ঢাকা:‘পাপ বাপকে ছাড়ে না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে যত অপরাধ করেছেন তার শাস্তি তো সবেমাত্র শুরু। এত বিতর্কিত একজন লোক কীভাবে দলের গুরুত্বপূর্ণ একটি ছিলেন তা চিন্তাতীত।’ জাতীয় পার্টির সদ্য সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে নিয়ে বলছিলেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ এক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতার মতে, জাতীয় পার্টির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই রুহুল আমিন হাওলাদারের কর্মকা-ে অসন্তুষ্ট। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনও এরই মধ্যে হাওলাদারের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছে। তা ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেপরে তার অবস্থান নিয়েও বিতর্ক আছে।
গত ১১ এপ্রিল এক চিঠিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মহাসচিব পদ থেকে রুহুল আমিন হাওলাদারকে অব্যাহতি দেন। একই সঙ্গে দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব পদে বসান। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১২ বছর পর এসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে পরিবর্তন এলো।
মহাসচিব পরিবর্তনের চিঠিতে কোনো কারণ না বলা থাকলেও জাতীয় পার্টির একটি সূত্র জানায়, রুহুল আমিন হাওলাদারের কর্মকা-ের দলের হাইকমান্ড এরশাদও অসন্তুষ্ট। তা ছাড়া হাওলাদারের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য মন্তব্যে তিনি রীতিমতো ক্ষুব্ধ। দলের মধ্যে আলোচনা আছে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এরশাদ যখন নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তখন দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকার পরও নিজের মনোনয়নপত্র তুলে নেয়নি হওলাদার। বরং গোপনে যোগাযোগ রেখেছেন দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের সঙ্গে। ওদিকে এরশাদকে কখনোই তা বুঝতে দেননি। রুহুল আমিন হাওলাদারের এই দ্বিমুখী আচরণ মোটেও ভালোভাবে নেননি এরশাদ। তাই অনেক দিন ধরেই তাকে সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছিলেন তিনি।
এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, হাওলাদারকে বাদ দেওয়া এবং সরকারঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব পদে বসানোর ব্যাপারে রওশন এরশাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন এরশাদ। এ সময় নির্বাচনের সময় হাওলাদারের একূল-ওকূল দুই কূল রক্ষার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। এটিকে একধরনের প্রতারণা বলেও মন্তব্য করেন এরশাদ। সূত্র আরো জানায়, গত পাঁচ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে জমি দখল ও সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে রুহল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদেও বাইরেও শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক সাবেক এই বিমানমন্ত্রী। দুদক ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানও পরিচালনা করছে। এ ছাড়া দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে পদ দেওয়া, পকেট কমিটি করা এবং নিজের পছন্দের ব্যক্তির বাইরে অন্য কাউকে পাশে ভিড়তে না দেওয়ায় দলের নেতা-কর্র্মীদের মধ্যে রুহুল আমিন হাওলদারকে নিয়ে ক্ষোভের অন্ত ছিল। এর আগেও প্রকাশ্য সভায় হাওলাদারকে কটাক্ষ করে বক্তৃতা-বিবৃতিও দিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি একাধিকবার দলের চেয়ারম্যানের কানেও দিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। সবশেষ জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করতে এবং ‘বিতর্কিত’ হাওলাদারকে শায়েস্তা করতেই এরশাদ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে রুহুল আমিন হাওলাদারের দাবি, কোনো অনিয়ম বা অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই দলের চেয়ারম্যান মহাসচিব পদে পরিবর্তন এনেছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। বরং সম্পর্ক আগের মতোই আছে।
মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে যখন যে দায়িত্ব দেবেন তখন আমি তা পালন করব। আমি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেই দায়িত্ব পালন করে যাব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকাটাইমসকে জানান, দলের চেয়ারম্যান দলীয় কোনো সিদ্ধান্তে রুহুল আমিন হাওলাদারকে আর রাখতে চান না। সাম্প্র্রতিক সময়ে হাওলাদারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জোরালো হওয়ায় এরশাদ হাওলাদারের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। তিনি চান না হাওলাদারের কারণে ভবিষ্যতে আর কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে।
তবে হাওলাদারের অনুসারী-অনুগামীরা বলছেন, জাতীয় পার্টির সরকার ঘেঁষা অংশ আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মহাসচিব পদে পরিবর্তন এনেছে। পার্টির চেয়ারম্যানও বুঝতে পারছেন, বর্তমান সরকার পুরো পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। এই সময় সম্মান ও অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। এ ছাড়া অন্য কোনো কারণ নেই।
(ঢাকাটাইমস/ ১৬ এপ্রিল / এইচএফ / ঘ.)