logo ২৮ এপ্রিল ২০২৫
ভেঙে পড়েছে বিএনপির পররাষ্ট্র উইং
মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস
২৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৪:৫৮:১৮
image

ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে নানামুখী চাপে রয়েছে বিএনপি। পাঁচ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে চলমান টানা আন্দোলনে রীতিমতো ভেঙ্গে পড়েছে দলটির পররাষ্ট্র উইংও। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র উইংটি রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। দৃশ্যত বিদেশ নির্ভর এই দলটির পররাষ্ট্রবিষয়ক চার চারজন উপদেষ্টা বেশ কিছু দিন ধরে দৃশ্যপটে না থাকায় দলটির এখন লেজেগোবরে অবস্থা।


শুধু তাই নয়, নানা ইস্যুতে দলের মধ্যে অবিশ্বাসের জায়গাটাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। সার্বিকভাবে বলা যায় তিন তিন বার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই দলটি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে  চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র উইং ভেঙ্গে পড়ায় ভারত সফর শেষে কী বার্তা দিয়ে গেলেন বারাক ওবামা তাও আড়ালেই থেকে গেল।


৯ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পররাষ্ট্র উইংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শমসের মবিন চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে, শমসের মবিন বিএনপির পররাষ্ট্র উইংয়ের মূল চালিকাশক্তি। তিনিই এখন কারাগারে। কবে মুক্তি পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। 


দলটির পররাষ্ট্র উইংয়ের আরেক প্রভাবশালী সদস্য রিয়াজ রহমান। তিনি সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৩ জানুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। এখনও তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


এর আগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেগম জিয়ার আরেক পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসভবনে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে।


এসব কারণেই বেগম জিয়ার বৈদেশিক যোগাযোগ রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।


সার্বিক বিষয় প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ‘বিএনপি একটি বড় দল। এখানে কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কিছু হয় না। এক জন অনুপস্থিত থাকলে তার কাজ অন্যরা করতে পারে। সুতরং পররাষ্ট্র উইং ভেঙে পড়েছে এমনটা বলা যাবে না।’ তবে তিনি পররাষ্ট্র উইংয়ের দায়িত্বে থাকা নেতাদের গ্রেপ্তার ও তাদের উপর হামলার ঘটনাকে সরকারের ঘৃণ্য চক্রান্ত বলেই উল্লেখ করেছেন। 


তিনি বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছেন। যতক্ষণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে না নেওয়া হবে, ততক্ষণ শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলবে।


এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের নামে গণমাধ্যমে ভুয়া বিবৃতি পাঠানো দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি। তারা হলেন বিএনপির বৈদেশিক দূত ও বিশেষ উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জাহিদ এফ সর্দার সাদী ও ডা. মজিবর রহমান মজুমদার। এ ঘটনাও বিএনপির পররাষ্ট্র উইংয়ের বিপর্যস্ত অবস্থাকেই তুলে ধরে।


যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত জাহিদ ও মজিবরকে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর বিএনপির বৈদেশিক দূত ও বিশেষ উপদেষ্টা করা হয়েছিল।


অন্যদিকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ চেয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি নিয়ে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের।


এরই মধ্যে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে নিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহর ফোন ও ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের নামে জাল বিবৃতি নিয়েও আন্দোলনে থাকা দলটির নেতা-কর্মীরা ‘মহাবিব্রত’ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন। একই সঙ্গে কূটনীতি নিয়ে কাজ করা চার নেতা নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনায়ও বিএনপিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেছে।


এ অবস্থায় দল ও ২০-দলীয় জোটকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে ‘সফল’ হওয়াই বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দল ও জোট ভাঙার আশঙ্কা তো রয়েছেই। তাই নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি জোট ‘বাঁচা-মরার লড়াই’ হিসেবে নিয়েছে।


সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভাতর সফর করে গেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও সেদিকে নজর ছিল। বিশেষ করে বিএনপি নেতারা আশায় ছিলেন- ওবামা ও মোদি সরকারের মধ্যে বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।এতে চলমান অচলাবস্থার অবসান হতে পারে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষা করার মতো নেতা দৃশ্যপটে ছিলেন না। ওবামার ভারত সফর থেকে বিএনপি কোনো আশার আলো দেখছে কি না তা আপাতত পর্দার আড়ালেই থাকলো। 


(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এমএম/এআর)