logo ০২ মে ২০২৫
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ বহিষ্কৃতদের
কিরণ সেখ, ঢাকাটাইমস
০৭ এপ্রিল, ২০১৪ ২১:০৬:৩৩
image


ঢাকা: সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেয়ে প্রার্থী হিসেবে থেকে যাওয়াদের একটি অংশকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তবে কেন সবাইকে বহিষ্কার না করে কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে দলের ভেতরে। জানা গেছে, প্রার্থী সমর্থন এবং ঘুষ না দিলে বহিষ্কারের মতো গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। যদিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এসব অভিযোগ স্বীকার করতে চান না।

দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত দুই মাসে বিএনপি বহিষ্কার করেছে ৬৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে। দলের পক্ষ থেকে এর কারণ হিসেবে দলীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনার কথা বলা হলেও বহিষ্কৃত নেতারা একে ‘টাকার বাণিজ্য’ বলে অভিযোগ করেছেন।

একজন বহিষ্কৃত নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে কেন্দ্র থেকে আমাকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের কয়েকজন নেতা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সমর্থন দিয়েছেন অন্য একজনকে। কিন্তু তাকে মানা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।’

আরেক বহিষ্কৃত নেতা বলেন, জেলা কমিটির নেতা-কর্মীরা এবং স্থানীয় জনগণ আমাদের সমর্থন দিলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সমর্থন দেয়নি। তারা  মোটা অঙ্কের টাকায় উপজেলা প্রার্থী বাছাই করেছেন। কেবল আমার উপজেলায় নয়, আশপাশের অন্য উপজেলাগুলোতেও একই ঘটনা ঘটেছে।’

প্রার্থী সমর্থন নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধের প্রভাব দেখা গেছে বিভিন্ন উপজেলায়। নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা এবং বরিশালে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান আছে এমন বেশ কিছু উপজেলায় সরকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ উঠলেও বাধা দিতে পারেনি বিএনপি সমর্থকরা। অথচ যেসব এলাকায় জামায়াত সমর্থিতরা নির্বাচন করেছে সেসব এলাকায় একাট্টা থেকে তারা সরকার সমর্থিতদেরকে কারচুপির চেষ্টা করতে দেয়নি।   



রাজশাহী জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বহিষ্কৃত নেতা ডি এম জিয়াউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রার্থী সমর্থন দিয়েছেন। আর আমি এই অন্যায় মানিনি বলে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একে বহিষ্কার না বলে ঘুষ বাণিজ্য বললেই ভালো হয়।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বিএনপি সমর্থন দেয় মাকসুদুর রহমানকে। তাকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জিয়াউর রহমানের। আর এই সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনী লড়াইয়ে থেকে যান জিয়াউর রহমান। আর এই দুই প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগিতে সেখানে জিতে যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।

এ বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার সেলফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বহিষ্কৃত নেতা আলী আহমেদও ঢাকাটাইমসের কাছে ঘুষের বিনিময়ে প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেই বহিষ্কার যে টাকার বিনিময়ে করা হয়েছে সেটা এখন না বলাই ভালো। কারণ উপজেলা নির্বাচন এখন শেষ হয়েছে। আর আমিও দলকে ভালোবাসি। তাই এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না।’



বহিষ্কার এবং অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি অবগত নই। এবং আমাকে দলের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। তাই বহিষ্কার এবং অর্থ লেনদেন নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জেলার নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন এবং সেই অভিযোগের বিচার বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট।’

যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে

সবচেয়ে বেশি বহিষ্কৃত হয়েছে ময়মনসিংহে, সব মিলিয়ে আটজন। এরা হলেন  নান্দাইল উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল খায়ের বাবুল, উত্তর জেলার পুরাকান্ডলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুল হক, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুর রশিদ মজনু, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম বাবুল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনুজ্জামান রুবেল, জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক শামসু এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ইফতেখার আলম শামীম।

পাশের জেলা নেত্রকোনায় বহিষ্কার হয়েছেন তিনজন। এরা হলেন মদন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের আজাদ, অর্থ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আকন্দ এবং খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ স্বাধীন।

ফরিদপুরে বহিষ্কার হয়েছেন পাঁচজন। এরা হলেন চরভদ্রাসন উপজেলা বিএনপির সদস্য বাদল আমিন, ছাত্রদল নেতা বোয়ালমারী উপজেলার খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, এ কে এম জামালউদ্দিন নান্নু মিয়া, শহীদুল হক মন্টু এবং রফিকুল ইসলাম লিটন।

মানিকগঞ্জে বহিষ্কার হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল হাশেম বিশ্বাস দুদু মিয়া এবং সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সদস্য আবিদুর রহমান খান রোমান।

সিলেটে বহিষ্কৃত হয়েছেন ছয়জন। এরা হলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহম্মেদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুল হুদা, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এমরান আহম্মেদ চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি আহবায়ক কমিটির সদস্য নাসিরুল হক শাহীন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতা মো. শাহাবুদ্দিন  এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম ফয়েজ।

হবিগঞ্জে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাহিদ আলম মুরাদ এবং নবীগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম।

চট্টগ্রামে বিএনপি বহিষ্কার করেছে চারজন। এরা হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য নুরুল মোস্তফা খোকন, সন্দ্বীপ পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম শাহীন।

ফেনীতে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনজন। এরা হলেন সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির নেতা আলমগীর হোসেন চৌধুরী, দাগনভূঁইয়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবুল হাশেম বাহাদুর এবং পরশুরাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব।

লক্ষ¥ীপুরে বহিষ্কৃত হয়েছে দুইজন। এরা হলেন কমলনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন এবং রায়পুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদরুল আলম জিন্নাহ।

কক্সবাজারে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ এবং কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার হাবিব উল্লাহ।

বরিশালে বহিষ্কৃত হয়েছেন চারজন। এরা হলেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন, সহ-সভাপতি আসাদ মাহমুদ, বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান নান্নু ও অর্থবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান মাসুদ।

ঝালকাঠিতে বহিষ্কার করা হয়েছে চারজনকে। এরা হলেন জেলা বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল জলিল মিয়াজী, কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল আকন, সদর উপজেলা যুবদল সভাপতি শওকত হোসেন খোকন এবং জেলা যুবদল সদস্য শহীদুল ইসলাম।

পটুয়াখালীতে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন কুয়াকাটা পৌর বিএনপির  ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ মিয়া এবং দুমকী উপজেলার মুরাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জু।

রাজশাহীতে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন। এরা হলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডি এম জিয়াউর রহমান এবং গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপি নেতা হযরত আলী।

এছাড়া বেশ কিছু জেলায় বহিষ্কৃত হয়েছেন একজন করে। ঢাকা বিভাগে কিছু জেলায় একজন করে বহিষ্কৃতরা হলেন গাজীপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আব্দুল লতিফ, কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ সেলু এবং মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির সদস্য নাজমুল হুদা মিঠু।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য রমিজ উদ্দিন, বান্দরবানে জেলা বিএনপির ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, রাঙামাটি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বিএনপির সদস্য ফয়েজুল আজিম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী বহিষ্কৃত হয়েছেন।

খুলনা বিভাগের কিছু জেলায় একজন করে বহিষ্কৃতরা হলেন খুলনা মহানগর বিএনপির সহসভাপতি শেখ ইকবাল হোসেন, মাগুরার শালিখায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিল্টন, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য আলতাফ হোসেন, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা মহিলা দল নেত্রী ফারহানা আক্তার রিনি।

রংপুর বিভাগের কিছু জেলায় একজন করে বহিষ্কৃতদের মধ্যে আছেন লালমনিরহাট বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবুল এবং দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক পারুল নাহার বেগম।

এছাড়া সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলা বিএনপির নেতা কামরুজ্জামান কামরুল, পাবনার ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুও বহিষ্কৃত হয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭এপ্রিল/কেএস/এআর)