logo ১১ মে ২০২৫
শিশু ও মহিলাদের পুষ্টি উন্নয়নে সংবাদপত্রের ভূমিকা
মোঃ আবদুর রহমান,ঢাকাটাইমস
২৪ জুন, ২০১৪ ১২:১৫:৫১
image


ঢাকা:অপুষ্টি বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা। দেশের নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরীর অধিকাংশই অপুষ্টির শিকার। তবে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও মহিলারাই বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। অপুষ্টিজনিত সমস্যা শুধু মানুষের বুদ্ধিমত্তা, কর্মক্ষমতা, আয়ু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই প্রভাবিত করে না বরং দেশের স্বাভাবিক আর্থ-সমাজিক উন্নয়নেও সুদূরপ্রসারী অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। তাই জাতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুষ্টি বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ শরীরের জন্য দরকার পুষ্টি। আর পুষ্টি অর্জিত হয় খাদ্য থেকেই। এজন্য সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারলে মানুষ সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুঠাম দেহের অধিকারী হয়।

পুষ্টি সংগ্রহে খুব বেশি ভাবনার প্রয়োজন হয় না। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে কম দামি অথচ সহজপ্রাপ্য অনেক পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু‘ পুষ্টি জ্ঞানের অভাব ও কুসংস্কারের ফলে অনেক সময় পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য থাকা সত্ত্বেও খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য বাদ দেওয়া হয়। তাই জাতির সার্বিক সুস্থতার জন্য পুষ্টিজ্ঞান অপরিহার্য। এজন্য বেতার, টেলিভিশন, পোস্টারিং, লিফলেট, সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমের দ্বারা জনগণের মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা বাড়াতে হবে। পুষ্টি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে পর্যাপ্ত ইতিবাচক সচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে জনগণের একটি অংশ নিজেদের অপুষ্টি সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

পুষ্টি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্র আধুনিক সভ্যতার প্রাণ। সংবাদপত্র আমাদের অজানাকে জানার এবং অদেখাকে দেখার সুযোগ করে দেয়। সংবাদপত্র হচ্ছে জ্ঞানের ভা-ার। সংবাদপত্র দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র আমাদের সামনে উপস্থিত করে। উন্নত বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার ফলে অনুন্নত বিশ্বের জনগণ তা পড়ে জাতীয় জীবনকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার সুযোগ পায়।

যেকোনো জাতি তথা সমাজের উন্নতির ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যতগুলো মাধ্যম আছে এর মধ্যে সংবাদপত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ। সংবাদপত্র শিক্ষিত মানুষের কাছে আহার-নিদ্রার মতোই প্রয়োজনীয়। সংবাদপত্র পাঠ না করলে মানুষের জ্ঞান ও শিক্ষা পরিপূর্ণ হতে পারে না। পুস্তকের শিক্ষা অপর্যাপ্ত ও সীমাবদ্ধ। আর সংবাদপত্রের শিক্ষা পরিপূর্ণ, বিচিত্র ও নিত্য নতুন। সংবাদপত্র পাঠ ছাড়া বর্তমান বিশ্বের খবরাখবর বিস্তারিতভাবে জানার কোনো উপায় নেই। সুতরাং বলা যায় সংবাদপত্র পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। এ যুগে সংবাদপত্রের দায়িত্ব বহুবিধ ও ব্যাপক। জনমত সৃষ্টিতে সংবাদপত্রের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তাই দেশ ও জাতির অপুষ্টি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সংবাদপত্রে পুষ্টি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় পরিবেশনের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন।

বস্তুত পুষ্টিবিষয়ক প্রচারাভিযানে সংবাদপত্র তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক তথ্যে জানা যায়, প্রায় ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন লোকের সংখ্যা শতকরা ৫৮.৩ ভাগ। বর্তমানে আমাদের দেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা অনেক। এখন প্রধান প্রধান দৈনিকের মোট প্রচার সংখ্যা সম্ভবত কমবেশি ১০ লাখ। এগুলোর মোট পাঠক সংখ্যা ৫০ লক্ষাধিক হতে পারে। কারণ ধরে নেওয়া হয়, একটি সংবাদপত্র গড়ে ৫ জন পাঠ করে থাকেন। এই গড় সংখ্যা বেশি হলে হয়ত পাঠক সংখ্যায়ও হেরফের হতে পারে। এই ৫০ লাখ পাঠকের একটি বিরাট অংশকে অপুষ্টি সমস্যা ও এর প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলোতে পুষ্টিবিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ফিচার, অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতার কুফল, অপুষ্টিজনিত সমস্যা ও এর প্রতিকারের উপায়, শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর উপকারিতা, মাতৃদুগ্ধ ও অন্যান্য খাদ্যের পুষ্টিগুণ, সহজলভ্য ও সস্তা দামে পুষ্টিকর খাদ্যের  উৎস,  খাদ্যদ্রব্যের পুষ্টিমানের অপচয় রোধের উপায়Ñ পুষ্টির এসব অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তাই অপুষ্টি সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন করে তোলার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের বর্তমান ভূমিকা আরও সক্রিয়, প্রত্যক্ষ ও সম্প্রসারিত করা  প্রয়োজন।

মূলত অপুষ্টিজনিত সমস্যা ও এর সমাধানকে আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। আর এ আন্দোলনের পুরোধা হবেন সাংবাদিক। তাই অপুষ্টি সমস্যা দূরীকরণে জনজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে সংবাদপত্রগুলোকে। আর এজন্য পুষ্টিবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংবাদপত্রে গুরুত্ব সহকারে পরিবেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিকদের আরও অগ্রণী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা আবশ্যক। এর ফলে শিশু ও মহিলাসহ দেশের গণমানুষের অপুষ্টি সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অপুষ্টিজনিত সমস্যা একদিন সমাধান হবেÑএ আমাদের প্রত্যাশা ও প্রত্যয়।

লেখক : ডিপ্লোমা কৃষিবিদ, উপ-পরিচালকের কার্যালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনা।