ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের (লোটাস কামাল) বিরুদ্ধে সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রীর মতো লাভজনক পদে থেকে তিনি সরাসরি নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে দালিলিক প্রমাণ ঢাকাটাইমস-এর হাতে রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বলছে, পরিকল্পনামন্ত্রী এখনো লোটাস কামাল গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও। এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিকে লোটাস কামাল গ্রুপের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বলা হয়েছে গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। মুস্তফা কামাল এখনো এই ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক হিসেবে আছেন। ইনস্যুরেন্স কোম্পানিটির ওয়েবসাইটেও পরিচালক হিসেবে তাঁর নাম দেওয়া আছে। পরিকল্পনামন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরও তিনি এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদ ছাড়েননি বলে একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি লোটাস কামাল গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজে ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার। লোটাস কামাল গ্রুপের অফিসিয়াল সাইটেও এই তথ্য দেওয়া আছে। অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে থাকে। সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনামন্ত্রী অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা অংশীদার হিসেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব বরাবর একটি কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দেন।
লোটাস কামাল গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কাজী আবুল কালাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে মেসার্স অরবিটাল এন্টারপ্রাইজকে কারণ দর্শানো হয়। বিদেশে কর্মী নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘রিক্রুটিং এজেন্ট আচরণ ও লাইসেন্স বিধিমালা ২০০২ এর ধারা-৭ (ঘ) অনুযায়ী এবং ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩’ -এর ১৯ (৩) ধারা অনুযায়ী ডাটা বেইজ হতে কর্মী বাছাই করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) নিবন্ধিত ডাটাবেইজ হতে কর্মী বাছাই ও নিয়োগ না করায় এই কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সৌদি আরবের ডেল্টা সীজ ইস্ট-এ বাংলাদেশ হতে যে একশ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র ও ক্ষমতাপত্র অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ পায় তা বাংলাদেশ দূতাবাস, সৌদি আরব কর্তৃক সত্যায়িত ছিল না। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব দেয় অরবিটাল এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা অংশীদার কে এ এইচ এম মুস্তফা, এফসিএ, এমপি জবাব সংবলিত চিঠিতে স্বাক্ষর করেন ২৬ ফেব্রুয়ারি এবং মন্ত্রণালয়ে ওই চিঠি যথারীতি জমাও দেওয়া হয়। মুস্তফা কামাল অরবিটাল এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা অংশীদার পরিচয়ে যে তারিখে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন ওই তারিখে যথারীতি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীও বটে। আর এভাবে একজন মন্ত্রী হয়ে সরাসরি ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদকে আমাদের সংবিধান লাভজনক পদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ ধারায় এ বিষয়ে স্পষ্টত বলা আছে, ‘এই অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হয়, এরূপ কোনো পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তি কোনো লাভজনক পদ কিংবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানী, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় বা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।’
বিস্ময়কর হলো, পরিকল্পনামন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরও মুস্তফা কামাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আগের মতোই পদে বহাল আছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত লোটাস কামাল গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা আছে। এতে বলা হচ্ছে, মুস্তফা কামাল লোটাস কামাল গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। সাইটে ঢুকলেই লোটাস কামাল গ্রুপের লোগো এবং তাঁর ছবি রয়েছে। এই পাতায় তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। ওয়েবসাইটে আরও বলা হচ্ছে, বর্তমানে এ এইচ এম মুস্তফা কামাল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং আইসিসির সহ-সভাপতি। এই ওয়েবসাইটে গ্রুপের অধীন মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠানের নামোল্লেখ আছে। এর মধ্যে একটি হলো সিএমসি কামাল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। বন্ধ এই কারখানা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়ে আলাপকালে ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, লোটাস কামাল মন্ত্রী হিসেবে যে শপথ নিয়েছেন তা ভঙ্গ হয়েছে। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে গুরুতর সমস্যায় ফেলেছেন খোদ সরকারকেই। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রবীণ এই আইনজীবী মনে করেন, মন্ত্রী হয়ে যিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেন বুঝতে হবে তিনি অতিমাত্রায় ডেসপারেট। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এইসব ব্যক্তি যেকোনো দল ও সরকারের বোঝা।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্যে পরিকল্পনামন্ত্রীর মুঠোফোন, বাড়ি ও অফিসের টেলিফোনে বহুবার যোগাযোগ করা হয়েছে। মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেলেও টিএন্ডটি নম্বরে যারা ফোন ধরেছেন তাঁরা মন্ত্রী মহোদয় কখনো ব্যস্ত, কখনো বিশ্রাম নিচ্ছেন, কখনো টি-টোয়েন্টি দেখতে স্টেডিয়ামে গেছেন বলে জানিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন। ফলে কেন একাধিক লাভজনক পদে রয়েছেন এ বিষয়ে মুস্তফা কামালের বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে পরিকল্পনামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, খোদ প্রধানমন্ত্রীও না-কি তাঁকে বলেছিলেন তিনি যেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবুও করেননি। মুস্তফা কামালের ঘনিষ্ঠরা আরও জানান, পরিকল্পনামন্ত্রীর যুক্তি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হবে। এটা তিনি চান না। বরং তাঁর মন্ত্রী পরিচয় ব্যবসায়িকভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও চাঙ্গা করবে এমনটাই মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী পরিচয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ব্যবসার প্রসারের চেষ্টায় মরিয়া বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিশেষত, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি তিনি বেসরকারি খাতে চালু করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। জনশক্তি রপ্তানি খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারা যেমন এটি জানেন তেমনি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারি পর্যায়েও বিষয়টি নিয়ে নানাভাবে আলোচনা আছে। নামমাত্র ৩৩ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয়ে সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো যখন সব মহলে প্রশংসিত হচ্ছে তখনই পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ব্যবসার প্রসারে বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠাতে উঠেপড়ে লাগেন বলে সূত্রে জানা যায়। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশে আসেন। এটি মূলত তাঁর ব্যক্তিগত সফর। এই সফরের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর ব্যবসায়িক যোগসূত্র ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। মালয়েশিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাই জনশক্তি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকজন জনশক্তি রপ্তানিকারক, বিশেষ করে কুমিল্লা বাড়ি ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে ব্যবসা করছেন এমন কেউ কেউ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। যাদের নেপথ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে বেসরকারিভাবে সেদেশে কর্মী পাঠানোর প্রস্তাব দেবেন এবং বাংলাদেশ সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য হবে এটাই ছিল আমাদের কতিপয় জনশক্তি ব্যবসায়ীর ধারণা। সংশ্লিষ্টরা জানান, সেভাবেই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ম্যানেজ করা হয়েছিল। কিন্তু যেখানে দুই দেশের সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি আছে এবং নামমাত্র অভিবাসন ব্যয়ে কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে সেই চুক্তির আলোকে আরো বেশি সংখ্যক কর্মী কিভাবে যেতে পারে সেটিই বরং লক্ষ্য হওয়া উচিত-এমন যুক্তি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হলে টনক নড়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের। সূত্রে জানা যায়, খোদ মালয়েশিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক্ষেত্রে তাঁর দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে নিজেদের গাফিলতি শোধরাতে নির্দেশ দেন। সরকারি পর্যায়ে কম অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারলে তা দুই দেশের জন্যেই ভালো বলে আপাতত মতৈক্যে পৌঁছে দুই দেশ। পরে বেসরকারিভাবে তা হতে পারে কি না দেখা যাবে যদি চুক্তি রিভিউয়ের প্রশ্ন আসে এমন আলোচনা হয়। কিন্তু এরপরেও কীভাবে বেসরকারি পর্যায়ে কর্মী মালয়েশিয়ায় দ্রুত পাঠানো যায় এবং তা নিজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় পরিকল্পনামন্ত্রী না-কি তাঁর উপায় খুঁজছেন। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে যখন তাঁরা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন তখনো না-কি তিনি বেসরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সওয়াল করেছেন। এমনকি ঘটা করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেনও যে, মালয়েশিয়া সাড়ে তিন লাখ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নিতে চায়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা ওই ঘটনার পরে একে শিষ্টাচারবহির্ভূত বলেও আখ্যা দিয়েছেন একান্ত আলোচনায়। তারা বলেছেন, বিষয়টি মোটেও পরিকল্পনামন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পড়ে না। মালয়েশিয়া কত লোক নেবে বা সেখানে কি চাহিদা আছে সেটি বলার উপযুক্ত মাধ্যম হলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। তাঁকে পাশ কাটিয়ে অনধিকার চর্চার মধ্যে অনেক ‘কিন্তু’ আছে বলেই মনে করেন সরকার সংশ্লিষ্টরাও।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ দেখায়। তবে মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের মাধ্যমে নয়, সরাসরি সরকারি পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে। কারণ মালয়েশিয়া সরকারও চেয়েছিল মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়ে বিদেশ গমনেচ্ছুক কর্মীদের হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধ হোক। দেশটির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি হিশামুদ্দিন তুন হুসেইন বাংলাদেশের জনশক্তি ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ‘দজ্জাল’ এমন কথা প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের কাছেই বলেছিলেন।
বিএনপি-জামায়াত সরকারের শেষ সময়ে বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নাম করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। অভিযোগ আছে, জনপ্রতি ৪-৫ লাখ টাকায় তখন কর্মী যেত মালয়েশিয়ায়। ওইসব প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ লোক বাংলাদেশ থেকে গিয়ে সেখানে প্রতারণার শিকার হয়। ভুয়া চাহিদাপত্র তৈরি করে তখন কর্মী পাঠানো ছিল রীতিমতো স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে যেখানে একটি কারখানায় একশ কর্মীর চাহিদা আছে সেখানে দুই হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র এনে কর্মী পাঠানোর ভুরি ভুরি ঘটনা ঘটে। এভাবে যারা ভুয়া চাহিদায় যায় তারা পথে বসে। আশ্রয় নেয় রাস্তায়, ব্রিজের নিচে। অনাহারে-অর্ধাহারে বাংলাদেশের এই কর্মীদের হাহাকার রীতিমতো মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে। মালয়েশিয়ার সরকার তাদের অবৈধ ঘোষণা করে। বিগত সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টাও এক্ষেত্রে নানা অনিয়মে জড়িত হন বলে অভিযোগ আছে। পরবর্তী সময়ে নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। মূলত তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও কূটনৈতিক যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সেদেশে অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর চুক্তি হয়। কর্মী যাওয়া শুরু হয় ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে। সরকারিভাবে ৩৩ হাজার টাকায় কর্মী যেতে পারছে। যা স্বপ্নেরও অতীত। সরকারের অত্যন্ত শুভ এই উদ্যোগ আরও কার্যকর হতে পারত যদি বেসরকারি খাত এই ক্ষেত্রে সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করত-এমনটাই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিকে বেসরকারি পর্যায়ের উদ্যোক্তারা কোনোভাবেই সেবা হিসেবে দেখছেন না। তাঁরা একে সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা মনে করেন। তাঁরা চান একজন কর্মী সহায়-সম্বল শেষ করে লাখ লাখ টাকা আদম ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়ে বিদেশে যাক। এ জন্যই সরকার যখন এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে চাইছে তখনই বেঁকে বসছে বেসরকারি খাতের লোকজন। অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত কর্মীদের মধ্য থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে যেকোনো মূল্যে তা যেন কার্যকর হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটি কার্যকর হলে বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতারণা অনেকাংশেই কমে আসবে।
কিন্তু সরকারের শুভ উদ্যোগে যদি সরকারেরই একজন মন্ত্রী বাধার সৃষ্টি করেন? করতেই পারেন। তাই বলে কি শুভ উদ্যোগ থমকে যাবে? কিছুতেই তা হতে দেওয়া যাবে না। মন্ত্রী হওয়ার পরে লোটাস কামালের কর্মকা- এটাই প্রমাণ করছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চেয়ে নিজের ও নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছেই তাঁর দায়বদ্ধতা বেশি। এটি অন্যায়, অসাংবিধানিক। মন্ত্রী হিসেবে তিনি যদি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকেন তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটাই কাম্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে নিশ্চয়ই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কারণ, এর মাধ্যমে প্রমাণ হবে তিনি অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেন না। ’৯৬ সালে মন্ত্রী পরিচয় লুকিয়ে বেসরকারি পাসপোর্টে সিঙ্গাপুর সফর করে মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। লোটাস কামালের ক্ষেত্রে কি হবে? দেখা যাক। শেষমেশ কি হয়!
(ঢাকাটাইমস/ ০৮ এপ্রিল/ এআর/ ঘ.)