logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
৭ খুনের মামলা আটকে আছে যে কারণে
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
১৭ জানুয়ারি, ২০১৫ ১১:৪৮:১১
image


নারায়ণগঞ্জ: র্দীঘ প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী  সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিল নূর হোসেনকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে না পারায় আটকে আছে আলোচিত এই মামলার অভিযোগপত্র। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতদেন স্বজন, আইনজীবী, ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

 সুশীল সমাজরে প্রতিনিধিরা বলছেন, নূর হোসেন দেশে ফিরে এলে সরকারি দলের অনেক রাঘব-বোয়ালের নাম বেড়িয়ে আসতে পারে। আর এ জন্যই সরকার নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা টালবাহানা করছেন। এদিকে এ হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে হাতাশ মামলার বাদী নিহত নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি । তিনি দাবি করেন দ্রুত নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে এনে এ হত্যাকান্ডের পেছনে কারা কারা জড়িত, এই হত্যাকা-ে কারা অর্থের যোগান দিয়েছে তাদের চিহিৃত করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার। তবে পুলিশ বলছে, মামলার তদন্তের বেশীর ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনলেই দ্রুত অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

পুলিশ জানায়, ৭ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ  ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার মধ্যে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন এবং নূর হোসেনর দুই সহযোগীসহ মোট ১৯ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করে  আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন। এছাড়া ১২ র‌্যাব সদস্যসহ  মোট ১৬ জন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।

নিহত নজরুলের স্ত্রী ও মামলার বাদী  সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, ৭ হত্যার তদন্ত প্রথম দিকে দ্রুতগতিতে চললেও বর্তমানে ধীর গতিতে এগুচ্ছে। তিনি মামলার তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন ভারত থেকে নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। অথচ হত্যাকান্ডের পর প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে আনছে-না। তিনি বলেন, গনমাধ্যমে সংবাদ এসেছে ভারত সরকার নূর হোসনেকে ফিরিয়ে দিতে চান। তবে কেন তাকে ফিরিয়ে আনতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছেনা, সে প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না।

সাত খুন মামলার আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন সাত মাস আগে ভারতে  গ্রেপ্তার হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোন আবেদন করা হয়নি। এমনকি ভারতের আদালতে এ ধরণের কোনো আবেদনও জমা হয়নি।   সরকার প্রথম থেকেই সাত খুনের ঘটনা নিয়ে টালবাহান করে আসছিলো। আইনজীবীদের উচ্চ আদালতে রিটের কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিন র‌্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হন।

নারায়ণগঞ্জের এই আইনজীবী বলেন, সরকারই নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনলে অনেক গডফাদারের নাম বেরিয়ে আসবে। এই জন্যই সরকার গড়িমসি করছে। সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

সাত খুনের ঘটনা সম্পর্কে নারায়নগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খোকন সাহা সাত খুনের সাথে জড়িত সব আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। তবে তিনি বলেন, সাত খুনের ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্তধীন বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করতে চাই না।

নারায়ণগঞ্জ নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, সাত খুন নারায়ণগঞ্জের জন্য কলংকের বিষয়। এই হত্যাকান্ডে পেছনের যারা কলকাঠি নেড়েছে তারা ধরাছোয়ার বাইরে। যারা নির্দেশ পেয়ে  হত্যাকা- ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত বিলম্বিত করে হত্যাকান্ডের মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে।

মানবাধিকার কমিশন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাছুম বলেন, সাত খুনের ঘটনায় শুধু সাতটি পরিবার নয়। দেশে ১৬ কোটি মানুষ এই বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে। এই হত্যাকান্ডের বিচার বিলম্বিত বা ডিপফ্রিজে নেয়া হলে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে মানুষ গর্জে উঠবে। তিনি বলেন, নূর হোসেনের গডফাদাররাই তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, সেভেন মার্ডার ও ত্বকী হত্যা নারায়ণগঞ্জের ইমেজ ক্ষুন্ন করেছে। নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে  আনলে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। শুধু তিন র‌্যাব কর্মকতা নয়, এই হত্যাকান্ডের পেছনে আরো অনেক গডফাদার জড়িত বলে আমারা ধারনা করছি। এই ভয়ে সরকার নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিলম্বিত করছে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, সাত খুন মামলার তদন্ত বেশির ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছে পুলিশ। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। প্রধান আসামি নূর হোসেন কে দেশে ফিরিয়ে আনলেই যত দ্রুত সম্ভব আদালতে অভিযোগপত্রটি দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপিলে সিটি কর্পোরেশনের দুই নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর  নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, নূর হোসেনের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকার চুক্তিতে র‌্যাব ৭ জনকে অপহরণ ও খুন করেছে। তার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭ জানুয়ারি /প্রতিনিধি/ এআর/ ঘ.)