logo ২৯ এপ্রিল ২০২৫
নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে থাকতে চাইছে বিএনপি
কিরণ সেখ
২৯ অক্টোবর, ২০১৪ ১১:০৪:৪৫
image


ঈদের পর আন্দোলন" পর পর দুই ঈদের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন ঘোষণার পরও কোনো কর্মসূচি ঘোষণা না করায় বিএনপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিচ্ছেন সরকারি দলের নেতারা। এই অবস্থায় কর্মীদের মুখ রক্ষার জন্য হলেও কিছু একটা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, বারবার হুমকি দিয়েও কর্মসূচি ঘোষণা না করলে সরকার আরও সুযোগ পেয়ে যাবে আর কর্মী-সমর্থকরা আরও হতোদ্যম হয়ে যাবে। এই সুযোগ দিলে সরকার ৫ বছর প্রতাপের সঙ্গেই শাসন করবে এবং আবারও নির্দলীয় সরকারের দাবিকে অগ্রাহ্য করে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করবে বলেও আশঙ্কা আছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে বলা হয়েছে, ছাত্রদল, যুবদলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিভেদ ভুলে শিগগির রাজপথে নামার জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। আর এবার রাজধানীতে কর্মসূচিতে যত সম্ভব কর্মী সমাগমের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে তখন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে একযোগে কর্মসূচিতে নেমেছে হাজার হাজার কর্মী। বিএনপির কর্মীরাও যেন এবার একই কৌশল নেয়, তা নিশ্চিত করতেও নেতাদের নির্দেশ দিয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।  

বৃহস্পতিবার নীলফামারীতে এক জনসভায় খালেদা জিয়া স্বীকার করেন যে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে দলের ব্যর্থতার কারণ রাজধানীতে নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা। তবে এবার এমনটি হবে না বলে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি  চেয়ারপারসন বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে সারা দেশের মানুষ রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিলেও ঢাকায় আন্দোলন হয়নি, এবার ঢাকাতেও হবে জোরালো আন্দোলন।’

বিএনপি কবে থেকে এবং কী ধরনের কর্মসূচির বিষয়ে ভাবছেÑ জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রথমে আমরা সমাবেশ, অবস্থান, মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করব। এতেও ক্ষমতাসীনরা নতি স্বীকার না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন সময় ও দিন ঠিক করে হয় না। তবে বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছে এবং থাকবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বলেন ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না। তবে আমি মনে করি সরকারের যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয় এবং তারা যদি নিজেদের ভালো চায় তাহলে ২০১৯ সালের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেবেন।’

বিএনপি নেতাদের এসব হুমকিকে একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। সরকারি দল বলছে, সরকারের প্রথম বছরে আন্দোলন করা এমনিতেই কঠিন। তার ওপর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বারবার পিছিয়ে আসা কর্মীদের চাঙ্গা করে কর্মসূচি দেওয়া এই মুহূর্তে বিএনপির পক্ষে আদৌ সম্ভব কি না সে প্রশ্নও তুলছে তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেলিন বলেন, ‘কিন্তু বিএনপির এই আশা-আকাক্সক্ষা বুড়িগঙ্গার নদীতে ভেসে যাবে। বিএনপির এত কথা কিসের? তারা যদি পারে আজকেই সরকার উৎখাত করুক। কিন্তু তারা সে চেষ্টাতেও যাবে না। কারণ তারা জানে, এই ক্ষমতা তাদের নেই। আর বিএনপির সব নৈরাজ্য ও সহিংসতা সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাব দিয়ে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে দেশের একটি মানুষের গায়ে হাত দিলে সরকার সহ্য করবে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির আন্দোলন যেভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে এবার সরকার তার চেয়ে বেশি কঠোর হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে থাকার অবস্থায় অনেক কিছুই করতে পারেননি তিনি। তবে এবার নিয়মিত সরকার থাকায় আন্দোলন মোকাবিলা করা হবে আরও দক্ষতার সঙ্গে।

নূহ উল আলম লেলিন বলেন, ‘খালেদা জিয়া আন্দোলনের কথা আগেও বলেছেন। কিন্তু কাজের কাজ করতে পারেনি। তাই আওয়ামী লীগ তাদের কোনো কথায় এখন কর্ণপাত করে না।’

আবার ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে আদৌ এখন কোনো কর্মসূচি পালন করা সম্ভব কি না সে বিষয়ে সন্দেহও আছে বিএনপি নেতাদের মধ্যে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘সরকারের নানা কৌশলের কোনো জবাবই দিতে পারছে না বিএনপি। সব শেষ ছাত্রদলের কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভেও সরকারের ইন্ধন আছে বলে ধারণা আমাদের। কিন্তু আমরা বিষয়টি কর্মীদেরও বোঝাতে পারছি না।’ -এই সময়ের সৌজন্যে