logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
রায়ের জন্য আর কত অপেক্ষা

আল ফারুক, ঢাকাটাইমস
১৬ আগস্ট, ২০১৪ ১৯:৪১:৪৯
image


ঢাকা:পাবনার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান। বাংলাদেশের মুক্তির লড়াইয়ে অংশ নিতে স্বজনদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন ১৯৭১ সালের নয়টি মাস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এসে দেখেন তার প্রায় সব শেষ করে দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। বাবাসহ ৬৫ স্বজনকে হারানোর বেদনা আর দুঃখ নিয়ে চার দশক পার করেছেন। প্রতি মুহূর্তই কেটেছে তার বিচারের দাবি নিয়ে। জীবন সায়াহ্নে এসে এই অপেক্ষার যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না হাবিবুর রহমানের।



 





মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলায় সাক্ষী হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান। ট্রাইব্যুনালে এসে জানিয়েছেন, আলবদর বাহিনী গঠন করে নিজামী কীভাবে তার এলাকায় তা-ব চালিয়েছে। নিজামীর মামলা যখন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল তখন ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় চেপে রাখা রাগ-ক্ষোভ খানিকটা কমতে শুরু করেছিল তার। কিন্তু এই মামলার রায়ের অপেক্ষা তার আর শেষ হয় না। আবার বাড়ছে ক্ষোভ।



 





ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমি কেবল ৬৫ স্বজনই হারাইনি, সারা দেশে ৩০ লাখ স্বজন হারিয়েছে মানুষ। নিজামীরা নানা বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীকে এই হত্যাযজ্ঞে সহায়তা করেছে। আমরা সেই কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি তাদের বিচারের রায় হবে, রায় কার্যকর হবে। কেবল আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নয়, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া সারা দেশের মানুষের দাবি এটি।’

একাত্তরে দেশ ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নিজামীর অপরাধের মামলার শুনানি শেষ হয়েও হচ্ছে না রায়। রায়ের জন্য প্রায় সাত মাস অপেক্ষা করতে থেকে পাবনার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানের মতোই ক্ষুব্ধ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘কেন দেরি হচ্ছে সে প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে নেই। তবে এক কথায় বলতে পারি আমরা ক্ষুব্ধ।’



 





জামায়াত নেতাদের রায় দেরি হলে জনমনে নানা গুজব ছড়াবে বলেও মনে করেন শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘জনগণ মনে করতে পারে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কোনো যোগাযোগ আছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে আবার জামায়াত সুযোগ নেবে।’



 





শাহরিয়ার কবির বলেন, কেবল নিজামী-সাঈদীর মামলার রায় দ্রুত দিতে হবে এমন নয়, যত মামলা আছে তার সব কটি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। প্রয়োজনে নতুন বেঞ্চ গঠন করতে হবে।

জামায়াতের আরেক নেতা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল শুনানিও আটকে গেছে একইভাবে। কবে রায় হবে, সে বিষয়ে ধারণা নেই কারও।

এরই মধ্যে সাঈদীর বিরুদ্ধে এক সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে। নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে অন্যদেরও। সাঈদীর বিরুদ্ধে বিশাবাড়ি হত্যা মামলার সাক্ষী দিয়েছিলেন পিরোজপুরের মোস্তফা। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তার বাড়ির সিঁদ কেটে ঢুকে তাকে কোপায় দুর্বৃত্তরা। ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মোস্তফা। এই হত্যার অভিযোগ উঠেছে জামায়াত কর্মীদের বিরুদ্ধেই।



 





সাঈদীর বিরুদ্ধে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলার বাদী মানিক পসারি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘আর কত অপেক্ষা। আমি বিচারটা চাই। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত কোনো কিছুই চাই না। আমি চাই ফাঁসিটা যেন হয় তাড়াতাড়ি।’



 





যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলছেন, যতদিন বিচার না হবে ততদিন স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বাড়তেই থাকবে। কেবল নিজামী-সাঈদী নয়, গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুল আলীমের আপিল শুনানি এবং ট্রাইব্যুনালে আবদুস সুবহান, এ টি এম আজহারুল ইসলাম, মীর কাসেম আলীর মামলা দ্রুত শেষ করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত আবুল কালাম আযাদকে খুঁজে বের করে রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।



 





মুক্তিযুদ্ধের এস ফোর্সের কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ মনে করেন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত জামায়াত নেতাদের বাঁচাতে কাজ করছে একটি কুচক্রী মহল। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছে তাদের আত্মার শান্তির জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতেই হবে। এই বিচারের রায় কার্যকর করতে যত দেরি হবে, সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস তত ভঙ্গ হবে। সরকারকে এই বিষয়টি বুঝতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ ছাড়া এই বিচার আর কেউ করতে পারবে না।’



 





দুই জামায়াত নেতার রায় বিলম্ব নিয়ে ছড়াচ্ছে নানা কথা। সরকার জামায়াতের সঙ্গে কোনো আঁতাত করছে কি না সে সন্দেহের কথাও বলছেন কেউ কেউ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। ট্রাইব্যুনাল এবং আদালত চলে তার নিজের ইচ্ছায়। সেখানে হস্তক্ষেপ করেন না তারা।

নিজামীর মামলা, শেষ হয়েও হয় না শেষ



 





দুই দফা অপেক্ষমাণ থাকার পর জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল ২৪ জুলাই। কিন্তু কারাগারে নিজামী অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আটকে যায় সে রায়। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন নিজামী। তার চিকিৎসার প্রতিবেদন জমাও পড়েছে ট্রাইব্যুনালে। কিন্তু রায়ের বিষয়ে এখনো নেওয়া হয়নি কোনো সিদ্ধান্ত।



 





এর আগে নিজামীর মামলাটি শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয় আরও তিন দফা। মামলাটি রায়ের জন্য প্রথম অপেক্ষমাণ রাখা হয় ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর। ওই মাসের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু এরপর অবরোধের অজুহাতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে যায়নি রাষ্ট্রপক্ষ। কিন্তু ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার কথা জানায়।

পরদিন নিজামীর আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ চায়। ট্রাইব্যুনাল সময় দিলে অবরোধের মধ্যেই ১৭ নভেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে তারা। ২০ নভেম্বর তাদের বক্তব্য শেষ করে। এরপর মামলাটি আবার রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনালের বিদায়ী চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির।



 





রায় দেওয়ার আগেই গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি অবসরে চলে যান। চেয়ারম্যানের পদ শূন্য থাকার ৫৪ দিন পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে নিয়োগ পান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিন দিন পর এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। এই শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য তৃতীয় দফায় অপেক্ষমাণ রাখা হয় ২৪ মার্চ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘নিজামীর মামলার রায়ের বিষয়টি এখন ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে। তারা উপযুক্ত দিন দেখে রায় ঘোষণা করবেন।  তবে নিজামী শারীরিকভাবে এখন সুস্থ আছেন। তাই রায়ের পথে কোনো অন্তরায় বলে মনে হচ্ছে না।’ রায় দীর্ঘায়িত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের মামলার কার্যক্রম চলাকালে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় নিজামীকে একাধিকবার চট্টগ্রাম নেয়া হয়েছে। এতে অনেক সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা যায়নি। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদটিও প্রায় দুই মাসের মতো শূন্য ছিল। সব মিলিয়ে মামলার কার্যক্রম গুছিয়ে আনতে সময় লেগেছে।’  



 





নিজামীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নিজামীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে আছে স্বাধীনতাকামীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়া, হত্যায় অংশগ্রহণ এবং পরিকল্পনা করা।

রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ করে, ১৪ মে নিজামীর নেতৃত্বে পাকিস্তান  সেনাবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা পাবনার ডেমরা ও বাউসগাতি গ্রাম ঘেরাও করে। এরপর ৪৫০ হিন্দুকে এক জায়গায় জড়ো করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৮ মে পাবনার সাঁথিয়া থানার করমজা গ্রামে লোক জড়ো করে নির্বিচারে সুরেন্দ্র নাথ ঠাকুরসহ অসংখ্য লোক হত্যা করা হয়। নিজামী সেখানেও উপস্থিত ছিলেন। ২৭ ও ২৮ নভেম্বর সাঁথিয়া থানার ধোলাউড়ি গ্রামে আবদুল আউয়ালের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িতে হামলা চালিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ৩০ জনকে। সেখান থেকে চারজনকে ধরে ইছামতি নদীর পারে নিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে শাহজাহান আলীকে গলাকেটে ফেলে যাওয়া হলেও বেঁচে যান তিনি।



 





এছাড়া ১৬ এপ্রিল ঈশ্বরদী থানার আটপাড়া ও বুথেরগাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে ১৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১০ জুন আতাইকুলা থানার মাতপুর গ্রামের মাওলানা কছিমউদ্দিনকে ধরে ইছামতি নদীর পারে নিয়ে হত্যা করা হয়।  ৯ আগস্ট পাবনা শহরের নূরপুর ওয়াপদা মোড় থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মাজেদসহ দুজনকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পাবনা সুগার মিলের পাশে মরদেহ ফেলে দেওয়া হয়। এগুলোতেও নিজামীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর বেড়া থানার বিছাখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়।



 





রাজধানীতে ৩০ আগস্ট রাতে পুরাতন এমপি হোস্টেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বন্দি জালাল, রুমী, বদিসহ বেশ কজনকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন নিজামী ও মুজাহিদ। এরপর তাঁদের হত্যা করা হয়।



 





মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। নিজামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে ওই সব কর্মকা-ের উস্কানিদাতা, মদদদাতা, পরিকল্পনাকারী।



 





ফাঁসির দ-প্রাপ্ত সাঈদীর চূড়ান্ত রায় কবে

মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য কুখ্যাত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদ- দিয়েছে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার দুটি অভিযোগে সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আরও ছয়টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণ হলেও সেগুলোতে কোনো দ- দেয়নি আদালত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ মার্চ আপিল করেন সাঈদী। অন্যদিকে অপরাধ প্রমাণ হওয়া ছয় অভিযোগে শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই সঙ্গে যেসব মামলা প্রমাণ হয়নি সেগুলোতে ন্যায়বিচার চায় রাষ্ট্রপক্ষ।

জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার আপিল শুনানি শেষে শুরু হয় সাঈদীর মামলার শুনানি। ২৪ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি শুরু হয়। প্রথমে সাক্ষ্য ও জেরা উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর গত ২৯ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান।

আসামিপক্ষের বক্তব্য শেষে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে ২৫ ফেব্রুয়ারি। উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন এবং যুক্তি খ-ন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয় গত ১৫ এপ্রিল।



 





সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর

জামায়াত নেতা সাঈদীর বিরুদ্ধে মোট ২০টি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে কজন সাক্ষীর পক্ষত্যাগ, ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত না হওয়া, কজনের মৃত্যুসহ নানা কারণে প্রমাণ হয়নি সব কটি অভিযোগ। তবে আটটি অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় রাষ্ট্রপক্ষ।  

এর মধ্যে আছে ১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পাড়েরহাট বাজারে আওয়ামী লীগ, হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের বাড়িঘর ও দোকানে আগুন-লুটপাট, পরদিন বাদুরিয়া গ্রামে নুরুল ইসলাম খান ও শহীদুল ইসলামকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া, একই দিন চিথলিয়া গ্রামে মানিক পসারির বাড়ি লুট এবং তার ভাই ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২ জুন সাঈদীর নেতৃত্বে সশস্ত্র দল উমেদপুর গ্রামের হিন্দুপাড়ায় ২৫টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাঈদীর ইন্ধনে বিসাবালী নামের একজনকে নারকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন টেংরাখালী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলমের বাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে যান সাঈদী। সেখানে তার বড় ভাই আবদুল মজিদ হাওলাদারকে ধরে নির্যাতন করা হয়। এরপর সাঈদী বাড়ি লুট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে হোগলাবুনিয়া গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলা করে একজনকে ধর্ষণ এবং ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, পাড়েরহাট বন্দরের একটি বাড়ি থেকে তিন বোনকে ধরে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া এবং একই এলাকার অন্য একটি গ্রামে এক থেকে দেড়শ হিন্দুকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।



 





একমাত্র কার্যকর রায়

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে কেবল জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার দ-। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন দ- হয় তার। এই রায়ের প্রতিবাদে এবং মৃত্যুদ- চেয়ে সারা দেশে শুরু হয় গণজাগরণ। আন্দোলনের মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ রাখে। আপিল শুনানি শেষে কাদের মোল্লার ফাঁসির দ- দেয় আপিল বিভাগ আর ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হয় সে দ-।

ফাঁসির আগে মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বার্তা পাঠিয়ে জামায়াতে ইসলামী দেশে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিলেও রায় কার্যকরের পর এক অর্থে চুপসে যায় তারা। ১৫ ডিসেম্বর রাজধানীর দু-একটি এলাকায় গাড়িতে আগুন দিলেও এরপর আর কিছুই করতে পারেনি দলটি।

নিজামীর মামলার রায়ের বিষয়টি এখন ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারে। তারা উপযুক্ত দিন দেখে রায় ঘোষণা করবেন।  তবে নিজামী শারীরিকভাবে এখন সুস্থ আছেন। তাই রায়ের পথে কোনো অন্তরায় বলে মনে হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালের মামলার কার্যক্রম চলাকালে চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় নিজামীকে একাধিকবার চট্টগ্রাম নেয়া হয়েছে। এতে অনেক সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা যায়নি। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পদটিও প্রায় দুই মাসের মতো শূন্য ছিল। সব মিলিয়ে মামলার কার্যক্রম গুছিয়ে আনতে সময় লেগেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/এএফ/এমএম)