র অডিটর ও এমএলএসএস পদে নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। চাকরির শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে নির্দিষ্ট পদের বিপরীতে চাকরি পেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স (ফাইন্যান্স) মাহতাব উদ্দিন এবং ডেপুটি কন্ট্রোলার ডিফেন্স (ফাইন্যান্স) সোহেল আহমেদ জড়িত। মূলত তাদের তত্ত্বাবধানেই এসব নিয়োগ-বাণিজ্য হয়েছে।

অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিজি প্রেসে না ছাপিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রেস থেকে ছাপা হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করেছেন সোহেল আহমেদ। অভিযোগ আছে, পরীক্ষার আগেই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লিখিত পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদেরও টাকার বিনিময়ে বেশি নম্বর দেখানো হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও টাকার বিনিময়ে মৌখিক পরীক্ষায় গিয়েছেন এবং চাকরি পেয়েছেন অনেকেই। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের কোনো নিয়োগ চূড়ান্ত করার এখতিয়ার একমাত্র কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্সের (ফাইন্যান্স) রয়েছে। অথচ নিয়ম না মেনেই ভারপ্রাপ্ত কন্ট্রোলার জেনারেল মাহতাব উদ্দিন নিজের মনগড়া এ নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছেন। এছাড়া এমএলএসএস পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জেলা কোটাও অমান্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানতে চাইলে ডেপুটি কন্ট্রোলার ডিফেন্স (ফাইন্যান্স) সোহেল আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাইকোর্ট তো সরকারের একটি অংশ। সেখান থেকে আরেকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এসব ভুল তথ্য। আর আমরা এখনও এ ধরনের কোনো রিটের কাগজপত্র পাইনি। তবে খুব সামান্য বিষয় নিয়ে একটি উকিল নোটিশ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এর জবাব দেব।’

বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে এক করে দেখছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিচারপতিরা তো সরকারের কোষাগার থেকে বেতন নেন। তারা তো সরকারের অধীনেই আছেন।’

সোহেল আহমেদ দাবি করে বলেন, ‘কোনো চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছি এটা কেউ বলতে পারবে না। তাছাড়া প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়েছে ছাপাখানায়, বাসায় বসে প্রিন্টারে এত প্রশ্ন ছাপানো কি সম্ভব?’

(ঢাকাটাইমস/১১মে/এইচএফ/ এআর/ ঘ.)