logo ৩০ এপ্রিল ২০২৫
এত দ্বন্দ্ব সামলে কীভাবে চাঙ্গা হবে ছাত্রদল?
কিরন সেখ
২২ অক্টোবর, ২০১৪ ১১:২৪:০৯
image


ঝিমিয়ে পড়া ছাত্রদলকে চাঙ্গা করতে নতুন কমিটি গঠন  করায় জটিলতা বেড়েছে আরও। আগের দ্বন্দ্ব-অসন্তোষ-হতাশার অবসান তো হয়নি, বরং তৈরি হয়েছে নতুন টানাপড়েন। ২০১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার পর থেকে অসন্তোষ এতটাই বেড়েছে যে, পদবঞ্চিতরা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে।

সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অনেকের দাবি, আবার বিতর্কিতদের হাতেই গেছে ছাত্রদলের নেতৃত্ব। আগের কমিটির নেতাদের ব্যাপারে অছাত্র, বিবাহিত, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছিল। এবারের কমিটিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

তবে নতুন সভাপতি রাজিব আহসানের দাবি, সরকারি দলের লোকজন ছাত্রদলের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। আসলে ছাত্রদলের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কোনো অনৈক্য নেই। তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটির নেতৃত্বে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদলকে আবারও চাঙ্গা করে তোলা হবে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মতো অগণতান্ত্রিক সরকার পতনের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল।’

ছাত্রদলের সদ্য সাবেক কমিটির একাধিক সদস্য জানায়, নতুন কমিটির সভাপতি রাজিব আহসানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য যে তহবিল ছাত্রদলকে দেওয়া হয়েছিল তার বড় একটি অংশ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। দলের চেয়ারপারসনের কানেও নাকি দেওয়া হয়েছিল ওই তথ্য। এছাড়া গত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক থাকতে আকরামুল হাসানও বিভিন্ন কমিটিতে পদবাণিজ্যে জড়িয়ে ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।

ছাত্রদলের সাবেক একজন সভাপতি জানান, ছাত্রদলের অতীত ঐতিহ্যকে নষ্ট করার পেছনে অছাত্ররাই দায়ী। যারা সংগঠনের নয়, নিজের উন্নয়নে কাজ করেছে তাদের কারণে সংগঠনটি আজ প্রায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাবেক এই নেতা বলেন, ‘ছাত্ররা যখন চাঁদাবাজি, ঠিকাদারির পথ বেছে নেয় তখন আর নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে না। অতীতে অনেক নেতা চাকরি করতেন, বিয়ে করে সংসারও শুরু করেছিলেন। তারা যখন কোনো ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব পান তখন আর তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।’

তবে রাজিব ও আকরামের ঘনিষ্ঠদের দাবি, পদবঞ্চিত নেতারা নতুন কমিটিতে জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। সেই হাতাশা থেকেই এসব মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে সংগঠনের চেইন অব কমান্ডকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।

জানতে চাইলে ছাত্রদলের নতুন সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রদলে বিবাহিতরা থাকতেই পারে। বর্তমান কমিটিতেও আছে। এটা দোষের কিছু নয়। কারণ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনেই এটা আছে। তবে ছাত্রত্ব নেই এমন কাউকে পদ দেওয়া হয়নি। বিবাহিত নেতাদের কারণে আন্দোলনের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

অবশ্য বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি মনে করেন, পদ-পদবি দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের তো খারাপ লাগতেই পারে। তিনি বলেন, ‘কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তো একা সংগঠন চালাবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সংগঠন চলবে। যারা এবার পদ পাননি তারা ভবিষ্যতে নেতৃত্বের জন্য নিজেদের তৈরি করে তুলবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমানের মতে, পদ-পদবি নয় ছাত্রদলকে আগের চেয়ে আরও সক্রিয় ও কার্যকর করে তোলার প্রতি জোর দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘অতীতে যেকোনো আন্দোলনের শুরুটা হয়েছে ছাত্রদের হাতেই। দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ছাত্রদল নতুন করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে এটাই প্রত্যাশা।’

২০১ সদস্যের কমিটি

বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়েছে। সভাপতি করা হয়েছে রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে। এই দুই নেতাই আগের কমিটিতে ছিলেন। মঙ্গলবার বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি (আংশিক) অনুমোদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

নতুন সভাপতি রাজিব আহসান আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হল শাখার ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। আকরামুল হাসান আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল শাখার ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন।

কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়েছে মামুনুর রশিদ মামুনকে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন ইসহাক সরকার। সহ-সভাপতি মনোনীত হয়েছে ৩৩ জন আর যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে ৩৫ জনকে। সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ২৭ জনকে, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ২৮ জনকে। এছাড়াও সম্পাদকম-লীর বেশ কয়েকটি পদে মনোনয়ন দেওয়া হলেও সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিন জনকে (যুগ্ম সম্পাদক পদমর্যাদায়)।

ছাত্রদলের নতুন সভাপতি জানান, সংগঠনকে সুসংগঠিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্দোলন-কর্মসূচি নিয়েও প্রস্তুতি রয়েছে ছাত্রদলের। খুব শিগগির সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। নিজেদের আরও সংঘবদ্ধ করার অঙ্গীকার করে রাজিব আহসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর।’-এই সময়ের সৌজন্যে