ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, সরকার শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি মঙ্গলবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ সব পদক্ষেপের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার স্থিতিশীল পুঁজিবাজার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে, যা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজের সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইপিও, আরপিও এবং রাইট ইস্যুর প্রস্তাবসমূহ অধিকতর, যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের নিরীক্ষা কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, প্রয়োজনবোধে কমিশন কর্তৃক নিয়োগকৃত নিরীক্ষকের মাধ্যমে কোম্পানীসমূহের ‘স্পেশাল অডিট’ করণের নিমিত্ত গাইডলাইন্স সংযোজন করে ‘সিউকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ রুল, ১৯৮৭-এর সংশোধন।
সম্প্রতি তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের নিবন্ধিত কার্যালয় যে এলাকায় শহরে অবস্থিত সে এলাকায়, শহরে তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশনা প্রদান।
মন্ত্রী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে আরও শক্তিশালী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ এর সংশোধন করা হচ্ছে।
ইউনিট মালিকগণের অনুমোদন সাপেক্ষে মেয়াদী স্কীমকে বে-মেয়াদী স্কীমে রূপান্তর করা যাবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে (স্কীমে) কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ পাবলিক অফারের মাধ্যমে উত্তোলন করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে (স্কীমে) প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের উপর (অ) মেয়াদী ফান্ডের ইউনিটের ক্ষেত্রে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির তারিখ থেকে, এবং (আ) বে-মেয়াদী ফান্ডের ক্ষেত্রে, ফান্ড গঠনের তারিখ থেকে, উভয় ক্ষেত্রে ৬ মাস পর্যন্ত লক-ইন বলবৎ থাকবে।
তিনি বলেন, অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে স্কীমের সর্বশেষ ‘ন্যাভ (নেট অ্যাসেট ভ্যালু)-এর ভিত্তিতে নতুন ইউনিট ইস্যুর মাধ্যমে ফান্ডের মুনাফা বণ্টন, বা পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে। গুজব ভিত্তিক বাজার প্রতিরোধে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রিসার্চ অ্যানালাইসিস) রুলস, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বন্ড মার্কেট’ উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (প্রাইভেট প্যালেসমেন্ট অব ড্যাবট সিকিউরিটিজ) রুল, ২০১২ প্রণয়ন। সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা, ১৯৯৬ এর সংশোধন রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জসমূহের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা থেকে লেনদেনের অধিকার পৃথক করার লক্ষ্যে এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন, ২০১৩ প্রণয়ন এবং সে মোতাবেক স্টক এক্সচেঞ্জদ্বয়ের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক করা হয়েছে। এর ফলে স্টক এক্সচেঞ্জে পরিচালনায় অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বুকবিল্ডিং পদ্ধতির সংস্কারপূর্বক ‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০০৬ এর সংশোধন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তক সম্প্রতি অডিটদের প্যানেলভুক্তির বিষয়ে একটি গাইডলাইন্স প্রণয়ন। আইপিও-তে আবেদনকৃত কোম্পানীর সম্পদ মূল্যায়নের নীতিমালা প্রণয়ন। রাইট ইস্যুর ক্ষেত্রে কর্পোরেট গভর্নেন্স গাইড লাইনস পরিপালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুততার সাথে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল’ গঠন ও ‘ট্রাইব্যুনাল’-এ একজন বিচারক (জেলা জজ) নিয়োগ ও পদায়ন করা হয়েছে। ‘সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস, ২০০৬-এর সংশোধন। এর ফলে কোন কোম্পানী প্রিমিয়ামসহ রাইট শেয়ার ইস্যু করতে হলে তাকে বিগত তিন বছর বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং মুনাফা করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, এছাড়া বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে বিদেশী ব্রোকারেজ ফার্মকে প্রদেয় কমিশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলিলাদি দাখিল সাপেক্ষে দ্রুত প্রেরণের অনুমতি প্রদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-নিবাসী বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের উপর আরোপিত শতকরা ১০ ভাগ ‘ক্যাপিটাল গেইন’ ট্যাক্স প্রত্যাহার, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের ‘স্পনসর ও ডাইরেক্টর-দের সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৩০ ভাগ এবং ব্যক্তিগতভাবে পরিচালকদের ২ ভাগ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ইস্যুকৃত সকল পাবলিক ইস্যুতে ২০ ভাগ কোটা সংরক্ষণ, ২০১১/২০১১-১২ অর্থবছরে আরোপিত সুদের ৫০ ভাগ মওকুফ, অবশিষ্ট সুদ একটি সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে তিন বছরে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় বরাদ্দকৃত ৯শ’ কোটি টাকা থেকে ইতোমধ্যে ১ম কিস্তিতে ৩শ’ কোটি টাকা ১৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক-ব্রোকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ১০ হাজার ৫৬৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নন-ডিসক্রিসনারী পোর্টফলিও ম্যানেজমেন্ট’-এর ক্ষেত্রে অমনিবাস হিসাব থেকে গ্রাহকের পৃথক বিও হিসাব-এ রূপান্তর। কোন ইস্যুয়ার কোম্পানী কোন চার্টার্ড একাউন্টস ফার্মকে ধারাবাহিক ৩ বছরের বেশী এর অডিট হিসাবে নিয়োগ করতে পারবে না মর্মে বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের নিরীক্ষা কার্যক্রম অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পাবলিক অফারের পূর্বে শেয়ারের প্রাইভেট প্লেসমেন্টের নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর ফলে কোন কোম্পানী ১শ’ জনের বেশি ব্যক্তিকে প্লেসমেন্ট প্রদান করতে পারবেনা। পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারীসমূহের তহবলি সর্বনিম্ন ৫১ ভাগ প্যারেন্ট কোম্পানী থেকে এবং অবশিষ্ট অংশ অন্য যে কোন তহবিল থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারীসমূহের মূলধন বৃদ্ধি পাবে এবং তারল্য সংকট দীর্ঘ মেয়াদে অবসান হবে।
(ঢাকাটাইমস/ ২৫ নভেম্বর /বাসস/ এআর/ ঘ.)