logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
পুলিশকে ক্লান্ত করতেই টানা অবরোধ
কিরণ সেখ
২৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০৫:০৬
image


গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং এ কারণে অবরোধ ও হরতালে সৃষ্ট নৃশংস সহিংসতার সব দায় এড়িয়ে তা সরকারের ঘাড়ে ফেলেছে বিএনপি।

দলটির একাধিক স্থায়ী কমিটির নেতা বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। তথাকথিত পেট্রল বোমা এবং ককটেল বোমা ফাটানোর ঘটনাগুলো সরকারের দলীয় সন্ত্রাসী এবং এজেন্টরাই করছে।

বিএনপির চলমান আন্দোলনকে বিপথে চালিত করতে এবং বিএনপিকে দোষারোপ করতেই এটা করা হচ্ছে। এর দায়ভার কোনোভাবেই বিএনপির ওপর পড়ে না। বিএনপি সাধারণ মানুষের দল, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন করছে। যারা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন তারা সরকারের কূটকৌশলের শিকার।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুইজন উপদেষ্টাম-লীর সদস্য বলেন, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে সহিংসতা হবেই, রাস্তায় যানবাহন নামলে আগুন লাগানো হবে এবং ভাংচুর হবে, এ ঘটনা হরতাল ও অবরোধে স্বাভাবিক বিষয়। এর জন্য একতরফা বিএনপিকে দায়ী করলে হবে না, সরকারি দলও সমানভাবে দায়ী। কারণ সরকার যদি বিএনপির দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে পদত্যাগ করে তাহলে এ সব সহিংসতার নিরসন হতো।

গত ১৯ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, অবরোধের আগে দেশে কোনো সহিংসতা ছিল না, অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পরই দেশে সহিংসতা হচ্ছে। তাহলে এই সহিংসতার দায়ভার কেন আপনি বহন করবেন না? জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, সহিংসতার দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি নয়। অতীতে দেশে যে সহিংসতা হয়েছে তা আওয়ামী লীগের দ্বারাই হয়েছে এবং বর্তমানেও তারাই সহিংসতা করছে।

অবরোধ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এই অবরোধ কর্মসূচি কবে, কখন এবং কোন সময় প্রত্যাহার করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া বলতে পারবেন, অন্য কেউ নয়।

চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে যে সহিংসতা হচ্ছে তার দায়ভার বিএনপি কেন বহন করবে না এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে জমির উদ্দিন সরকার বলেন, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তবে এই বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়া যা বলবেন সেটাই আমার উত্তর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক প্রভাবশালী সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, বিএনপি বারবার বলছে দেশে চলমান যে সহিংসতা হচ্ছে তার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। কারণ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এক সপ্তাহের  ভেতর বিএনপি নামক বস্তু বাংলাদেশের মাটিতে থাকবে না। আর তাদের এই ভাষাই প্রমাণ করে দেশে বর্তমানে যে সব সহিংসতা হচ্ছে তা আওয়ামী লীগ ও সরকার করছে। তাই এ সব সহিংসতার দায়ভার আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সারওয়ারী রহমান বলেন, অবরোধ কর্মসূচি চলছে, সরকার দাবি না মানা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। অবরোধের বিকল্প হিসেবে বিএনপি নতুন কি কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগুতে চাচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়নি। আর যখন নতুন কর্মসূচি নির্ধারিত হবে, তখন আপনাদের এই বিষয়ে অবগত করা হবে।

চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে সারওয়ারী রহমান বলেন, আন্দোলনকে বিপথে নেওয়ার জন্যই আওয়ামী লীগ সারা দেশে সহিংসতা করে এর দায়ভার বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। তাই রাজনৈতিক সহিংসতার সব দায়ভার আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে।

আওয়ামী লীগ দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার মূল হোতা উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি সহিংসতার রাজনীতি বিশ্বাস করে না এবং সহিংসতাও করে না। তাই সব সহিংসতার দায়ভার আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে অভিযুক্ত করে তাদের ক্লান্ত করতেই বিএনপি টানা অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে যাবে বলে জানা গেছে। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীগুলোতে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের নিয়োগ দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আর তাই এদের ক্লান্ত করতেই অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে। কারণ ইতিমধ্যেই গত ১৮ দিনের অবরোধে পুলিশের কাজে ক্লান্তি লক্ষ্য করা গেছে। সুতরাং এদের আরো ক্লান্ত করতেই হরতাল-অবরোধের সময় ও পরিধি বাড়ানো হবে।

অপরদিকে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারা দেশে নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিএনপির পিকেটাররা নাশকতা করবে সেখানেই এই কমিটির সদস্যরা সক্রিয় হবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নাশকতা প্রতিরোধ করে নাশকতাকারীদের পুলিশে সোপর্দ করা হবে এবং এর মাধ্যমে সারা দেশে সহিংসতার মাত্রা কমানো হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেলিন বলেন, বিএনপি নিজেদের অপরাধ ও সহিংসতা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ওপর দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ দেখছে কারা অবরোধের ডাক দিয়ে গাড়িতে আগুন ও সহিংসতা সৃষ্টি করছে।

সাপ্তাহিক এই সময়ের সৌজন্যে