ঢাকা: অবশেষে পিছু হটেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শেষমেশ বিদেশে বাংলাদেশের নয়টি দূতবাসের শ্রম উইংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তারা। গত ২৪ ডিসেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিতে অনুরোধ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত একটি সূত্র ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছে।
সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে চিঠিতে জানানো হয়, ক্যানবেরা, বন্দরসেরি বেগওয়ানে বাংলাদেশে হাইকমিশন, এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে, মিলাননে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলে, মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে, প্রিটেরিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে, মাদ্রিদে বাংলাদেশ দূতাবাসে, জেনেভায় জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে এবং ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতবাসে শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তারা যোগ দেবেন।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট সংগ্রহের বিষয়ে চিঠি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট সরবরাহ করা হবে। যাতে তারা সময় মতো কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারেন।’
সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, প্রবাসীদের কল্যাণ ও নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির জন্য নতুন করে ১২টি দেশে শ্রম উইং খুলেছিল সরকার। এক বছর আগে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদ তৈরির অনুমোদন দেয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে শ্রম উইংয়ে প্রথম সচিব পদে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী তাদের নিয়োগ অনুমোদন দেয়ার পরও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অহযোগিতার কারণে সরকারের মহৎ এই উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছিল।
গত ২৩ নভেম্বর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অফিস করতে এলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন শ্রম উইংয়ে নিয়োগ পাওয়া প্রথম সচিবরা। গ্রিসে নিয়োগপ্রাপ্ত ও যোগদানের জন্য সাত মাস ধরে অপেক্ষমাণ প্রথম সচিব ড. ফারহানা নূর চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নিয়োগ পেয়েছি। কিন্তু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক পাসপোর্ট ইস্যু না করার কারণে আমরা স্ব স্ব কর্মস্থলে যেতে পারছি না। সামাজিক এবং পেশাগত অমর্যাদাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আমাদের জন্য। জানি না আমাদের কী অপরাধ।’
সব শুনে প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন, ‘মন্ত্রী বা সচিব থাকতে হলে সরকারের কথা শুনতে হবে। প্রবাসীদের কল্যাণে যেধরনের উদ্যোগ নেবে তা বাস্তবায়নে সরকারের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের কাজ করতে হবে। এনিয়ে গড়িমসি সহ্য করা হবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর পিছু হটেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, আরও ১১টি দেশে শ্রম উইং খোলা হবে। এই উইংগুলো প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কল্যাণের বিষয়ে দেখাশোনা করবে। পাশাপাশি নতুন বাজার, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কাজ করবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মনে করছে, বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট মিশনে সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে পারেন ¯্রফে এই আশঙ্কায় নতুন শ্রম উইং খোলা ও সেখানে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিভিন্ন মিশনে কনস্যুলার উইং, কমার্স ও ইকনোমিক উইং কোথাও কোথাও প্রতিরক্ষা উইংসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে যেসব কর্মকর্তারা কাজ করছেন সংখ্যার হিসাবে তাদের চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অধিকাংশ মিশনে কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিষয়টিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহজভাবে নিতে পারছে না বলে কূটনৈতিক পার্সপোর্ট সরবরাহে দেরি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, শ্রম উইংয়ের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনারদের অধীনে কাজ করবেন। তাই তাদের কাজে বৈদেশিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। তাছাড়া যেসব দেশে শ্রম উইং আছে, সেসব জায়গায় এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই শ্রম উইং খোলা এবং পদ সৃষ্টিতে কোনো ধরনের বাধা নেই।
দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ আছে, বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে কার্যত কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। প্রবাসীরা বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়লেও প্রয়োজনীয় সেবা পান না। অনেক ক্ষেত্রে একাধিকবার চেষ্টা করেও রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার, এমনকি পররাষ্ট্র ক্যাডারের একজন দ্বিতীয় সচিবের সাথে দেখা করাও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রবাসীদের কথা চিন্তা করেই দূতাবাসগুলোতে নতুন করে শ্রম উইং খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ৮৭ লাখ ১৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশে কর্মরত। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ১৩ শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। যা জিডিপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত।
আইওএমের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের ৭৫টি দেশের রাজধানীতে বর্তমানে নূন্যতম দশ হাজার বাংলাদেশি আছেন। এই ৭৫টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস এবং প্রবাসীকল্যাণ উইং খোলা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
(ঢাকাটাইমস/ ২৯ ডিসেম্বর/ এইচএফ/ঘ.)