ঢাকা: বছরের পর বছর ধরে দেশে লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটছে। আর এতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।অনেক সময়ই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহিৃত করা যায় না বা হয় না।
আবার অনেক সময় দায়ী ব্যক্তিদের চিহিৃত করা সম্ভব হলেও তাদের শাস্তি দেয়া যায় না। রীতিমতো কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলেই দৃশ্যত মনে করা হচ্ছে।
আবার অনেকে বলছে ওদের হাত অনেক লম্বা তাই তাদের ধারে কাছেও যেতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে মানুষের ক্ষোভ সামাল দেয়ার জন্য দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের সাসপেণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে সাসপেন্ড হওয়ার কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদেরকে আবার আগের জায়গায় বাসানো হচ্ছে। এ ভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত সঠিক তদারকির অভাব, টাকার বিনিময়ে ফিটনেসবিহীন লঞ্চে ফিটনেস সনদ দেয়া, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, দক্ষ চালকের অভাবের কারণেই লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটছে।এর সাথে জড়িতদের তাৎক্ষনিক শাস্তি দিয়ে পরিস্থিতি ঠান্ডা করা হয়।
এ ব্যাপারে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষে (বিআইডব্লিউটিএ’র) লোকবলের অভাব রয়েছে। লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহিৃত করে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে লোকবল সঙ্কটের কারনে আবার তাদেরকেই পুনর্বহাল করার কথা স্বীকার করেন তিনি।
মাত্র পাঁচ মাস আগে মুন্সীগঞ্জের পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় দায়ী সার্ভেয়ারকে চিহিৃত করার পর প্রথমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পারে আবার লোকবল সঙ্কটের কারণ দেখিয়ে তাকে আবার পুনর্বহাল করা হয়।
গতকাল রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আবারও প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ডুবলো ‘এম ভি মোস্তফা’। ফলে পিনাক-৬ দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি না দিতে পারার ব্যার্থতায় রবিবার ‘এম ভি মোস্তফা’ ডুবলো।
জানা যায়, পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি পাঁচমাস আগে প্রতিবেদন দিলেও তাদের কোনো সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে আখেরে শাস্তিও হয়নি কারো।
পিনাক-৬ লঞ্চডুবির জন্য দায়ী হিসাবে চিহিৃত বিআইডব্লিউটিএ’র মাওয়া নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর ভুঁইয়াকে সাসপেন্ড করা হলেও তিনি এখন টঙ্গী নদীবন্দরে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার মীর্জা সাইফুর রহমানের বরখাস্ত আদেশও তুলে নেয়া হয়।
এ বিষয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার এ কে এম ফখরুল ইসলাম বলেন, সাইফুর রহমান চার মাস সাসপেনশনে (সাময়িক বরখাস্ত) ছিলেন। এরপর তার বিরুদ্ধে সাসপেনশন আদেশ তুলে নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাদের মাত্র ৪ জন সার্ভেয়ারের মধ্যে দুইজনই যদি না থাকে তাহলে তো কার্যক্রম চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই পিনাক-৬ দুর্ঘটনায় দায়ীদের বরখাস্ত করে সে আদেশ আবার তুলে নিতে হয়েছে। তবে ডিপার্টমেন্ট তাদের বরখাস্ত কিংবা যে কোন শাস্তি দিতে পারে।
লোকবল কম হওয়ায় দায়ীদের পদে বহাল রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা লোকবল নেয়ার জন্য সবধরণের চেষ্টা করছি। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-এমপিদের মতামতের একটি ব্যাপার আছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামছুদ্দোহা খন্দকার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,‘এমভি মোস্তফা’ ডুবির ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পিনাক-৬ এর তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে দোষী চিহ্নিত করে সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পরিদর্শক জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করার পরও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন কিনা জানতে চাইলে শামসুদ্দোহা বলেন, তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু কোন পদে বহাল আছেন কিনা আমার জানা নাই।
(ঢাকাটাইমস/২৪ ফেব্রুয়ারি/ইরা/এআর/ ঘ.)