বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে প্রশাসনে এক সময় নিজেকে জাহির করতেন আজিজুর রহমান। বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকতে তিনি বাবরের নিজ জেলা নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ছিলেন। জনপ্রশাসনের অনেকের মুখে শোনা যায়, বাবর প্রকাশ্যে তার প্রশংসা করে বলতেন, ‘আমার ডিসির মতো ডিসি সারা দেশে দ্বিতীয়টি নেই।’ লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘনিষ্ঠজন, প্রশাসনের ’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা আজিজুর রহমান এখন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান। তার অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি আর নারীপ্রীতি সংস্থায় নানা মুখরোচক গল্পের জন্ম দিচ্ছে প্রতিদিন।
বিএনপি আমলে প্রশাসনে সুবিধাভোগী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়ার অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বেশ লেখালেখিও হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠদের মুখে শোনা যায়, ছাত্র বয়সে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তোলা একটি ছবিই আজিজুর রহমানের সম্বল। এই ছবি দেখিয়ে নিজেকে বড় আওয়ামী লীগার বলে দাবি করেন। এই ভারপ্রাপ্ত সচিবের ‘নারীপ্রীতি’ নিয়েও প্রশাসনে আছে মুখরোচক আলোচনা। পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে নারী সহকর্মীতে বেশি ‘স্বাচ্ছন্দ্যবোধ’ করেন এমন কথা তিনি নিজেই নাকি বলে বেড়ান ঘনিষ্ঠদের কাছে।
অনিয়ম ও দুর্নীতিতেও কম যান না আজিজুর রহমান। মহাপরিচালক থাকতে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখে মুখে। ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, নিজের নামের পাশে বসানো ‘ড.’ (ডক্টর) ডিগ্রিটাও বিশেষভাবে ‘ম্যানেজ’ করেছেন। এক্ষেত্রেও সরকারি নিয়ম ভঙের অভিযোগ সরকারের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। চাকরিতে থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিভাগীয় অনুমতির প্রয়োজন হয়। আবার ডিগ্রি অর্জনের পর এটি নামের পাশে ব্যবহারের জন্যও অনুমতি লাগে। অথচ এসব নিয়মের সবকয়টি পাশ কাটিয়েছেন আজিজুর রহমান। এমনকি অ্যামেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামের যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়েছেন সেটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদিত নয় বলে জানা গেছে।
এতসব অভিযোগের পরও স্বপদে বহাল আছেন আজিজুর রহমান। স্বাভাবিক নিয়মে এ বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর চাকরি থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তিনি সরকারি চাকরি করছেন ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা সনদের জোরে।
জানতে চাইলে আজিজুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সনদ নিয়ে সমস্যা তো সমাধান হয়েছে। এখন কোনো সমস্যা নেই।’ অন্য অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব।’ পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির অভিযোগ
একাত্তরে কোথায়, কোন সেক্টরে, কার অধীনে যুদ্ধ করেছেন এর কোনো জবাব নেই আজিজুর রহমানের কাছে। অথচ তার দাবি, গেজেটে তার নাম রয়েছে। সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) থেকে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তার নামে যে তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়েছিল সেখানে তার নাম নেই। মুক্তিযোদ্ধা কোনো কর্মকর্তা হলে গেজেটের একটি ঘরে ‘পিএসসি সুপারিশকৃত’ বলে উল্লেখ থাকে। কিন্তু ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল কর্মকর্তাদের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট প্রকাশিত হলেও এতে পিএসসি সুপারিশকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়নি। এ থেকে বোঝা যায় যে, তিনি শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। এ ছাড়া যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চাকরিতে যোগদানের সময় ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ওই সময় সনদসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছিলেন। যারা সনদ দেখাতে পারেননি তারা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত সনদ নিয়েছেন এবং ওই সনদ জমা দিয়েছেন। কিন্তু আজিজুর রহমান এর কোনোটিই দেখাতে পারেননি।
অনিয়মই যেখানে নিয়ম
ট্যারিফ কমিশনের গাড়ি ব্যবহার ও বণ্টনেও নিয়মনীতি শিকেয় তুলেছেন চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান নিজে চড়েন মিতসুবিসি সিলভার রঙের পাজেরোতে। যার নম্বর ঢাকা মেট্রো গ- ২৬০৩। অথচ গাড়ির লগবুক বলছে এটি ব্যবহার করেন চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব, একজন নারী কর্মকর্তা ও কমিশন সচিব। গাড়ি কেনার জন্য ঋণও নিয়েছিলেন আজিজুর রহমান। প্রতি মাসে গাড়ির খরচ বাবদ ৪৫ হাজার টাকা করে তোলেন সরকারি কোষাগার থেকে। কিন্তু দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ট্যারিফ কমিশনের গাড়িতে। গাড়ির চালক, জ্বালানি সবই মেটাচ্ছে কমিশন।
আজিজুর রহমানের স্ত্রী সরকারি মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশন পুলের এক চালক বলেন, ‘ম্যাডামের জিপ গাড়ি চালায় ট্র্যারিফ কমিশনের ড্রাইভার (আউটসোর্সার) রাজিব। তিনি কমিশন থেকে বেতন পান।’
কমিশন সূত্র জানায়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে গাড়ি বণ্টনে পদমর্যাদার নিয়ম ভেঙেছেন চেয়ারম্যান। এখানেও স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার নজির স্থাপন করেছেন। নিজের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বেতন স্কেলে ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা ট্যারিফ কমিশন সচিব মো. ইকবাল হোসেন, উপ-প্রধান বেগম ফৌজিয়া খান, পিআরও এবং পিও এইচ এ এম শরিফুল ইসলামকে দিয়েছেন প্রটন ব্র্যান্ডের একটি নতুন গাড়ি। যার নম্বর-২৪৫৪। একই সঙ্গে গাড়ি বণ্টনের আদেশে জুড়ে দেওয়া আছে কমিশন পুলে ব্যবহারের বিষয়টি। যাতে তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতে পারেননি গাড়িটি। অথচ এই গাড়িগুলো কেনা ও এর বিপরীতে ড্রাইভারের পদ সৃষ্টির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় বেতন স্কেলের ৩য় গ্রেডের বিভিন্ন ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তারা পূর্ণকালীন গাড়ির সুবিধা ভোগ করেন। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম-প্রধান পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই সুবিধা দেওয়া হলে ন্যায় ও সমতার বিধান হবে। অন্যদিকে কমিশনের গুণগত মান উন্নত হবে এবং কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়বে। ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট ট্যারিফ কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমানের চিঠির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ি কেনা ও ড্রাইভারের পদ সৃষ্টির অনুমতি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গাড়ি কিনলেও দেওয়া হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যানের নেকনজরে থাকা কর্মকর্তাদের। অথচ কথা ছিল এসব গাড়ি পাবেন কমিশনের যুগ্ম-প্রধানরা।
ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নিজের আস্থাভাজন কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে কমিশনের অন্দরে অনিয়মের বলয় তৈরি করেছেন আজিজুর রহমান। এক নারী কর্মকর্তাও (ফৌজিয়া খান) আছেন এই চক্রে। যিনি উত্তরায় রাজউকের একটি প্রকল্পে উপ-পরিচালক ছিলেন। সেখান থেকে দেড় মাসের মাথায় তাকে উপ-প্রধান পদে বদলি করা হয় ট্যারিফ কমিশনে। চেয়ারম্যানের আনুকূল্য নিয়ে কমিশনের বিভিন্ন কাজে ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন এই নারী কর্মকর্তা। বিস্ময়করভাবে একাই আঁকড়ে আছেন তিন-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। একদিকে তিনি কমিশনের উপ-প্রধান, পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সহকারী সচিব (প্রশাসন) এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদেও কাজ করছেন। একই সঙ্গে একাধিক পদে থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছেন এই নারী কর্মকর্তা।
কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক অনিয়মের কাজটি সুচারুরূপে করার জন্যই চেয়ারম্যান ফৌজিয়া খানকে একসঙ্গে একাধিক পদে বসিয়ে রেখেছেন। তিনিও সে কাজটি করছেন ঠিকঠাক। সহকারী সচিব হিসেবে নিজে বিভিন্ন প্রস্তাব তৈরি করছেন। এর বিপরীতে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে অর্থ ছাড়াও হচ্ছে তার হাত দিয়ে। গত দু-তিন মাসে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে বছরের মোট বাজেটের অর্ধেকের বেশি ব্যয় করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। ফৌজিয়া খান এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জের অ্যাসিল্যান্ড ছিলেন। ছিলেন ঢাকা কালেক্টরেটেও। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য ছিল বলে প্রশাসনে আলোচনা আছে।
জানতে চাইলে ফৌজিয়া খান বলেন, ‘আমার ব্যাপারে অফিসিয়াল কিছু জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ও সচিব মহোদয়কে জিজ্ঞাস করতে হবে। আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’ এক সঙ্গে তিনটি পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন তিনটি পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এটা আমি আপনাকে বলতে পারব না। এটা চেয়ারম্যান মহোদয় বলতে পারবেন।’
চলাফেরার জন্য গাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ফৌজিয়া খান বলেন, ‘চলাফেরার জন্য আমাকে কোনো গাড়ি দেওয়া হয়নি।’ কিন্তু অফিস আদেশ তো হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আদেশ দিলে তো সচিব মহোদয় দিয়েছেন। তাকেই জিজ্ঞাসা করুন।’
সূত্র জানায়, আগামী ৩ জানুয়ারি গাজীপুরের আনসার একাডেমিতে বার্ষিক বনভোজনে যাবে ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বনভোজনকে সামনে রেখে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের অজুহাতে চাঁদা আদায় চলছে। ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে কাজের সুবাদে জড়িত দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে আছে ওয়ালটন, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যাল, বিল্ডট্রেড, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, প্রাণ, এসইআই, স্কয়ার ইত্যাদি। এছাড়া বিএসআরএম স্টিলের ট্যারিফ সম্পর্কিত একটি কাজের জন্য অতিরিক্ত এক লাখ টাকা চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, বনভোজনে খেলার জন্য চাঁদা আদায়ের মূল দায়িত্বে আছেন কমিশনের সহকারী প্রধান বেল্লাল হোসেন মোল্লা, সচিব ইকবাল হোসেন, উপ-প্রধান ফৌজিয়া খান। তারা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে এই টাকা আদায় করছেন। সরকারি গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়িতে পতাকার স্ট্যান্ড লাগানোর নিয়ম না থাকলেও বেল্লাল হোসেন নিজের গাড়িতে তা লাগিয়েছেন। পাশাপাশি গাড়ির সামনে বড় অক্ষরে লিখেছেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।’
জানতে চাইলে বেল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ট্যারিফ কমিশনে আমার জানামতে কোনো ধরনের আর্থিক দুর্নীতি নেই। ফাইল আটকে ঘুষ খাওয়ার নজিরও এখানে নেই। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি কারো কাছ থেকে এক টাকা ঘুষ নিয়েছি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেব।’ বনভোজনে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারো জন্য এটা বাধ্যতামূলক করে দেইনি। আমরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বনভোজনের কথা জানিয়েছি। স্বেচ্ছায় যে যা দিয়েছে তাই নিয়েছি।’
গাড়িতে স্ট্যান্ড লাগানো এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লেখার বিষয়ে বেল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘স্ট্যান্ড এখন নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিখেছি। কারণ, মাঝেমধ্যে অভিযানে যেতে হয়। গাড়িটি কিনেছি নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায়।’
আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও যত অভিযোগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) থাকতে আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে তাকে ওএসডি করা হয়। অধিদপ্তর সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য। এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আজিজুর রহমানের সময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে লোপাটের একটি শক্ত চক্র গড়ে উঠেছিল। যাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারত না। ডিজির আস্থাভাজন হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না।’
পরিসংখ্যান বিভাগেও কর্মরত ছিলেন আজিজুর রহমান। সেখানেও তাকে নিয়ে নানা কানাঘুষা আছে। সূত্র জানায়, পরিসংখ্যান বিভাগের উপসচিব ছিলেন ইকবাল হোসেন। আজিজুর রহমানের সঙ্গে তার দহরমমহরম ছিল প্রকাশ্যে। যে কারণে আজিজুর রহমান ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে এলে ইকবাল হোসেনকেও কমিশনের সচিব হিসেবে বদলি করে আনা হয়েছে। কর্মকর্তা ইকবালের নৈতিক চরিত্র নিয়েও নানা মুখরোচক আলোচনা আছে পরিসংখ্যান বিভাগে।
সরকারি চাকরিজীবীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগে বিভাগীয় অনুমতির প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা শেষে অর্জিত ডিগ্রির কথা সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হয়। নামের পাশে নতুন ডিগ্রি ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের অনুমতি লাগে। অথচ আজিজুর রহমান এসবের কোনোটিই মানেননি বলে জানা গেছে। ট্যারিফ কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে তার জীবন-বৃত্তান্তে নামের শুরুতে ‘ড.’ দেখা গেছে। ট্যারিফ কমিশনের যাবতীয় কাগজপত্রে তিনি ‘ড.’ লেখেন। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো নথিপত্রেও ‘ড.’ লেখেন।
কথা বলার জন্য সচিব ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। (সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে)
(ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/এমএটি)