logo ০৭ মে ২০২৫
তথ্য সুরক্ষা অধিকার সংক্রান্ত জাতীয় কনভেনশন
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে আইন প্রণয়ণের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৬:৩৪:৫৩
image


ঢাকা: ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সময় উপযোগী আইন। বক্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সংগঠন দ্বারা ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কিভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করার জন্য তথ্য সুরক্ষা ও ডাটা সংরক্ষণ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকতে হবে। উল্লেখ্য, কনভেনশনে তথ্য সুরক্ষা উপর একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয়।

আজ বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার’ শীর্ষক এক জাতীয় কনভেনশনে বক্তারা এসব বলেন। ভয়েস এবং প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম. ক্যাম্পেইন অন সিটিজেন রাইট টু ইনফরমেশন, ইক্যুইটি এন্ড জাষ্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, অনলাইন নলেজ সোসাইটি, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) এবং স্কুল অব কমিউনিকেশনস এন্ড কালচারাল মেটাফিজিক্স-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার’ শীর্ষক জাতীয় কনভেনশনে সঞ্চালক ছিলেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। রুস্তম আলী ফরাজী এমপি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিক সেলিম সামাদ, ইকুইটি বিডির চীফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিশেষ অধিকার সংক্রান্ত সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী এমপি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ইমেল পাসওয়ার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, ব্যাংক একাউন্ট, পিন নম্বর ইত্যাদিও গোপনীয়তা রক্ষা জরুরী। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে কিছু অনিরাপত্তা বেড়েছে, এমনকি নজরদারিও বেড়েছে ব্যাপক হারে। নজরদারির কারণে ব্যক্তির অধিকার খর্ব হয়, যে কারণে ব্যক্তিগত তথ্যসুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, আইনের পাশাপাশি নৈতিকতার উন্নয়ন ও আইনের প্রয়োগ খুব বেশী জরুরি। তিনি বলেন, একমাত্র আদালত পারে আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইন জরুরি। সেজন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিককে অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন যে, বর্তমান টেলিকমিউনিকেশন আইন অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী যেকোন ব্যক্তির ফোন নজরদারি করতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহের জন্য অবশ্যই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমতি নিতে হবে। যদি সাধারণ ব্যক্তি ভুলক্রমে নজরদারির শিকার হন তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যক্তির প্রাইভেসি লংঙ্ঘন করার জন্য আইন ব্যভস্থা থাকতে হবে। মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষেত্রে নজরদারির প্রয়োজন থাকলেও সেইক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ইকুইটি বিডির চীফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে তথ্য অধিকার আইন দ্বারা ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত হয় না। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের সীমা আইন দ্বারা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যক্তির অধিকারকে সমুন্নত রাখে, আর যে সরকার জনঅধিকার লঙ্ঘন করে তা জনগণের বিপক্ষের সরকার। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার সকল কালো আইন বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

সাংবাদিক সেলিম সামাদ বলেন, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি কী কওে ব্যক্তির অধিকার রক্ষা করা যায় সেই বিষয়ে সরকার ও নীতিপ্রণেতাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার রক্ষায় তিনি আইন প্রণয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরো বলেন যে, আইন অনেক সময় নাগরিকের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে নিজেই অধিকার লঙ্ঘন করে। এই বিষয়ে তিনি সচেতনতার উপরও জোর দেন।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা মানুষের মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪৩ নং ধারায় প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (ধারা ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ (ধারা ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারস (ধারা ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (ধারা ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশ তথ্য অধিকার আইনেও ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা অধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন যে, ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তা সংরক্ষণে জাতীয় নীতিমালা ও আলাদা আইন প্রণয়ন জরুরি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, প্রাইভেসি হচ্ছে একজন মানুষের জন্মগত অধিকার। তাই, আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ বিষয়ে আলাদা কোন আইন না থাকায় দেশ বিদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কিংবা বিভিন্ন স্তরে এই অধিকার হরণ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কখনো প্রয়োজনের বাইরে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য গ্রহণ করছে। আবার এক সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করে অন্য সংস্থা কিংবা রাষ্ট্রকে তা সরবরাহ করছে যা মোটেও বাঞ্চনীয় নয়। তিনি প্রাইভেসি অধিকার ও ডাটা সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার আগে কোন তথ্যটি কেন, কি উদ্দ্যেশে সংগ্রহ করা হচ্ছে তা অবশ্যই সনাক্ত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এবং স্বাভাবিক সময়ে বা বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া, ব্যক্তিগত তথ্য অবশ্যই ব্যক্তির সম্মতিতে সংগ্রহ করতে হবে। সরকারের বিভিন প্রতিষ্ঠানসহ যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ফোন কোম্পানি ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে, তারা যাতে গোপনীয়তার পলিসি মেনে চলে সে বিষয়ে সরকারের স্বচ্ছ ও জবাবদিহমিূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে প্রণীত নজরদারি নীতিমালা মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান এবং অবিলম্বে তথ্য সুরক্ষার অধিকার রক্ষায় আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান। অনুষ্ঠানে একটি খসড়া আইন উপস্থাপন করা হয় এবং এর মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন এডভোকেট তানজিম ইসলাম ও শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস।

কনভেনশনে আরও বক্তব্য রাখেন বিএমএসএফ’র খায়রুজ্জামান কামাল, অনলাইন নলেজ সোসাইটির প্রদীপ কুমার রায়, ও সুপ্র’র শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।



(ঢাকাটাইমস/৩১ডিসেম্বর/এসএস)