logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
গা ঝাড়া দেয়ার আগেই হোচট খেল বিএনপিপন্থি আমলারা
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১৩ আগস্ট, ২০১৪ ২২:৫৩:৪৩
image

ঢাকা: গত পাঁচ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনা সরকারকে হঠানোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। আগামী ১৯ আগস্ট রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার মধ্যদিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করার টার্গেট নিয়ে আগাচ্ছে একাধিকবার দেশ শাসন করা এই দলটি।


সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নতুন করে রাজধানী ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার কৌশলের অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগরে বিএনপির নতুন কমিটিও গঠন করা হয়েছে এরই মধ্যে। এর পাশাপাশি বিএনপি মনোভাবাপন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় করা হচ্ছে। তলে তলে এ নিয়ে কাজও হচ্ছে।


বিএনপিপন্থি সাবেক ও বর্তমান আমলারা আড়ালে আবডালে খোদ সচিবালয়ে বৈঠক করে চলছেন। জাতীয় আান্দোলনকে সামনে রেখে বিএনপিপন্থি এই কর্মকর্তারা সচিবালয়কে গরম করার চেষ্টা করছেন।বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হওয়া সংক্রান্ত গোয়েন্দা রিপোর্টও এখন সরকারে হাতে।


বিষয়টি টের পেয়ে সরকার বুধবার বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের পিএস বিজন কান্তি সরকারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আরো কয়েকজনের তালিকা এখন সরকারের হাতে রয়েছে।


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা এমনিতেই ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। আর বিএনপি এটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।এর আগে গত ২৭ নভেম্বরে ’৮৪, ‘৮৫ ও স্পেশালসহ বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় দেড়শ কর্মকর্তা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা শোডাউন করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন বুধবার অবসরে পাঠানো কর্মকর্তা বিজন কান্তি সরকার।বিজনের সঙ্গে নেতৃত্বে আরো যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন এবাদত আলী, আবদুস সাত্তার, আখতার হোসেন প্রমুখ।গোয়েন্দা রিপোর্টেও অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ শেষমেষ প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিচিত সচিবালয়কে স্পর্শ করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।


গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে প্রশাসনে ক্ষোভ অসন্তোষ রয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সচিবালয়ে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে কয়েকজন সচিবের কক্ষে বিএনপিপন্থি সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের উঠা-বসার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।


সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের এডিসি মশিউর রহমানের নেতৃত্বে গোয়েন্দা (ডিবি) টিমেও আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অবসরে পাঠানো যুগ্নসচিব বিজন কান্তি সরকার বলেন, আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সরকার বিরোধী আন্দোলন হবে।এ খবর জানতে পেয়ে সরকার সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বিএনপিরপন্থী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানো শুরু করেছে।


তিনি বলেন, আজ বুধবার আমাকে অবসরে পাঠিয়ে তারই ইঙ্গিত দিলো সরকার। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আমার মনে হচ্ছে আগামী এক মাসে আরো শতাধিক কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হবে।


বর্তমান সরকারের আমলে ওএসডি কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৭৩ জনকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ওএসডি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন সচিব, ২৪ জন অতিরিক্ত সচিব, ৭৭ জন যুগ্মসচিব, ৫৬ জন উপসচিব ও ১৫ জন সিনিয়র সহকারী সচিব রয়েছেন।


রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও পদোন্নতি দিয়ে দীর্ঘদিন পদায়ন না করে ওএসডি করে রাখা হয়েছে অনেক কর্মকর্তাকে। বর্তমান সরকারের আমলে ওএসডি থেকেই বিদায় নিয়েছেন এরকম ১০ জন সচিব।


এছাড়া ২ জন সচিব ওএসডি থাকা অবস্থায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।কোন কারণে মতের অমিল হলেই তাকে ওএসডি করার অভিযোগও রয়েছে।


অভিযোগ রয়েছে, ওএসডি থাকা অবস্থায় খুব কম সংখ্যক কর্মকর্তার ভাগ্যেই পদোন্নতি জুটে। তাদের মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয় বছরের পর বছর।


রাজনৈতিক ধারায় বিভক্ত সরকারি কর্মচারীদের ভূমিকা কী হয় তা নিয়ে সন্দিহান সরকার। তাই আগে-ভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে সরকারি কর্মচারীদের সতর্ক করাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর মহড়াও দেয়া হয়। বস্তুত এমন মহড়া অতীতে কখনোই দেখা যায়নি। সরকারি কর্মচারীদের কথায় এর কোন উত্তর নেই। তবে তারা বলছেন কখন যে কী হয় কে জানে?


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৯৬ সালে ত্ৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীরাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। প্রেসক্লাবের সামনে বসানো হয় 'জনতার মঞ্চ"। এখানেই যোগ দেন সচিবালয় থেকে বেরিয়ে আসা সচিব থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারীরা।এছাড়া রাজধানীতে বিএনপিপন্থি আমলাদের রাতের আঁধারে গোপন বৈঠকের বিষয়টি বিষয় সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী জেনেছে।


(ঢাকাটাইমস/১৩ আগস্ট/এইচআর/এআর/ ঘ.)