ঢাকা: মানব পাচারসহ নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার কারণে সৌদি সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ৪৬টি হজ এজেন্সিকে প্রাথমিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযোগের বিপরীতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সৌদি সরকারের কাছে জবাবও দিয়েছে এজেন্সিগুলো। সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হতে আগামি রমজান মাস পার হয়ে যেতে পারে। অথচ নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এজেন্সিগুলো হজে লোক পাঠানোর কাজ যথারীতি চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
হজযাত্রী সংগ্রহ করছে কালো তালিকার এজেন্সি
নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন এখলাছ উদ্দিন। এ বছর অবসরে গেছেন। ভাবছেন সামনের মৌসুমে হজ করবেন। এক নিকট আত্মীয়ের দেওয়া ঠিকানা মতো যোগাযোগ করেন ‘এখলাছ কাবা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এ।’ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদ উল্লাহ চৌধুরী জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য অনুযায়ী সর্বনি¤œ ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকায় হজে পাঠাতে পারবেন তিনি।
এখলাছ উদ্দিনকে পাসপোর্টসহ খিলগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন এরশাদ উল্লাহ। পরে তিনি তার এক পরিচিত জনের মাধ্যমে জানতে পারেন, সৌদিতে হজের নামে মানব পাচারের অভিযোগে জেয়ারতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে গত বছর ১৫০ জনকে হজের জন্য মক্কায় পাঠানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে ১৯ জন আর দেশে ফেরেনি। তারা এখনো অবৈধভাবে সেখানে আছেন।
মানব পাচারসহ নানা অভিযোগের কারণে সৌদি সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ৪৬টি হজ এজেন্সিকে প্রাথমিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অভিযোগের বিপরীতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সৌদি সরকারের কাছে জবাবও দিয়েছে এজেন্সিগুলো। সৌদি সরকারের নিয়ম অনুযায়ী এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হতে আগামি রমজান মাস পার হয়ে যেতে পারে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তাই এ বছর হজ বা ওমরাহ করতে বিদেশে লোক পাঠাতে পারবে না এজেন্সিগুলো। গত বছর এসব এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালন করতে গিয়ে মোট ২৬২ জন বাংলাদেশি সৌদিতে অবৈধভাবে রয়ে গেছেন।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন হজে লোক পাঠানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন? জানতে চাইলে জেয়ারতে কাবা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস-এর মালিক এরশাদ উল্লাহ চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি পাঠাতে না পারলেও অন্যদের মাধ্যমে পাঠাব।’ হজে লোক পাঠাতে পারবেন না জেনেও কেন লোকজনের কাছ থেকে পাসপোর্ট বা টাকা নিচ্ছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কেন, কেউ কি স্বীকার করবে যে তারা সরকারের কালো তালিকাভুক্ত? ব্যবসা করতে গেলে এতকিছু বাছ বিচার করা যায় না।’
টাকাটাইমসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কোনো হজ এজেন্সিই তা মানছে না। বরং যে যার মতো চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম। অনেকে এরই মধ্যে ঠিকানাও বদলে ফেলেছে। আবার যাদের একাধিক লাইসেন্স আছে তারাও ভিন্ন নামে চালিয়ে যাচ্ছে হজযাত্রী সংগ্রহের কাজ। এমনকি অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলো এখনো হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) তালিকা আছে বহাল তবিয়তে। তাই হাবের ওয়েবসাইট দেখে যদি কেউ এজেন্সি পছন্দ করতে চান তারও প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় হজে যেতে ইচ্ছুকরা জানতে পারছেন না কারা সরকারের কালো তালিকায় আছে।
এবার হজে যেতে ইচ্ছুক নাজমুল হক ঢাকাটাইমস বলেন, ‘কোন এজেন্সি বৈধ আর কারা অবৈধ- এ বিষয়ে জানার কোনো ব্যবস্থাও নেই। তাছাড়া লাইসেন্স বা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করলেও মালিক তো আর পরিবর্তন হচ্ছে না। সেই অসাধুরা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই যাচ্ছে। হজে যাওয়া নিয়েও যদি মানুষ পদে পদে প্রতারিত হন তবে ভরসা পাবে কোথায়?’
জানতে চাইলে হাবের সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার ঢাকাটাইমসকে বলেন, যেসব এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি সরকার অভিযোগ এনেছে তারা এগুলোর জবাব দিয়েছে। অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে হাব থেকেও তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হবে।
সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অভিযুক্ত ৪৬টি হজ এজেন্সির কোনোটি যদি হজযাত্রী সংগ্রহ করছে-এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সৌদি সরকারের চিঠিতে বলা হয়েছে, এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে তারা হজযাত্রী সংগ্রহ বা পাঠাতে পারবে না। সে হিসেবে ২০১৪ সালে তারা কোনো ব্যক্তিকে হজে পাঠাতে পারবে না। আর যাদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে।’
উপসচিব বলেন, ‘অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর ব্যাপারে সৌদি সরকার যে শাস্তি দেবে সেটাই কার্যকর করা হবে। শাস্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আপিলের সুযোগ থাকবে না।’
হজের নামে মানব পাচার
হজের নাম করে সৌদিতে মানব পাচারের অভিযোগ আছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের সঙ্গে শুরু থেকেই এ ধরনের চুক্তি থাকে তাদের। এ জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া খরচের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। পরে সৌদি পৌঁছার পর সুযোগ বুঝে এদেরকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসব লোকজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে অবৈধভাবে লুকিয়ে কাজ করেন। কেউ কাজ পান। আবার কেউ পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে যান।
রিক্রুটিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই অসাধুদের কারণেই রিক্রুটিং এজেন্সির লোকদের দুর্নাম হয়। মানুষ এদের জন্যই প্রতারণার শিকার হয়।’
২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৬২৮টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে ৮৭ হাজার ৭৫৪ নারী-পুরুষ হজ করতে যান সৌদি আরবে। হজ ও ওমরাহতে লোক পাঠানোর নামে মানব পাচার, হাজিদের কথা অনুযায়ী সেবা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া এবং সৌদি সরকারের নিয়ম না মানায় ৪৬টি এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এদের বেশির ভাগই নতুন লাইসেন্স পেয়েছে। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এদের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। সে অনুযায়ী ধর্ম মন্ত্রণালয় এই হজ এজেন্সিগুলোকে অভিযোগের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। একই সঙ্গে এদেরকে প্রাথমিকভাবে কালো তালিকাভুক্ত করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কালো তালিকাভুক্ত ৪৬টি এজেন্সির মধ্যে ক্যাসকাডি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস গত বছর ২১০ জনকে হজ পালনের জন্য সৌদি পাঠিয়েছিল। কিন্তু হজ শেষে ৯১ জন আর দেশে ফিরে আসেননি। হাবের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির হজ লাইসেন্স নম্বর ৭১৩। এর কার্যালয় ঢাকার নয়াপল্টনে শানজারি টাওয়ারে। প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। পরে ঠিকানা অনুযায়ী সেখানে গেলে সেখানে ক্যাসকাডি ট্রাভেলস ট্যুরস নয়, কার্যালয় পাওয়া গেছে শানজারি ট্রাভেলস-এর। যার হজ লাইসেন্স নম্বর ১৬০।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু হাজিদের সঙ্গে প্রতারণা বা সরকারি নিয়ম অমান্যই নয়, ক্যাসকাডি ট্রাভেলস-এর বিরুদ্ধে বিদেশে লোক পাঠানোর ক্ষেত্রে বিস্তর অভিযোগ আছে। সরকারের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পর যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিষ্ঠানটি নাম গোপনের কৌশল নিয়েছে। পরে হাবের ওয়েবসাইটে থাকা একটি নম্বরে ফোন করলে অপর প্রান্ত থেকে ক্যাসকাডি ট্রাভেলস নামে কিছু নেই বা চেনেন না বলে জানানো হয়।
একই ঠিকানায় ক্যাসকাডি ট্রাভেলস ছাড়াও জানুস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস নামে হাবের ওয়েবসাইটে আরেকটি এজেন্সির কার্যালয় দেখানো হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিও সরকারের কালো তালিকায় আছে। গত বছর তারা হজের জন্য ১৬৩ জনকে সৌদি পাঠিয়েছিল। কিন্তু ৫২ জন আর দেশে ফেরেননি। যোগাযোগ করা হলে ওই প্রতিষ্ঠানটিরও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে ল্যান্ডফোন নম্বরে কল করা হলে স্বপন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এটা জানুস ট্রাভেলস-এর কার্যালয় নয়।’ পরে ফোনটি কেটে দেয়া হয়।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস গত বছর ১০৮ জনকে হজের জন্য মক্কায় পাঠায়। কিন্তু সেখান থেকে ৭৪ জন হাজি আর দেশে ফেরেননি। প্রতিষ্ঠানটির অফিস ঢাকার মতিঝিলের বাণিজ্যিক এলাকায়। হজযাত্রী পরিচয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মিলন জানান, তারা এবারও হজে লোক পাঠাবেন। তিনি পাসপোর্ট ও ছবি নিয়ে অফিসে যেতে বলেন। পরে এই প্রতিবেদক পরিচয় দিলে ওই কর্মকর্তা জানান, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল এই ঠিকানায় নেই। তারা ওয়ার্ল্ড ট্যুর ইন্টারন্যাশনালে কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার তাজিয়া আহমেদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক শাহ মো. ইয়াছিনের সঙ্গে তাজিয়া আহমেদের আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। মূলত এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে খাতা-কলমে দুইজনকে দেখানো হলেও তারা একই পরিবারের।
সরকারের কালো তালিকভুক্ত এজেন্সির মধ্যে মুনিরা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস একটি। এই প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ২৩০ জনকে হজের জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ৪০ জন ফেরত আসেননি। এম এস ফিজা এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর নাম আছে সরকারের কালো তালিকায়। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ২৪৫ জনকে হজে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ফেরত আসেননি ১৩ জন। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় পুরানা পল্টনে।
কালো তালিকায় থাকার পরও হজে লোক পাঠানোর কার্যক্রম বন্ধ নেই তাদের। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও কেন লোক পাঠানোর কাজ করছেন জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক অংশীদার মোহাম্মদ সোহরাব হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার বিকল্প অনেক ব্যবস্থা আছে। লোক পাঠানো নিয়ে অসুবিধা হবে না।’
ফাহমিদ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসও আছে কালো তালিকায়। অথচ তারা হজে লোক পাঠানোর জন্য সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। গ্রাহকদের বুঝতে দিচ্ছেন না তারা কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। বরং কেউ প্রশ্ন করলে তাকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। গত বছর তারা ১৯৪ জনকে হজে পাঠালেও ফেরত আসেননি ৫ জন। প্রতিষ্ঠানটির যে ঠিকানা সরকারের কাছে দেওয়া আছে তা এরই মধ্যে বদলে ফেলা হয়েছে। নতুন কার্যালয় নেওয়া হয়েছে ফকিরাপুলে টয়েনবি সার্কুলার রোডের রহমান ম্যানশনে।
গ্রাহক পরিচয়ে কথা হয় মালিক মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। প্রথমে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন করে যান। কিন্তু পরে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও কেন লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছু কি আর নিয়মে চলে। টাকায় সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।’
মানব পাচারের অভিযোগ আছে এয়ার কানেকশান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর বিরুদ্ধে। গত বছর তারা ১১০ জনকে হজে পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরত আসেননি চার জন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে এয়ার কানেকশান ট্রাভেলস থেকেই হজে লোক পাঠানো হবে বলে জানান। কিন্তু পরে প্রতিবেদক তার পরিচয় দিলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।
রয়েল এয়ার সার্ভিসের কার্যালয় চট্টগ্রামে। এর মালিক মোহাম্মদ আবুল কাশেম। রয়েল এয়ার গত বছর ১০৫ জনকে হজে পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে ফেরত আসেননি তিনজন। প্রতিষ্ঠানটি এবারও হজে লোক পাঠানোর জন্য সব ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইমাম ট্রাভেলসের মালিক আবুল হোসেন। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর ৫৬ জনকে হজে পাঠিয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে দুই জন এখনো সেদেশেই আছেন।
যোগাযোগ করা হলে আবুল হোসেন জানান, এবার হজের সর্বনি¤œ ব্যয় ২ লাখ ৯০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পরও কেন হজে লোক পাঠানোর কাজ করছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই তো তাই করছে। আমি করলে ক্ষতি কি?’
ফার্স্ট ওয়ান ইন্টারন্যাশনাল গত বছর ৫৮ জনকে হজে পাঠালেও আসেননি দুইজন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুফতি তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এবারও তারা হজে লোক পাঠাবেন বলে জানান। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কথা বললে তিনি বলেন, ‘ঝামেলা মিটে যাবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।’
ইরানা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল গত বছর ১২২ জনকে হজে পাঠালেও ফেরত আসেননি পাঁচ জন। মেসার্স আল-জিয়া এয়ার ইন্টারন্যাশনাল গত বছর ৫০ জনকে হজে পাঠিয়েছিল। কিন্তু ফেরত আসেননি চার জন।
আরও যেসব এজেন্সি হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না
মানব পাচার ছাড়াও বেশকিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে আবাসন সমস্যা, কাগজপত্রে উল্লেখ করা হাজির বাইরে অতিরিক্ত হাজিকে একই বাড়িতে রাখা, ময়লা আবর্জনাময় জায়গায় হাজিদের রাখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। যার কারণে হাজিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বলে সৌদি থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ারও অনুরোধ করা হয়েছে।
সরকারের কালো তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-রিয়াল ইন্টারন্যাশনাল, চিটাগাং এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, শামীমা ট্রাভেলস, গাউছিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আল-হাজী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হাতীম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মাবরুয়ান হজ এজেন্সি, মদীনা স্টার ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মাহের হজ সার্ভিস অ্যান্ড ট্যুরস, নামিরা ট্রাভেলস, মেসার্স গ্রান্ড সিকদার এয়ার ট্রাভেলস, মেসার্স সালাম ইন্টারন্যাশনাল, উল্লাস ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, কারাভেল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, বেস্ট ফ্লাই ইন্টারন্যাশনাল, গাউসে পাক (র.) ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মোবাশ্বেরা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মুনসীগঞ্জ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সন্দ্বীপ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, আল-হাবীব হজ গ্রুপ, সাউথ এশিয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এয়ার কনফিডেন্স টুর্যস অ্যান্ড ট্রাভেলস, বুশরা এয়ার সার্ভিসেস, মক্কা বাবে জান্নাত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এমাতুন এয়ার সার্ভিস, নেইভার ওভারসীজ, এইচ এম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আঞ্জুম ওভারসীজ, নাঈম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আল-কিবলা ট্রাভেলস, সিনসিয়ার ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম, আহসানিয়া মালয়েশিয়া হজ মিশন।
হজযাত্রী পাঠাতে এদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারা নিয়মিতই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। হজযাত্রীদের বুঝতে দিচ্ছেন না যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনিয়ম-অভিযোগ আছে।
বেস্ট ফ্লাই ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা দিদার ঢাকাটাইমসকে জানান, হজে লোক পাঠাতে সমস্যা হবে না। কারণ, তাদের একাধিক লাইসেন্স নেওয়া আছে। প্রয়োজনে ইউরোএশিয়া ইন্টারন্যাশনালের নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লোক পাঠানো হবে। উল্লাস ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক শাহীনুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কালো তালিকা, সাদা তালিকা করে লাভ নেই। আমরা যদি লোক পাঠাতে চাই তাহলে অনেক পথ আছে।’
অভিযোগ ১৯৪টি এজেন্সির বিরুদ্ধে
২০১৩ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত এজেন্সিগুলোর মধ্যে ১৯৪টির বিরুদ্ধে হাজিদের সঙ্গে প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ৪-৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অভিযুক্তদের ডেকে শুনানি করে। শুনানিতে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বছরের হজ প্যাকেজ
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ যথাক্রমে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৬ ও ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭৫৮ ব্যক্তি হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
(ঢাকাটাইমস/ ১৬ এপ্রিল / এইচএফ/ এআর/ ঘ.)