logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকার যানজট নিরসনের নামে ১৫ কোটি টাকা গচ্চা!
আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
১৭ আগস্ট, ২০১৪ ২১:২১:৪২
image


ঢাকা: দীর্ঘ দিন ধরেই রাজধানী ঢাকা যানজটের নগরীতে পরিনত হয়েছে। কখনো কখনো তা অসহনীয় রূপ ধারণ করে। তাছাড়া ঢাকাবাসীই যে কেবল এই সংকট মোকাবেলা করছে তা নয়। পৃথিবীর সব বড় বড় শহরবাসীর এ ধরণের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।



 





বলতে গেলে প্রায় সবাই নানামুর্খী  উদ্যোগের মধ্যদিয়ে এই সংকট থেকে বের হয়ে এসেছে। পিছিয়ে রয়েছে কেবল মেগাসিটি হিসাবে পরিচিত ঢাকা। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না।



 





এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে প্রকট। যানজটের জন্য যে কটি কারনের কথা বিশেষজ্ঞদের মুখে মুখে রয়েছে তার মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করা হয়ে থাকে।

এখনো সেই মান্ধাতার আমলের “হাত উচিয়ে” গাড়ি থামানো হচ্ছে। ২০০৯ সালে অত্যাধুনিক টাইমার কাউন্টডাউন মেশিন ও ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি লাগানো হলেও তা সমন্বয়ের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।



 





ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্পের অধীনে রাজধানীর অধিকাংশ মোড়ে ট্রাফিক সিগনাল বাতি স্থাপন করা হলেও তার বেশিরভাগই এখন অচল। যেসব স্থানে এখনো ট্রাফিক সিগনাল বাতি ও টাইমারগুলো সচল রয়েছে সেখানেও পুলিশ হাত উচিয়ে গাড়ি থামাচ্ছে।



 





রাজধানীর গুলিস্থান, মগবাজার, পলাশী ও পুরান ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো কাজ না করলেও সেদিকে পুলিশের কোনো নজর নেই। অথচ ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও তা নগরবাসীর কোনো কাজে আসছে না। উল্লেখ্য, বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে রাজধানীর ৬৫টি ট্রাফিক সিগন্যাল ইন্টারসেকশনে 'টাইমার কাউন্টডাউন' যন্ত্র বসানো হয়।

রাজধানীর পল্টন, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোডসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে সিগন্যাল বাতি জ্বলছে, কাউন্টডাউন টাইমার মেশিনেও সময় উঠছে। কিন্তু কোন যানবাহনকে সিগন্যাল বাতি কিংবা টাইমারের সময় মানতে দেখা যায়নি।



 





এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য আবার ভিন্ন। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ট্রাফিক সিগনাল বাতি ও টাইমার কাউন্টডাউন যন্ত্র বসানো নিয়ে তারা কিছুই জানে না। ট্রাফিক পুলিশ বলছে এই সম্পর্কে তাদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় এখনও বাঁশি, লাঠি, রশি ও হাতের ইশারায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে।



 





কাউন্টডাউন মেশিন অনুযায়ী যান নিয়ন্ত্রণ না করার কারণ জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের  উপ-কমিশনার (পূর্ব) মাইনুল হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, কাউন্টডাউন মেশিনে যান নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারে কোন প্রশিক্ষণ আমাদের নাই। সিটি করপোরশনের কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে।



 





এছাড়া ঢাকা শহরের যানবাহনের চাপের বাস্তবতার কারণে এটা মানাও সম্ভব না, যে কারণে আমরা বাধ্য হচ্ছি হাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে। এ ছাড়াও ঢাকা সিটি করপোরেশন টাইমার যন্ত্র কেনার সময়ে ডিএমপির সাথে কোন ধরনের আলোচনা করেনি।



 





ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ যন্ত্রের ব্যবহার হলে বর্তমানের চেয়ে অন্তত ১০ ভাগ ট্রাফিক মোবিলিটি বৃদ্ধি পাবে। কোন ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি কতক্ষণ থামবে, তা ওই সিগন্যালের পুলে স্থাপিত টাইমার কাউন্টডাউন যন্ত্রে ভাসতে থাকবে। নির্দিষ্ট সময় থেকে কাউন্টডাউন করে শূন্যে নেমে আসার পর সবুজ বাতি জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে সিগন্যাল থেকে গাড়িগুলো ছেড়ে যেতে পারবে।

এ পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা গেলে রাজধানীর যানজট কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তারা। এ সম্পর্কে ট্রাফিক পুলিশেরএক কর্মকর্তা জানান, কোন স্টাডি ছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ওই সব সিগন্যাল মেনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ ওই টাইমার ঘড়িতে প্রতিটি সড়কমুখে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।



 





কিন্তু সকালে সচিবালয়মুখী গাড়ি বেশি থাকে। আর দুপুরে হয় তার উল্টো। তাই একেক সময় টাইম কাউন্টডাউনের তারতম্য দরকার; যেটা মাঠে কাজ করা ট্রাফিক পুলিশই ভালো জানে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মিলি বিশ্বাস ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'টাইমার যন্ত্র ও সোলার প্যানেল কারা বসিয়েছে, কীভাবে বসিয়েছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

এই প্রকল্প ছাড়াও এর আগে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক বিভাগ ও ডিএমপির  ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে যানটজ নিরসনে ২৫ কোটি টাকাও কাজে আসেনি।



 





ডিএসসিসির ট্রাফিক বিভাগের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'টাইমার কাউন্টডাউন প্রকল্প যানজট নিরসনের জন্য নয়, কমিশন খাওয়ার জন্য বসানো হয়েছে; যা কোন কাজেই আসবে না। কারণ এই শহরে গাড়ির চাপ বেশি। লোকজন ট্রাফিক পুলিশই মানে না, আর টাইমার! কাউন্টডাউন টাইমার প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শিহাব উল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'যানজট নিরসনে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।



 





এটা নিরসনের জন্য এ ধরনের সিঙ্গেল প্রজেক্ট সহায়ক হতে পারে না। তবে টাইমার যন্ত্র কেনার সময়ে ডিএমপির সাথে কোন ধরনের আলোচনা করা হয়নি এমন কথা সঠিক নয় বলেও তিনি জানান।



 





(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এএ/ এআর/ ঘ.)