logo ০১ মে ২০২৫
ইলিয়াস পত্নী রাজনীতিতে: আইনি প্রশ্ন
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৩ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:১৫:৩৩
image

ঢাকা: বিএনপি নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার অভিষেক হয়েছে রাজনীতিতে। ১৫ এপ্রিল সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক নম্বর সদস্য হয়েছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা হয়ে তাহসিনা রুশদীর লুনার রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়া আইনসম্মত কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে ।


আইন অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এমনটি হলে তাদের চাকরি থাকার কথা নয়। অবশ্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য কি না এ নিয়ে কথা আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে রাজনীতিতে জড়ানোর বিষয়ে কিছুটা ছাড় দেওয়া থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটা পারেন কি না এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পর্যায়ে।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিজানুর রহমান যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী বিকল্প ধারার সভাপতিম-লীর সদস্য। কিন্তু কর্মকর্তাদের কোনো দলের সরাসরি সদস্য হওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেনি।


ইলিয়াস পত্নীর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আইনি বাধা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আমরা তাহসিনা রুশদীর লুনার বিষয়টি নিয়ে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখছি।’ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিষয়ে ছাড় দেওয়া থাকলেও কর্মকর্তাদের বিষয়টি এখনও ওইভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি।’


জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ফারহানা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় ১৯৭৩ সালের অর্ডিনেন্স- এর আলোকে। সেখানে কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো কিছু স্পষ্ট করে বলা নেই।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও আইন উপদেষ্টার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করা অবস্থায় রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাহসিনা রুশদীর লুনা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিনেন্স অনুযায়ী কর্মকর্তাদের রাজনীতি করার বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি।  এক্ষেত্রে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সমান সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্মকর্তারাও রাজনীতি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কিছু কর্মকর্তা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু এসব করে তারা সফল হতে পারবেন না।’


রাজনীতিতে ইলিয়াসপত্নীর আনুষ্ঠানিক অভিষেক হলেও হাতেখড়ি অবশ্য আগেই হয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের পর মানুষের দৃষ্টি ছিল লুনাকে ঘিরে। স্বামীর দল বিএনপির নানা কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর নিখোঁজ নিয়ে কথা বলেছেন। তবে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে তিনি সিলেট জেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন সক্রিয়।  


উপজেলা নির্বাচনে রাজনীতির প্রথম পরীক্ষায় সফলই বলা যায় ইলিয়াসপত্নীকে। নিজ এলাকা বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে দল সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে ভূমিকা রেখেছেন লুনা।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহসিনা রুশদীর লুনা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথে আমাকে প্রার্থী নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি তা পালন করেছি। প্রার্থীদের ভোট দিতে ভোটারদের কাছে গেছি। তারা আমার কথা শুনেছেন আর সেজন্য আমাদের সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন।’


সদর উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী সমর্থন নিয়েও লুনার পছন্দকেই গুরুত্ব দেয় বিএনপি। এই উপজেলায় আবুল কাহের শামীমের পক্ষে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী। তাকে প্রথম সমর্থনও দেয়। কিন্তু তাহসিনা রুশদীর লুনা ছিলেন শাহ জামাল নুরুল হুদার পক্ষে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি সিদ্ধান্ত পাল্টে হুদাকেই সমর্থন জানায়। অবশ্য এখানে জিততে পারেননি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। সদরে বেশ সহজেই জিতেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আশফাক আহমেদ।


(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/এমএম/এএসএ)