১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামদল, জামায়াতসহ প্রায় সব দলের বর্জনের মুখে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহজেই জিতে যায় সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি। কিন্তু গণআন্দোলনের মুখে তিন বছরেরও কম সময় টিকেছিল ওই সংসদ। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন এরশাদ। এরপর সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি।
দেশ গণতন্ত্রে ফেরার পরও এই একতরফা নির্বাচন থেকে মুক্তি পায়নি বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বামদল ও জামায়াতসহ প্রধান দলগুলোর বর্জনের মুখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আন্দোলনের মুখে এই সরকার টিকতে পারেনি দুই সপ্তাহও।
একতরফা নির্বাচনের কড়া সমালোচনা এবং আন্দোলনের দেড় যুগ পর আবার সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। শতাধিক মানুষের মৃত্যু, কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি মেনে নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে এক বছর। একতরফা নির্বাচনের বছরপূর্তিতে সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির জোরালো আন্দোলনের ঘোষণা আর তা ঠেকাতে সরকারের যুদ্ধংদেহী অবস্থানে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, আতঙ্ক।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের কারণে ২০১৩ সালের পুরোটা সময় সারা দেশে ছিল এক দমবন্ধ পরিস্থিতি। যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষকে ঝলসে দেওয়া, পণ্য বাজারজাত ঠেকাতে গাড়িতে হামলা, আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের উগ্র আচরণ আর গুলির কারণে কখন কার প্রাণ যায় সে নিয়ে উৎকণ্ঠা নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হয়েছে মানুষকে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন শেষে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে এলেও রয়ে যায় চাপা আতঙ্ক। ভোটের বছরপূর্তিতে আবার ফিরে এসেছে সেই দিনগুলো। ঢাকামুখী যানবাহন বন্ধ হয়ে গেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার চাপে। পর্যাপ্ত যানবাহন নেই রাজধানীতেও। গন্তব্যে যেতে গাড়ি পেতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে মানুষকে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে পণ্য পরিবহনে কী ঝামেলা পড়বে সে নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
পারিবারিক কাজে ছুটি নিয়ে কিশোরগঞ্জে গিয়েছিলেন আতিকুল্লাহ সবুজ। ৪ জানুয়ারি ফিরেছেন ঢাকায়। এমনিতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগে এই পথে। কিন্তু সাড়ে ছয় ঘণ্টার দুঃসহ অভিজ্ঞতা শেষে রাজধানীতে ফিরেছেন তিনি। তাও বাস থেকে নেমে রিকশা বা হেঁটে আর অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে।
সবুজ বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সালনার পর সড়কে বাধা তৈরি করে যানচলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। অনেকক্ষণ বাসে বসে বিষয়টি বুঝতে পেরে তিন কিলোমিটার হাঁটার পর জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে একটি রিকশা নেন। ভেবেছিলেন ভেঙে ভেঙে উত্তরা আসবেন। কারণ একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, এই খবরে সড়ক থেকে উধাও বাস। অবশেষে কিছুদূর যাওয়ার পর একটি বাস পেলেন, কিন্তু জয়দেবপুর থেকে উত্তরা আসার ভাড়া ১৫ টাকা হলেও সবুজকে দিতে হয়েছে ১০০ টাকা।
চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে যেতে চেয়েছিলেন হাসান। কিন্তু উত্তরা থেকে রিকশায় করে মূল সড়কে আসার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে ফিরে গেছেন তিনি।
নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করেন আলম। কাজ করেন ঘরে ঘরে গিয়ে। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে বিরক্ত তিনি। তিনি বলেন, ‘দুই জনে (দুই নেত্রী) মারামারি করে আর আমাদের অবস্থা খারাপ। সবাই মিলে নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসুক, আমরা সুখে থাকি।’
আবার নির্বাচন দিলে সবাই আসবে, সেটা জানেনÑএই প্রশ্নের কোনো জবাব অবশ্য আলমের কাছে নেই। উচ্চ আদালতের রায়, এরপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার পর থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে আলমের মতো লোকদের কাছে বহু প্রশ্নের জবাব নেই।
ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এখনও বলছে ২০১৯ সালে সময় মতো নির্বাচন হবে আর তখনও নির্বাচন করতে হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে। আর দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি বলছে এমনটি হবে না, এই সরকারকে আবার সংবিধান সংশোধন করে যেকোনো ধরনের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নইলে সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।
এই টেনে নামানো ঠেকাতে সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগেই দেশে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা। একে অপরের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে এখানে-সেখানে। সংঘর্ষ হচ্ছে পুলিশের সঙ্গেও। নাটোরে দুই প্রধান দলের কর্মীদের সংঘর্ষে এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে দুইজন। দুই পক্ষের গোলাগুলি, সন্ত্রাসে সাধারণ যাত্রীরা আছে ভয়ে।
৫ জানুয়ারি বিএনপি রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দিলেও সে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অনুমতি না পেলেও সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে পুলিশ। খালেদা জিয়া যেন বের হতে না পারেন সে জন্য বালু ও লোহার রড ভর্তি ১১টি ট্রাক বসানো হয় কার্যালয়ের সামনে। অবস্থান নেয় পুলিশ ও র্যাবের দুই শতাধিক কর্মকর্তা ও সদস্য। বসানো হয় জলকামানও। নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সড়কে পুলিশের একই ধরনের অবস্থানের কারণে ঢুকতে পারেনি কোনো নেতা-কর্মী।
এই অবস্থায় এক বছর আগের মতোই ছড়াচ্ছে নানা গুজব। এখানে-সেখানে দুই দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর ছড়াচ্ছে। এসব খবরের উৎস কী তা জানে না কেউ, কিন্তু মুখে মুখে প্রচারের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। আর একান্ত বাধ্য না হলে ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ।
দেশের এই পরিস্থিতির জন্য সরকারকে পুরোপুরি দায়ী করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক দমনপীড়নে স্বৈরাচার এরশাদকেও ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে পুরো দেশকে অবরুদ্ধ করে রেখে জোর করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। দেশের জনগণ আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সরকার এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
তবে বিএনপি নেতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ বলছে, ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে বিএনপি যে ভুল করেছে, তার খেসারত সরকার বা জনগণ দেবে না। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাস মোকাবেলা আর জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ‘জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকার তাই করছে। বিএনপি সমাবেশের নামে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের দিয়ে ঢাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। অতীতেও তারা আন্দোলন-কর্মসূচির নামে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এসব ছবি এখনও মানুষের চোখে ভাসে।’
রাজনৈতিক এই টানাপড়েন থেকে বেরিয়ে আসতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। তাহলে সমাধান কী?
এ প্রশ্নের জবাবে নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ‘সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনো আপস নয়। গণতান্ত্রিক নিয়ম মেনে কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলে সরকার কাউকে বাধা দেবে না।’
পাল্টা অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো দেশের মানুষের কল্যাণে ও গণতন্ত্র রক্ষায় অনেক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু সরকার যেভাবে একরোখা আচরণ করছে তাতে নমনীয়তার কোনো ছাপ নেই।’
নেত্রীকে অবরোধে ট্রাক
আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। ক্ষমতায় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার। কে এম এ হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান না করার দাবিতে পল্টন ময়দানে সমাবেশ ডাকেন সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা। সারা দেশ থেকে কর্মী-সমর্থকদের আসতে বলা হয় সেই সমাবেশে। কিন্তু বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের আক্রমণে এখানে-সেখানে আহত হয় শত শত আওয়ামী লীগ কর্মী। বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে পুলিশের চাপের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। পথে পথে তল্লাশি আর পরিচয়পত্র না থাকলেই পুলিশের গ্রেপ্তারের কারণে সে সময় সমালোচনার মুখে পরে বিএনপি। পাশাপাশি ধানমন্ডির সুধা সদন থেকে শেখ হাসিনা যেন বের হতে না পারেন সে জন্য তার বাড়ির সামনে আড়াআড়িভাবে ফেলা হয় সিটি করপোরেশনের ময়লাভর্তি দুটি ট্রাক। পুলিশের এই অবস্থানের কারণে শেখ হাসিনা সেদিন গাড়ি বাদ দিয়ে হেঁটেই যোগ দেন পল্টনের সমাবেশে।
আট বছর পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কেবল দৃশ্যপটে দুই নেত্রী দুই অবস্থানে। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের জাতীয় পতাকা নিয়ে ঢাকায় আসার কর্মসূচি দেন খালেদা জিয়া। কিন্তু পুলিশ তার গুলশানের বাড়ির সামনে বালু ভর্তি ট্রাক ফেলে বাধা দেয় খালেদা জিয়াকে। পুলিশের বাধার কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন আর ভ-ুল হয়ে যায় বিএনপির ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি।
৫ জানুয়ারির আগে গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করতেও একই পদ্ধতির আশ্রয় নেয় পুলিশ। কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি ১১টি ট্রাক রাখা হয় এবার। যদিও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি করেনি সরকার। তবে কেন এসব ট্রাক এভাবে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি পুলিশ।
জানতে চাইলে বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘বিরোধী দলের ওপর এমন নির্যাতনের নজির অতীতে দেখা যায়নি। এভাবে দেশের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে অবরুদ্ধ করে রেখে সরকার নিন্দনীয় কাজ করেছে।’
একই কাজ তো বিএনপি সরকারের আমলেও হয়েছিল, কিন্তু নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনার বাড়িতে গিয়ে নেত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন, এবার বিএনপি কেন সেটা করছে না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গুলশানে কেউ গেলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে হলেই তাদের মেরে কিংবা গুলি করে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের তো চেয়ারপারসনের কাছেই পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে না।’
খালেদা জিয়ার মতো একজন নেত্রীকে এভাবে অবরুদ্ধ করা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিজেই নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন। যে কারণে গুলশানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাকে তো অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি।’
মাঠেই নামতে দেওয়া হয়নি বিএনপিকে
ছাত্রলীগের প্রতিবাদের মুখে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি করতে না পারার নজির অতীতে ছিল না। কিন্তু গত ২৭ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনের পূর্ব ঘোষিত জনসভা বাতিল হয়েছে গাজীপুরে। ঘটনা এখানেই শেষ হবে তা নয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির জন্য ক্ষমা না চাইলে খালেদা জিয়া যেখানেই সমাবেশ করবেন সেখানেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ছাত্রলীগ। একই কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
এই অবস্থায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে ছড়াচ্ছে হতাশা। প্রমাণ মিলেছে গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে এবং ২৯ ডিসেম্বর সারা দেশে দলটির ডাকা হরতালে। মাঠে ছিলেন না নেতারা। কর্মীরাও থেকেছেন ঘরে বসে।
এই বাস্তবতায় হঠাৎ গত ৩১ ডিসেম্বর ‘জরুরি’ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জরুরি হিসেবে ডাকা এই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘোষণা দেবেন এমনটি ভেবেছিলেন দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুরনো দাবি তোলা ছাড়া তার বক্তব্যে ছিল না কোনো নতুনত্ব। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছরের মধ্যে খালেদা জিয়ার এই সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেবেন, সেটিই মনে করা হচ্ছিল।
কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচনের যে দাবি তুলেছেন, তাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, খালেদা জিয়া যে কথা বলেছেন, তা তিনি এক বছর ধরেই বলে চলেছেন। সরকারের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্ন আসবে ২০১৯ সালের নির্বাচনের এক বছর আগে। তাই আলোচনায় বসতে হলে বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত।
এর আগে একাধিকবার বিএনপি আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও পিছিয়ে এসে হতাশ করেছে কর্মী-সমর্থকদের। সব শেষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের ‘কঠোর’ আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসছিল বিএনপি। কিন্তু আগের মতোই এবারও মাঠেই নামতে পারেনি বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকার এরই মধ্যে এক বছর পুরো করেছে। এখন এসে এ ধরনের সাত দফায় তারা গুরুত্ব দেবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। বরং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে হয়ত কোনো ফল পাওয়া যেত। সেক্ষেত্রে চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলন থেকে আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি কিংবা ধারণা দিলে হয়ত সুফল বেশি পাওয়া যেত।’
এ নিয়ে কথা বলতেও বিব্রতবোধ করছেন বিএনপি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। হঠাৎ কোনো মন্তব্য করে বিপাকে পড়তে চান না, ফেলতে চান না দলকে। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দফায় দফায় ঘোষণা দিলেও আন্দোলন জমাতে পারেনি বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের ডাকেও মাঠে নামেনি নেতা-কর্মীরা।
কারণ কী? জানতে চাইলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য এম কে আনোয়ার। বলেন, ‘এ নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। যা বলার বিএনপি চেয়ারপারসন তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে একই প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাদের কথার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ বিএনপি আন্দোলন করছে বলেই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা হচ্ছে। আর আপনারা যদি দাবি করেন বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে না, তাহলে আগে মেনে নিতে হবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার যে সব মামলা করছে ওই মামলাগুলো মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’
তবে বিএনপি নেতাদের অনেকে মনে করেন, আন্দোলনের ঘোষণা ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল বরাবরই। সরকারবিরোধী কর্মসূচি নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দায়িত্বও ঠিকভাবে বণ্টন করা যায়নি। কারা আন্দোলনকে সামনে নিয়ে যাবেন তাদের তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়নি। উদাহরণ টেনে তারা বলেন, বিএনপি আন্দোলনের খেলার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু দল ও দলের অধিনায়ক কারা হবেন তা ঘোষণা দেয়নি। তাহলে খেলা হবে কীভাবে?
বিএনপি এই আন্দোলনের ডাককে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল। তারা বলছেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বলেছিল নির্বাচন প্রতিহত করবে। নির্বাচনের পর বলল দুর্বার আন্দোলনে সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করবে। এখন আবার সাত দফা দাবি নিয়ে সামনে এসেছে। জনগণ এ থেকে যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। আদতে বিএনপির আন্দোলনের ঘোষণা যে ফাঁকা বুলি তা আর কাউকে বলতে হবে না, বিএনপি নিজেই তার প্রমাণ দিয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, ‘তারা কি আন্দোলন করবে? কোন ইস্যুতে আন্দোলন করবে? এগুলো ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়। অতীতে যতবারই তারা হরতাল-অবরোধ দিয়েছে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই।’
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা মনে করেন, বিএনপির আন্দোলন করার কোনো ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা যদি থাকত তাহলে এক বছর কম সময় নয়। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করেছে আন্দোলনের কথা বললে সরকার ভয় পাবে। প্রথমে রোজার ঈদের পর পরে কোরবানির ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে না থাকায় এসবের কোনোটাই কাজে আসেনি।’
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির সাত দফাকে কৌশল হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, এই ঘোষণা বিএনপির আন্দোলনে কিছুটা হলেও জোর দেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আসলে রাজপথে আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কৌশলও গুরুত্বপূর্ণ। কৌশল নিয়ে না আগালে সফলতা আসবে না।’ তিনি মনে করেন, বিএনপি বিগত সময়ে কৌশলগতভাবে পিছিয়ে রয়েছে বলে আন্দোলনে গতি পায়নি। তবে রাজনৈতিকভাবে দলটি খাদের কিনারে গেছে এটা বলা ঠিক হবে না।
খালেদা জিয়ার আহ্বানেও সাড়া নেই
গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলীয় একাধিক বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতাদের ভর্ৎসনা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দল করতে হলে অবশ্যই রাজপথে নামতে হবে, তা না হলে দল ছাড়তে হবেÑখালেদা জিয়ার এমন হুঁশিয়ারির পরও নেতাদের ওই অর্থে রাজপথে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এ নিয়ে বিএনপির ভেতরেও ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ মনে করেন, কেন্দ্রের বেশির ভাগ নেতাই নিজেদের সহায়-সম্পদ ও জীবনের মায়া করে মুখে আন্দোলনের কথা বললেও রাজপথে নামতে আগ্রহী নন। জীবনের এই পর্যায়ে এসে জেলজুলুমে হয়রানি হতে চান না তারা।
দলীয় সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ডও বিষয়গুলো জানে। কিন্তু খালেদা জিয়া নিজেও নিরুপায়। দলীয় এই দুর্যোগের সময় এদের দূরে ঠেলে দিলে তার আশপাশে দাঁড়ানোর মতো নির্ভরশীল কাউকে পাচ্ছেন না তিনি। যে কারণে এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তিনি।
সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ বিএনপির আন্দোলন
প্রতিনিয়ত কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা আসছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুখ থেকে। বিএনপি চেয়ারপারসনও একাধিকবার আন্দোলনের কথা বলেছেন। কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। আন্দোলন আটকে থাকছে সংবাদ সম্মেলন, দলীয় বিবৃতি, সভা-সেমিনারে। এতে হতাশা বাসা বেঁধেছে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনেও। তারা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে ছিলেন কেন্দ্রের দিকে। কিন্তু কেন্দ্রের অপরিকল্পিত ও অপ্রস্তুত আন্দোলনে তারা আশাহত।
ফেনী জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘গত মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দৌড়ের ওপর আছি। ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। একের পর এক অসত্য মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এখন বাড়িঘর রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আশায় ছিলাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কেন্দ্র থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা আসবে। সারা দেশে আন্দোলন হবে। কিন্তু বাস্তবে তো কিছু হলো না। নির্বাচন হলো আর সরকারও বেশ ভালোভাবেই ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে তো আর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধরে রাখা সম্ভব হবে না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এভাবে দিনের পর দিন যদি ঘরোয়া কর্মসূচির মধ্যে বিএনপি থাকে তাহলে এক সময় বিএনপি রাজপথের রাজনীতি থেকে বাদ পড়বে। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে যেভাবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতন করছে তাতে তারা মাঠে দাঁড়াতে পারছে না। কেউ তো আর স্বেচ্ছায় নিজের জীবন বিপন্ন করতে চাইবেন না।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে রাজপথে যে আন্দোলন-কর্মসূচি হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না। কিন্তু আন্দোলনও থেমে নেই। সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে আন্দোলন চলছে। বিএনপির কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে, তা আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। আর এর মধ্য দিয়েই আমরা আন্দোলন- সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের হয়ত স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু জানুয়ারিতে আন্দোলনের গতিপথ পরিবর্তিত হবে এবং তীব্রতা বাড়বে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়ে রাজপথে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আর বিএনপি রাজপথে থাকে বলেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়। এই খবর আপনাদের গণমাধ্যমেই উঠে এসেছে। তবে বিএনপি সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তাই বিএনপি সশস্ত্র আন্দোলন করছে না। কিন্তু সরকার সশস্ত্র আন্দোলনকে উস্কে দিচ্ছে।’
বিএনপি নেত্রীর সাত দফা নিয়ে মিশ্র মত
৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছরপূর্তি সামনে রেখে বছরের শেষ দিন গত ৩১ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বহুদিন পর সাংবাদিকদের প্রশ্নেরও উত্তর দেন। খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো হলো-১. জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। ২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে বর্তমান আরপিও সংশোধন করা যায়। ৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিতে গঠিত নির্দলীয় সরকার দায়িত্ব নেবে। ৪. ভোটের তারিখ ঘোষণার পর সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ৫. সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানোর পাশাপাশি চিহ্নিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে। ৬. সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ৭. এ সরকারের সময়ে বন্ধ করে দেওয়া সব সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে এবং আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে। আগামী ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে সারাদেশে কালো পতাকা হাতে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। ওইদিন কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি সমাবেশের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগ তাৎক্ষণিকভাবে খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি দেবেন, আলটিমেটাম দেবেন, হরতাল দেবেন এ ধরনের গুঞ্জন-গুঞ্জরণ শেষ পর্যন্ত অসার প্রতিপন্ন হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে নতুন কিছু বলেননি, যা বলেছেন সে জন্য সংবাদ সম্মেলন করা আদৌ প্রয়োজন ছিল কি না তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
হতাশ নেতা-কর্মীরা
আন্দোলন-কর্মসূচির পরিবর্তে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাত দফা দাবি পেশে হতাশ হয়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিনটিকে সামনে রেখে কঠোর আন্দোলনের অপেক্ষায় থাকা নেতা-কর্মীরা এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা থেকে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির কোনো কোনো সদস্য পর্যন্ত এতে হতাশ ও বিস্মিত। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারাও ক্ষোভ এবং আশাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা বলেন, তারা আশা করেছিলেন, নেত্রী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। অন্তত একটি আলটিমেটাম দেওয়া হবে। তা না হওয়ায় মাঠ নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হওয়ার পরিবর্তে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলেই মনে করেন ওই নেতা।
হরতালের কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে থাকেন না বলে খালেদা জিয়া দাবি করেন। এ ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মাঠ নেতারা।
২০ দলীয় জোটের শরিক দলের এক নেতা বলেন, জোট নেত্রীর কাছে এ মুহূর্তে কেউ এমন নরম সুরের বক্তব্য আশা করেনি। সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে যে হার্ডলাইনে চলে গেছে তা থেকে নেতাদের রক্ষা করতেই হয়ত কঠোর কর্মসূচি থেকে বিরত থাকছেন বিএনপিপ্রধান। এতে জনগণের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছাবে বলেও মনে করেন তিনি। আন্দোলনের গতি আরও কমে আসতে পারে বলে ধারণা করেন ওই নেতা।-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।