logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
হাজার বিঘা বৈধ-অবৈধ জমিতে লতিফপুত্রের প্রকল্প!
হাবিবুল্লাহ ফাহাদ ও রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
২১ অক্টোবর, ২০১৪ ০১:১৬:১৩
image


টাঙ্গাইল: সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর রাতারাতি বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। নিজের নামে না হলেও ছেলে আনিক সিদ্দিকীর নামে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের পাশে প্রায় হাজার বিঘা জমি কেনা হয়েছে। সব টাকাও আবার পরিশোধ করা হয়নি। বিস্তীর্ণ ওই এলাকায় চলছে মাটি ভরাটের কাজ। ভরাটের পথে সরকারি খাস-খতিয়ানভুক্ত জমিও।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার ঋণখেলাপি ছিলেন তিনি। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে অনেক কষ্টে সেই টাকা পরিশোধ করেছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর রাতারাতি বিপুল টাকার মালিক বনে গেছেন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। নিজের নামে না হলেও ছেলে আনিক সিদ্দিকীর নামে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের পাশে প্রায় হাজার বিঘা জমি কেনা হয়েছে। সব টাকাও আবার পরিশোধ করা হয়নি। বিস্তীর্ণ ওই এলাকায় চলছে মাটি ভরাটের কাজ। ভরাটের পথে সরকারি খাস-খতিয়ানভুক্ত জমিও। লৌহজং নদীর খালও শুকিয়ে গেছে চারপাশে জমি ভরাট করায়।

মন্ত্রীপুত্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেড, ম্যাজেস্টিকা পাওয়ার লিমিটেডের একাধিক সাইনবোর্ডও চোখে পড়বে প্রকল্প এলাকায় ঢুকতেই। প্রকল্প এলাকার চারপাশের জমি থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালুমাটি তুলে হরদম চলছে ভরাট। লৌহজং নদী থেকেও তোলা হচ্ছে বালু। চুক্তির বাইরে গিয়ে ২০ ফুটের জায়গায় প্রায় শত ফুট গভীর করে ড্রেজার পাইপ বসিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে মাটি। এতে ওই সব আবাদি জমি এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে জমির মালিকরাও ন্যায্য পাওনার দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না।

ভুক্তভোগীরা জানান, বাজারমূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম পাওয়ার আসায় ম্যাজিস্টিকা হোল্ডিং প্রকল্পে জমি দিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক জমির মালিক। মোট দামের কিছু অংশ দিয়ে বায়না করার পর গত বছরের ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ‘সাফ কবলা দলিল মূলে রেজিস্ট্রি’ করে নেওয়ার কথা থাকলেও এক বছরেরও বেশি সময় পর বিষয়টি কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বায়না সূত্রে জমিগুলো প্রকল্পের আওতাভুক্ত হওয়ায় জমির মালিক ওই জমি স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না। আবার বকেয়া টাকা দিয়ে অন্যথায় জমি কিনে পুনর্বাসনেরও সুযোগ পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। যে কারণে ধূ-ধূ প্রান্তরের একপাশে অস্থায়ী ডেরা তুলে রোদবৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের।      

জানতে চাইলে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘লৌহজং নদী যারা ভরাট করেছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। শিগগির পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সঙ্গে নিয়ে এসব নদী ও খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু  করব।’ তিনি জানান, যারাই খাসজমি, নদী, খাল ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আইন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্পের অবস্থান: সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার পূর্ব পাশের পুরোটাই জোকারচর গ্রামের কদিমহামজানী মৌজার অন্তর্ভুক্ত। উত্তর-পশ্চিমাংশে গোবিন্দপুর গ্রাম। দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে রয়েছে কুর্শাবেনু গ্রাম। প্রকল্প এলাকার ঠিক দক্ষিণে লৌহজং নদী। নদীর ওপারে চরহামজানী গ্রাম। বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর কয়েক শ গজ দূরের এ প্রকল্পটি সেতু সংযোগ সড়কের ১৮ নম্বর ব্রিজ লাগোয়া। ব্রিজ থেকে সোজা দক্ষিণ দিকে খালের মতো একটি অংশ প্রকল্প এলাকার মাঝামাঝিতে রয়েছে। যার প্রস্থ ৩৫০ ফুট। নদী পর্যন্ত যার দৈর্ঘ্য আনুমানিক সাত থেকে আট কিলোমিটার। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের মতো ওই অংশের শুরুতে কিছুটা জলাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু পরের অংশ পুরোটাই শুকিয়ে গেছে। ওই অংশটি এখনো ভরাট করে উঁচু করা না হলেও দুই পাশের ভরাট করায় খাস-খতিয়ানভুক্ত ওই জায়গাটি অনেকটাই চেপে এসেছে।

ভরাট হয়েছে প্রায় শত বিঘা জমি: প্রকল্পের আওতাভুক্ত পূর্ব ও পশ্চিম দিকের দুটি মৌজার প্রায় এক শ বিঘা জমিতে মহাসড়কের সমান করে আনুমানিক ৩০-৪০ ফুট উঁচু করে বালুমাটি ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে পূর্বের জোকারচর গ্রামের কদিমহামজানী মৌজার আনুমানিক ৪৫ বিঘা ও বাকিগুলো গোবিন্দপুর মৌজার জমি। গোবিন্দপুরের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরখানেক ধরে ওই প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ ও ভরাটকাজ চলছে। ওই এলাকার প্রায় সব জমির মালিকই টাকা পেয়েছেন। তবে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি নিয়ে এখনো সমস্যা চলছে বলে জানা গেছে।  

পুরো টাকা পাচ্ছেন না মালিকরা: প্রকল্পের আওতাভুক্ত জমি প্রাথমিক পর্যায়ে মোট দামের একটি অংশ দিয়ে বায়না করে নিয়েছিলেন ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিক সিদ্দিকী। এ রকম একাধিক বায়না দলিলে লেখা ছিল ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবরের মধ্যে পুরো টাকা পরিশোধ করে সাফ কবলা দলিল মূলে রেজিস্ট্রি করিয়া নেওয়া হবে। কিন্তু এরপর এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এসব জমির টাকা পুরোপুরি শোধ করে রেজিস্ট্রি করার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনই একজন জমির মালিক আবুল হোসেন। গত বছরের ১৫ এপ্রিল তার মালিকানাধীন কদিমহামজানী মৌজার ২৫ শতাংশ জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে বায়না করেন ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংসের নামে। বায়না দলিলে তার পুরো জমির মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা। বায়না করার সময় ওই দাম থেকে ৭৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। বাকি ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ১৫ অক্টোবর ২০১২ সালের মধ্যে পরিশোধ করে রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই তারিখের পর বছরের বেশি সময় পার হলেও পুরোদাম পরিশোধের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। জমির মালিক আবুল হোসেন ঢাককাটাইমসকে বলেন, এত দিন অপেক্ষা করেও জমির পুরো টাকা পাচ্ছেন না তিনি। পেলে এ টাকা দিয়ে অন্যত্র জমি রাখাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারতেন। দিন দিন জমির দাম বাড়ছে। এক বছর আগে পুরো টাকা পেলে যে পরিমাণ জমি তিনি কিনতে পারতেন ,এখন আর তা পারবেন না। দিন যত যাচ্ছে ততই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুর্শাবেনু গ্রামের একাধিক জমির মালিক ঢাকাটাইমসকে  বলেন, বায়না করা জায়গার পুরো দাম বুঝে পেতে মন্ত্রী কিংবা মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হননি তারা। মন্ত্রীর অনুসারী-অনুগামী বলে পরিচিতরা জমির মালিকদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিয়ে থামিয়ে রাখছেন। এ পরিস্থিতিতে কবে নাগাদ তারা এ থেকে রেহাই পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।   

কথা বলার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর ছেলে অনিক সিদ্দিকীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

জমি থেকে মাটি গেছে, দাম পাননি তারা

হাজার বিঘা প্রকল্পের শত বিঘা জমি মহাসড়কের সমান উঁচু করতে ৩০ থেকে ৪০ ফুট বালুমাটি ফেলতে হয়েছে। এসব বালু তোলা হয়েছে প্রকল্প এলাকার আশপাশের জমি থেকে। যেগুলো কেনা কিংবা বায়না করা হয়নি। এ ছাড়া শত শত ফুট পাইপ গেড়ে লৌহজং নদী থেকেও তোলা হয়েছে বালু। যাদের জমি থেকে বালুমাটি তোলা হয়েছে এমন একাধিক জমির মালিক জানিয়েছেন, মাটি তোলার আগে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা অনুযায়ী টাকা পাননি তারা। চুক্তিতে বলা ছিল, ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে মাটি তোলা হবে। বিনিময়ে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু পরে ২০ ফুটের জায়গায় ৮০ থেকে ১০০ ফুট লম্বা ড্রেজার পাইপ বসিয়ে মাটি তোলা হয়। কিন্তু এ জন্য জমির মালিকদের সঙ্গে আগে থেকে কোনো আলোচনাই করেননি সংশ্লিষ্টরা। একপর্যায়ে জমির মালিকরা পাওনার দাবিতে সোচ্চার হলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা প্রতি সিএফটি মাটির জন্য যে দাম পাওয়া যাবে তার ২৫ শতাংশ জমির মালিকদের দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপর মাটির জন্য কোনো টাকাই পাননি জমির মালিকরা। বরং শত ফুট গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় ওই সব আবাদি জমি আর আবাদের অনপযুক্ত হয়ে পড়েছে। এখনো কিছু কিছু জমি থেমে মাটি তোলা চলছেই।

ক্ষতিপূরণ পাননি ফসলের

প্রকল্পের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তখন অনেক জমিতে ফসল ছিল। মাটি ভরাট শুরু করায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল কৃষকদের। ওই সময় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল বলে জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা। কিন্তু এরপর বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও ক্ষতিপূরণ পাননি অনেক কৃষক। এজন্য কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। এ ছাড়া যেসব কৃষক ওই সব ফসলি জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেশির ভাগ কৃষকই কোনো কাজ পাননি। প্রকল্পের দেখাশোনা করছেন এমন লোকজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ জুটছে না ভাগ্যে। বাধ্য হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অনেক বৃদ্ধ কৃষক।

 মন্ত্রীর জোরে চলেন তারা

সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে ওঠাবসা করেন কালিহাতী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার মোল্লা। এ ছাড়া আব্দুল হাই আকন্দ, সাঈদ মেম্বার ও সিরাজ আমিনও আছেন তার সঙ্গে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মন্ত্রীপুত্রের হোল্ডিং প্রকল্পকে ঘিরে বড় ধরনের লুটপাটের আখড়াও গড়ে তুলেছেন তারা। প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও করেছে স্থানীয়রা। মন্ত্রী ও তার ছেলের ভয় দেখিয়ে গ্রামবাসীর মুখ বন্ধ করে রাখেন তারা। কথিত আছে, গরমের সময় মাথায় ছাতা ধরার জন্য ১৪ জন ব্যক্তিগত সহকারী নিয়োগ দিয়েছিলেন আনোয়ার মোল্লা ও আব্দুল হাইরা। যাদের কাজ ছিল শুধু তাদের মাথায় ছাতা ধরে রাখা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তাদের কারণেই ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জমির মালিকরা। একটা সময় তারাই অতিরিক্ত দামের লোভ দেখিয়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে জমি নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাদের কাছে বিভিন্ন কারণে গেলে তারা দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন।

পেশিশক্তি ও পুলিশের সাহায্যে উচ্ছেদের অভিযোগ

গ্রামবাসীরা জানান, প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার সময় যারা নিজের বসতভিটা বিক্রি করতে চাননি কিংবা জায়গা ছাড়তে চাননি তাদের বিভিন্ন পেশিশক্তি ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ দাঁড় করিয়ে রেখে ভিটেমাটি ছাড়া করা হয়েছে অনেককে। এদের মধ্যে অনেকের হয়তো শেষ সম্বলই ছিল পৈতৃক ভিটা। অথচ তাদের পুনর্বাসন বা অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি।    

জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার পর ন্যায্য দাম না পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও করেছিলেন জমির মালিকরা। বিভিন্ন সময় ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের পাওনা আদায়েও সোচ্চার হয়েছিলেন তারা। কিন্তু সাংসদ লতিফ সিদ্দিকীর লোকজন মামলা, গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে নিজেদের অধিকার নিয়েও কথা বলতে পারছেন না বলে এই সময়-এর কাছে অভিযোগ করেছেন।

 সরকারি খাসজমি ভরাট!

ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের পাশে সাংসদ লতিফ সিদ্দিকীর ছেলের ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিং লিমিটেডের হাজার বিঘা প্রকল্প এলাকায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাসজমি রয়েছে। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব নিচু জমিতে মাটি ফেলা না হলেও আশপাশের জমিতে ফেলা মাটি গড়িয়ে এসব জায়গা এসেছে পড়েছে। মহাসড়কের ১৮ নম্বর ব্রিজ থেকে ঠিক দক্ষিণ দিকে নেমে যাওয়া জমিটি পুরোটাই খাস-খতিয়ান ভুক্ত। ওই জায়গাটি মূলত ছিল একটি খাল। যেটি লৌহজং নদীতে গিয়ে মিলেছে। কিন্তু আশপাশের এলাকা ভরাট করায় খালটি ভরাট হয়ে গেছে। তবে এখনো সেখানে কিছুটা জলাবদ্ধতা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষোভ মন্ত্রীর ওপর

সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী নিজ নির্বাচনী এলাকায় খুব একটা যাননি। গত পাঁচ বছরে কালিহাতী উপজেলার জোকারচরে তিনি একবারের জন্যও জাননি বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা। অথচ নির্বাচনের আগে একাধিকবার জোকারচরে গিয়েছিলেন তিনি। সেবার আশ্বাস দিয়েছিলেন ঝোকারচর ও চরহামদানির মধ্যে যে লৌহজং নদী রয়েছে তার ওপর একটি সেতু বানিয়ে দেবেন। কিন্তু বিজয়ী হওয়ার পর একটিবারের জন্য খোঁজ নেননি ওই এলাকার। এমনকি জোকারচরের অনেক মুক্তিযোদ্ধাও তার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। ওই এলাকায় এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যারা একেবারেই নিঃস্ব। নিজের পৈতৃক ভিটেমাটিও নেই তাদের। যে কারণে স্কুলের বারান্দায় কিংবা অপরের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু সাংসদ লতিফ সিদ্দিকীর কাছে একাধিকবার ধরনা দিলেও কোনো দান অনুদান পাননি বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভোটের সময় লতিফ সিদ্দিকী ঠিকই ভোট চাইতে আহে। কিন্তু এহন মন্ত্রী-এমপি হওয়ার পর কোনো দেহা পাওন যায় না আমাগো লাগে শুধু ভোটের সময়। সময় অইলে মানুষ ঠিকই জবাব দিব।’  

নিরীহ মানুষের চোখে শিল্পায়নের স্বপ্ন

‘হুনছি এই গানে অনেক মিল-কারখানা হইব। অনেক লোকে চারকি (চাকরি) পাইব। আমাগো গ্রামে আর কোনো গরিব মানুষ থাকব না। এই আশায় তো জমি দিছি। তা না অইলে আবাদি জমি বেচতাম?’- বলছিলেন জোকারচর গ্রামের নুরু ম-ল। শিল্পায়নের স্বপ্ন জ্বলজ্বল করছে গ্রামের সাদাসিদে মানুষগুলোর চোখে। কৃষিকাজ করে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সন্তানরা যেন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলাতে না হয় সেই বন্দোবস্তই করতে চান তারা। ছেলেমেয়েরা কল-কারখানায় কাজ করবে- এমন স্বপ্ন দেখেই শত শত আবাদি জমি বেচে দিয়েছেন। তাছাড়া প্রকল্পের স্থাপনা নির্মাণের কাজেও নিজে একটা কাজ পাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ কত দূর তা হয়ত জানা নেই নুরু ম-লের।

আলিপুরেও দখল শুরু

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়কের পাশের প্রকল্প ছাড়াও সেতু থেকে দক্ষিণের আলিপুর গ্রামে আড়াই হাজার শতাংশ জমির ওপর নতুন প্রকল্প করতে যাচ্ছে ম্যাজেস্টিকা হোল্ডিংস লিমিটেড। ওই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণও শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।



(ঢাকাটাইমস/ ২১ অক্টোবর/ এইচএফ/ আরকে/ জেডএ.)