logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
তদন্ত প্রতিবেদন জমা
কনস্টেবল নিয়োগে ঘুষের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা যেভাবে
হাবিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
০৭ অক্টোবর, ২০১৪ ১৮:৫৬:৪৭
image

ঢাকা: ছয় সহস্রাধিক পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে বড় অংকের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।এই গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,পুলিশ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা ও সরকারি দলে নেতাদের যোগসাজসে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের ডিসিপ্লিন এন্ড প্রফেশনাল স্ট্যানডার্ট শাখার করা তদন্ত প্রতিবেদনটি গতমাসের শেষ সপ্তাহে জমা দেয়া হয়েছে।


গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের (রিক্রুটমেন্ট এন্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং)এ আই জি মো: মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষতির ১৪০ পৃষ্ঠার একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।


গত ২৯ জানুয়ারি পুলিশের সদর দপ্তর থেকে ছয় হাজার কনস্টেবল নিয়োগের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার ১শ জন পুরুষ এবং মহিলা কনস্টেবল সংখ্যা সংখ্যা ৯শ বলে উল্লেখ করা হয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শুরু হয়ে এই নিয়োগ পরীক্ষা ২২ ফেব্রুয়ারি  শেষ হয়।


তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনস্টেবল নিয়োগে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ প্রশাসক, পুলিশ সদর দপ্তর, সরকারের প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল ও সরকারি দলের নেতা-পাতি নেতাসহ সবাই জড়িয়ে পড়ে। এর জন্য চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে  পাঁচ লাখ,  তিন লাখ, আবার কোথাও দু’লাখ টাকা নেয়া হয়। তবে সব চেয়ে কম টাকা নেয়া চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা অধিবাসীদের কাছ থেকে। সেখানকার এমপি কারো কাছ থেকে অর্থ না নেওয়ার জন্যে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে পরে  ঐ এমপি নিজেই তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন। তিনি তার নিজের পকেট থেকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দেন। পুলিশ নিয়োগে সর্বোচ্চ ঘুষ নেয়া হয়  ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে।


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পুলিশের নিয়োগবিধি অনুসারে কনস্টেবল পদে নিয়োগের সব ক্ষমতা জেলা পুলিশ সুপারের। নিয়োগের জন্য একটি কমিটি হলেও সেই কমিটির প্রধান ছিলেন পুলিশ সুপার। প্রার্থী বাছাই, নিয়োগ ও চাকরি-পরবর্তী নাম-ঠিকানা যাচাইসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা জেলা পুলিশ সুপার।


পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজির (রিক্রুটেমেন্ট এন্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ) (স্মারক নং ৪৪/১/২৮/৪/০০১.(অংশ) ১৪-৪৬৭ এবং  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ৪৪.১.৯৮.১/১৪/১৪০) করা  অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, পুলিশ কনস্টেবল পদের বিভিন্ন জেলায় লোকবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক সংগঠনের কতিপয় নেতার অশুভ যোগসাজসের মাধ্যমে অবৈধভাবে নগদ অর্থ নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য সম্পন্ন করেছেন।


চাকুরীর নিশ্চতয়া দিয়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাধারন মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার আগেই কতিপয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা নগদ অর্থ সংগ্রহ করে অর্থের কিছু টাকা নিজে রেখে সিংহভাগ টাকা মৌখিক চুক্তিমতো পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়। এসব টাকা পরে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ভাগবাটোয়ারা হয় বলে এই গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়।


এবিষয়ে স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে  বলেন, প্রতিবেদন পেয়েছি তবে তাতে কি লেখা আছে তা বলতে পারবো না। এব্যাপারে কয়েকজন পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা অর্থ লেনদেনের এই এঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।


(ঢাকাটাইমস/০৭অক্টোবর/এইচআর/এআর/ ঘ.)