ঢাকা: সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য গাজায় প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে বেকায়দায় রয়েছে ১৪ দল। গাজায় ইসরাইলের টানা গোলা বর্ষণের পর গাজাবাসীই যখন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে থাকছেন এবং যেখানে আশ্রয় শিবিরগুলোও হামলার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ঠিক সেসময় কীভাবে ১৪ দল এই ঘোষণা দিলো তাও বোধগম্য নয় অনেকের কাছে।
তাছাড়া ঐ ঘোষণা দেয়ার পর প্রায় এক মাস পার হতে চললো এখনো সেখানে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। গাজা সফরের বিষয়টি আওয়ামী লীগের ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনো। অনেকে আবার এই ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা যে আসলে বাস্তবসম্মত ছিল না তা এখন বোঝা যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা তখনই ১৪ দলের এই ঘোষণার সমালোচনা করে বলেছিলেন, যেখানে গাজাবাসীই তাদের বাড়িঘরে থাকতে পারন না, সেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল কোথায় গিয়ে থাকবে।কীভবে সাহায্য করবে?
যাই হোক এরই মধ্যে গাজা এখন অনেকটা শান্ত।যুদ্ধবিরতি চলছে। ৭২ ঘন্টার যুদ্ধবিরতি আরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইসরাইল। তবে ইতোমেধ্যই ঝরে পড়েছে দুই সহস্রাধিক মুসলমান। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ১৪ দলের এই ঘোষণাকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বলে অবহিত করেছেন।
গাজাবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে প্রতিনিধিদল পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পর চার সপ্তাহ কেটে গেলেও ১৪ দলের অনেক নেতারাই জানেন না কখন পাঠানো হবে প্রতিনিধি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কখন এবং কয়জন প্রতিনিধি পাঠানো হবে এ ব্যাপারে ১৪ দলের আগামী বৈঠকে আলোচনা করা হবে।
এ বৈঠক কখন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখন হবে সে ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে তাড়াতাড়ি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছিল। এর পর থেকে আমি কিছুই জানি না।
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা আগামী দশ তারিখে এই ব্যাপারে আলোচনা করবো। তারপর বলতে পারবো কখন যাবো। আর বর্তমানে ফিলস্তিন সরকারের বিদেশী পরিদর্শকদের সাথে কথা বলার মত অবস্থানও নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ারা হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ফিলস্তিনে গিয়ে গাজার জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা করার মত অবস্থা সেখানে নেই। আর যদি সাহায্য সহযোগিতা করতেই হয় তাহলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূতের সাহায্য নিতে পারতো তারা।
তিনি আরো বলেন, গাজা সফর নিয়ে ১৪ এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল বলে আমার মনে হয়। আর যদি তা না হয়, তাহলে কেন এত দিন গাজা সফরে যাওয়া নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এব্যাপারে জানতে চাইলে ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, আগামী নয় আগস্ট আমরা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।
উল্লেখ্য,গত ১০ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র মো. নাসিম সাংবাদিকদের গাজা যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান ।
সেই সঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘গাজায় যে ঘটনা ঘটছে, তা কোনো সভ্য রাষ্ট্রের কাজ হতে পারে না। এটা মানব ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা। কয়েকটি দেশ তার পরও এতে মদদ দিচ্ছে, যা দুঃখজনক। অবিলম্বে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিশ্বশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
(ঢাকাটাইমস/ ০৭ আগস্ট/টিএ/ এআর/ ঘ)