logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
সহসাই মুক্ত হচ্ছেন না খালেদা জিয়া
তানিম আহমেদ
১৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:৩৯:৩০
image


৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই কার্যালয়ে কে যেতে পারবেন, সে সিদ্ধান্ত এখন নিচ্ছে পুলিশ। চারদিন পর একবার তালা খুলে দিলেও কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত আবার লাগানো হয় তা।

খালেদা জিয়া ভেতরে থাকা অবস্থায় বাইরের গেটে তালা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তার ইচ্ছামতো চলাফেরায় বাধা দিচ্ছে পুলিশ, কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, দলের নেতাকে দেখতে যেতে পারেননি হাসপাতালেও। তবু খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ, এমনটি বলতে রাজি নয় সরকার। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার প্রশ্নই আসে না। তিনি নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করতে চেয়েছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থা মনে করেছে তাকে নিরাপত্তা দেওয়া দরকার। তাই তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল, খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির সমাবেশকে সামনে রেখে আগে থেকেই নয়াপল্টন কার্যালয়ে অবস্থান নিতে পারেন। এ কারণে তাকে বের হতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়াকে আপাতত তার কার্যালয় এবং বাসার বাইরে কোথাও যেতে দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরে গেলে তার (খালেদা জিয়ার) নিরাপত্তার হুমকি আছে। তবে তিনি চাইলে তার বাড়িতে যেতে পারবেন।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দশম জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত ব্যাপক সহিংসতা করলেও ঢাকায় কোনো আন্দোলনই করতে পারেনি। এবার খালেদা জিয়া রাজধানীতেও কিছু একটা করতে চান বলে মনে করছেন তারা। ওই নেতারা বলেন, ঢাকা শহরে যদি খালেদা জিয়া কোনো সভা-সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগম দেখাতে পারেন এবং সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথেই অবস্থান নেয়, তাহলে তাদেরকে সেখান থেকে তোলা কঠিন হতে পারে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।

সরকারের সূত্রে জানা যায়, বিএনপি জনসভা করার সুযোগ পেলে টানা অবস্থান করবে বলে সরকারের কাছে খবর ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ‘জনতার মঞ্চ’-এর আদলে একটি মঞ্চ করারও পরিকল্পনা ছিল দলটির। খালেদা জিয়া সেই মঞ্চে লাগাতার অবস্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। দাবি আদায়ে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার। এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীর সহায়তায় দেশব্যাপী নাশকতা এবং কিছু উগ্র ডানপন্থি সংগঠনের তৎপরতায় সরকারকে অস্থিতিশীল করার চিন্তা ছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের কায়দায় জনসভা এবং রাজপথে দীর্ঘ সময় অবস্থান করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তাই জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সরকারের সূত্রমতে, আগামী মে মাসের মধ্যে নির্বাচন আদায়ে লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমান একটি পরিকল্পনা এঁটেছিলেন। খালেদা জিয়া এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাদের বলেছিলেন।

তবে নাম প্রকাশ করে এর কিছু স্বীকার করতে চান না আওয়ামী লীগ নেতারা। জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কোথায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে এটা প্রশাসনের বিষয়। প্রশাসন যদি তাদের অনুমতি দেয় আমাদের কিছু করার থাকবে না।’ তবে হানিফ এও বলেন, ‘বিএনপি তো কর্মসূচির নামে সহিংসতা করে। তাই আমরা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকা- হতে দিতে পারি না।’

গাজীপুরে সমাবেশ করতে না পেরে বিএনপির পিছুটানে ক্ষমতাসীন দল উৎসাহী হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় ২৮ ডিসেম্বর গাজীপুরের ২০ দলীয় সমাবেশস্থলে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। পরে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সেদিন গাজীপুরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। বিএনপি সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েও পরে সেখানে যায়নি। এরপর আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, তারেক রহমান তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে গাজীপুরের মতো কোথাও কর্মসূচি পালন করতে পারবেন না খালেদা জিয়া।

সাপ্তাহিক- এই সময়ের সৌজন্যে।