logo ০১ জুন ২০২৫
নামেই আছে তথ্য কমিশন!
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ১৬:৫৮:০৯
image

ঢাকা : তথ্য জানার অধিকার আছে সবার। এজন্য একটি আইনও আছে। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ করা হয়েছিল নাগরিকদের তথ্য পাওয়া আরও সহজ করার জন্য। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ডুবতে বসেছে উদ্যোগটি। বলছিলেন তথ্য কমিশনের সাবেক কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।


তিনি বলেন, ‘আসলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য কমিশন গঠন ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল তার কিছুই হাসিল হচ্ছে না। তথ্য কমিশনকে স্বাধীন বলা হলেও আদতে সেটি তা নয়। অনেক সময় সরকারি সংস্থা থেকেও তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অসহযোগী মনোভাব দেখানো হয়। যে কারণে, তথ্য অধিকার আইনের সুফল এখনও কাগজে কলমেই রয়ে গেছে। শুধু নামেই আছে প্রতিষ্ঠানটি।’


শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) উদ্যোগে সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক। ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ বিষয়ে কর্মশালায় অংশ নেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।


আবেদনের ভুলের কারণে অনেক নাগরিক চেয়েও তথ্য পান না উল্লেখ করে সাদেকা হালিম বলেন, ‘আবেদনকারীরা তথ্য চেয়ে আবেদনের পর যখন না পান তখন আসেন তথ্য কমিশনে। কিন্তু তথ্য কমিশনে তাদের অর্ধেকেরও বেশি অভিযোগ ফিরে যায় আবেদনের ভুলের কারণে।’


তিনি বলেন, ‘অনেকে বোঝেন না আবেদন কীভাবে করতে হবে। বিষয়টি এখনও জটিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারতের তথ্য কমিশনের চিত্র ভিন্ন। কোনো আবেদনকারী আবেদনে ভুল করলেও সেটাকে যতটুকু সম্ভব সংশোধন করে তথ্য পেতে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই মানসিকতা এখনও চালু হয়নি।’


কমিশনের বিগত সময়ের কাজের তথ্য তুলে ধরে সাবেক তথ্য কমিশনার বলেন, ‘২০১০ থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তথ্য কমিশনে জমা পড়েছে মোট ৬৬৭টি অভিযোগ। এরমধ্যে ৩৩৭টি অভিযোগ আমলে নেয়া হয়। এসব অভিযোগের মধ্যে ৩২১টি অভিযোগ শুনানির মাধ্যমে এবং ৩০৭টি অভিযোগ চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। ভুল আবেদনের কারণে এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি কমিশন।’


তবে প্রশ্ন আছে চিঠি পাঠানোর মাধ্যমে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা নিয়েও। এ প্রসঙ্গটিও এড়িয়ে যাননি সাদেকা হালিম। বললেন, ‘অভিযোগ যথাযথ না হলে কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে অভিযোগকারীকে ভুল সংশোধন করে পরবর্তীতে আবারও আবেদন করতে বলা হয়। এতে যে পরিমাণ সময় ব্যয় হয় তাতে অভিযোগকারী দ্বিতীয়বার আবেদন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সময় এসেছে।’


শুধু পদ্ধতিগত নয়, আইনের পরিবর্তন আনার সময় এসেছে বলেও মনে করেন দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের পর পাঁচ বছর হতে চললো। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাই তথ্য অধিকার আইনটিরও পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’


ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘২০০৫-০৬ সালের দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের ই-মেইল করা নিষেধ ছিল। কিন্তু এখন এটা চিন্তাও করা যায় না। কারণ, দেশ এগোচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ওপর ভর করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনেক আগেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। একইভাবে তথ্য অধিকার আইনেও অনেক দিক যুক্ত ও বাদ দেয়ার সময় হয়েছে।’


সাংবাদিকদের তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে তথ্য কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল করিম বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে এখনও অনেকে অন্ধকারে আছেন। এই আইনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এজন্য সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে।’


তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকে আইনের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে জানান, এই আইন থেকে সাংবাদিকরা খুব বেশি সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে হয় না। কারণ, এই আইনের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবেদন করলেই যে তথ্য পাওয়া যাবে এটারও নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া আছে তাও দেশের সাংবাদিকতার অনুকূল নয়।


ডিআরইউর সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ব্যাচের কর্মশালায় আরও বক্তৃতা করেন, ডিআরইউর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন ও প্রশিক্ষণ উপ-কমিটির সদস্য সচিব মাহফুজা জেসমিন। উপস্থিত ছিলেন ডিআরইর অর্থ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, দপ্তর সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ জামাল হোসাইন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল পারভেজ, কল্যাণ সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. মঈন উদ্দিন খান ও তোফাজ্জল হোসেন।


তথ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য কমিশনের সহায়তায় ডিআরইউ তার সদস্যদের মধ্য থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতি পর্বে ৫০ জন করে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শ জনকে ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ বিষয়ে জানাতে কর্মশালা করছে। গত ২২ আগস্ট দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মশালা শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রায় দুই শ সাংবাদিক এতে অংশ নেন।


(ঢাকাটাইমস/ ১২ সেপ্টেম্বর/ এইচএফ/ঘ.)